ভারতকে বুঝতে ব্যর্থ মোদি: অমর্ত্য সেন
প্রকাশিত : ০৯:৩৫, ৮ অক্টোবর ২০১৯
ভারতে গণতন্ত্রের হাল নিয়ে উদ্বিগ্ন অমর্ত্য সেন। মার্কিন একটি পত্রিকাকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে খোলাখুলি জানালেন সে-কথা। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ সরাসরি নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।
তার কথায়, ‘‘জন স্টুয়ার্ট মিলের কাছ থেকে বড় যে বিষয়টি আমরা জেনেছি তা হল, গণতন্ত্র মানে আলোচনার ভিত্তিতে চলা সরকার। ভোট যেভাবেই হোক, আলোচনাকে ভয়ের বস্তু করে তুললে তুমি গণতন্ত্র পাবে না।’’
সঙ্গে তার আক্ষেপ, ভারতে এখন একদল কট্টর হিন্দুত্বের দাপট। প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে তার মূল্যায়ন, ‘‘বহু ধর্ম ও বহু জাতির দেশ ভারতকে বোঝার মতো মনের প্রসারই নেই মোদির।’’
অমর্ত্যের মতে, মোদির বড় সাফল্য হলো গোধরা মামলা থেকে নিজেকে মুক্ত করা। এর ফলে ২০০২-এর যে-ঘটনায় হাজারের বেশি মানুষ খুন হয়েছিলেন, তার পিছনে মোদির একটা ভূমিকা ছিল কিন্তু ভারতে অনেকে তা বিশ্বাসই করেন না।
গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভটির প্রসঙ্গে অমর্ত্যের মত, সরকার যদি বিরুদ্ধে থাকে, তবে সরকারি শুধু নয়, সম্ভবত অনেক বেসরকারি বিজ্ঞাপনও পায় না সংবাদমাধ্যম। ফলে স্বাধীন সংবাদপত্র বা সংবাদ চ্যানেল পাওয়াই দুষ্কর।
স্টুয়ার্ট মিলের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘মানুষ ভয়ে আছেন। এটা আগে কখনও দেখিনি। আমার সঙ্গে ফোনেও সরকারের সমালোচনার প্রসঙ্গ উঠলে অনেকে বলছেন, ‘‘থাক, দেখা হলে বলা যাবে। আমি নিশ্চিত ওরা আমাদের কথা শুনছে।’’ এটা গণতন্ত্রের পন্থা নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কী চান, সেটা বোঝারও পথ নয় এটা।’’
তবু পুরোপুরি হতাশ নন অমর্ত্য। বলেন, ‘‘সব কিছুই হারিয়ে যায়নি। এখনও সাহসি কয়েকটি সংবাদপত্র আছে, যারা ঝুঁকি নিয়ে কিছু ছাপতে ভয় পায় না। দু’-একটা টিভি চ্যানেল ও রেডিয়ো স্টেশনও আছে। প্রকাশ্য সভাও হচ্ছে কিছু। ভারতের কাঠামো যুক্তরাষ্ট্রীয়। বেশ ক’টি রাজ্যে বিজেপিই একমাত্র প্রভাবশালী শক্তি নয়।’’
অমর্ত্য বলেন, এ সসময় খুব মনে পড়ছে ছোটবেলার অনেক স্মতি। ছেলেবেলাতেও খুব খারাপ সময় দেখেছি। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা দেখেছি। মুসলিম জনমজুরকে কুপিয়ে খুন করেছে আমারই পাড়ার কিছু হিন্দু। আমি তখন দশ কি এগারো বছরের কিশোর।
আবার অনেক বড় বড় সমস্যা মিটে যেতেও দেখেছি। তবে তার অর্থ এই নয় যে আমি নিশ্চিত। কোনো কিছু সম্পর্কেই আমি নিশ্চিত নই। এর অর্থ এটাও নয় যে, হতাশার পরিস্থিতিতে সব আশা ছেড়ে দিতে হবে। তাই, আশা ছাড়ছেন না অমর্ত্য সেন।
সূত্রঃ আনন্দবাজার
আই/
আরও পড়ুন