যে কৃতিত্বে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রীর নোবেল জয়
প্রকাশিত : ২০:৩৫, ১২ অক্টোবর ২০১৯
আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। এ সময়ে দুনিয়া জুড়ে বেশ আলোচিত নাম আবি আহমেদ। যিনি ২০১৯ সালে শান্তিতে নোবেল প্রাপ্তির জন্য ঘোষিত হয়েছেন। ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার সংঘাত নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কার জেতেন ৪৩ বছর বয়সী আবি আহমেদ।
নোবেল শান্তি পুরস্কারের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এ বছর নোবেল পুরস্কারের জন্য ৩০১টি মনোনয়ন জমা পড়ে। যার মধ্যে ২২৩ জন ব্যক্তি এবং বাকি ৭৮টি প্রতিষ্ঠান। তবে ৫০ বছর ধরে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করার আগে মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করে না নোবেল প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ। সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছিল।
শত্রুতা মুছে দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সহবস্থানের স্বীকৃতি। ২০১৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে সম্মানিত করা হল আবি আহমেদকে। প্রতিবেশী ইরিত্রিয়ার সঙ্গে শান্তি স্থাপনের অবিরাম প্রচেষ্টার জন্যই রয়াল সুইডিশ সোসাইটির বিচারে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য চূড়ান্ত হয়েছে তাঁর নাম। ইরিত্রিয়ার সঙ্গে দুই দশকের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকার স্বীকৃতি।
গরিব কৃষকের সন্তান, গোয়েন্দা কর্মকর্তা থেকে আফ্রিকার দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির সংস্কারের নেপথ্য নায়কে পরিণত হয়েছেন আবি। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কয়েক দশকের ঘা-কে তিনি সেরে তুলেছেন। তাকে দেশটির এক অবিশ্বাস্য নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
ফেডারেল ডেমক্রেটিক রিপাবলিক অব ইথিওপিয়ার সাবেক সেনা গোয়েন্দা কর্মকর্তা আবি আহমেদ ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল দেশটির চতুর্থ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। ১৯৭৬ সালের ১৫ অগাস্ট ইথিওপিয়ার ঐতিহাসিক কাফা প্রদেশের (বর্তমান নাম ওরোমিয়া রিজন) বেশাশা শহরে জন্মগ্রহণ করেন আবি। তার বাবা আহমেদ আলি ছিলেন মুসলমান ওরোমো সম্প্রদায়ের লোক। আর তার চার স্ত্রীর মধ্যে আবির মা তেজেটা উল্ডে ছিলেন খ্রিস্টান আমহারা সম্প্রদায়ের।
মাধ্যমিক শেষ করে ইথিওপিয়া ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সে যোগ দেন আবি। আদ্দিস আবাবা ইউনিভার্সিটি থেকে ২০১৭ সালে তিনি ফিলসোফিতে পিএইচডি করেন। ডিফেন্স ফোর্সের সহকর্মী আমহারা সম্প্রদায়ের জিনাস তায়াচিউকে বিয়ে করেন আবি। এ দম্পতির তিন মেয়ে ও একটি পালক পুত্র রয়েছে।
২০১০ সালে ওরোমো ডেমক্রেটিক পার্টি (ওডিপি) থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন আবি। ওই সময়ে তার জন্মস্থান ‘জিম্মা জোনে’ মুসলমান ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের দাঙ্গায় ঠেকাতে সে সময় পার্লামেন্ট সদস্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন আবি। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ওই অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। এজন্য তিনি ‘রিলিজিয়াস ফোরাম ফর পিস’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৫ সালে ওডিপির এজন্য নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন আবি। ওই বছরই তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ওরোমি অঞ্চল, বিশেষ করে আদ্দিস আবাবার চারপাশে অবৈধভাবে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকায় চলে আসেন আবি। আন্দোলনের মুখে জমি অধিগ্রহণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
টানা তিন বছরের আন্দোলন এবং বিক্ষোভের মুখে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ইথিওপিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হিলেমারিয়াম দেসালেং পদত্যাগে বাধ্য হন। একই বছরের ১ মার্চ ইপিআরপিএফ এর নির্বাহী কমিটির সদস্যদের ভোটে আবি জোট প্রধান নির্বাচিত হন এবং পরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
ক্ষমতা নেওয়ার পর রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে ইথিওপিয়ার জনগণের মধ্যে ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়া সীমান্তে যুদ্ধের অবসানে আলোচনায় বসার প্রতিশ্রুতি দেন আবি। ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল অবধি ইথিওপিয়া এবং ইরিত্রিয়ার মধ্যে বজায় ছিল দীর্ঘদিনের শত্রুতার সম্পর্ক। বছরের পর বছর ধরে চলা এই সম্পর্ককে ২০১৮ সালে পুনরুদ্ধার করেন আবি আহমেদ।
জানা যায়, পুরস্কার বাবদ একটি সোনার মেডেল ও ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (১২ লাখ ৫০ হাজার ডলার) পাবেন আবি আহমেদ। আগামী ১০ ডিসেম্বর অসলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার দেওয়া হবে। পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার চেষ্টায় গত বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পায় ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার উইপনস- আইসিএএন।
স্যর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুদিনে (১০ ডিসেম্বর) নরওয়ের ওসলোতে নয় মিলিয়ন সুইডিশ ডলার মূল্যের এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৮৯৫ সালে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। পাঁচ সদস্যর নরওয়ের নোবেল ইনস্টিটিউটের চেয়ারপার্সন বেরিট রেয়-আন্ডারসন বলেন, ‘আবে আহমেদের নাম নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ঘোষণা করার কারণ তিনি বহুবছর ধরে প্রতিবেশি রাষ্ট্র ইরিত্রিয়ার সঙ্গে শত্রুতার সম্পর্ককে বর্তমানে একটি সুস্থ সম্পর্কে পরিণত করতে সফল হয়েছেন। এমনকি ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর ইরিত্রিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ‘শান্তি এবং বন্ধুত্বপূর্ণ।’ সহবস্থানের একটি চুক্তিপত্রও স্বাক্ষর করেন।
এমএস/আরকে
আরও পড়ুন