ঢাকা, শনিবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

নোবেল বিজয়ী অভিজিৎ-এর অজানা কথা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:২১, ১৪ অক্টোবর ২০১৯ | আপডেট: ২৩:২৬, ১৪ অক্টোবর ২০১৯

অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অভিজিৎ

অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অভিজিৎ

Ekushey Television Ltd.

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে প্রবাসী। বর্তমানে মার্কিন মুলুকের স্থায়ী বাসিন্দা। তাতে কী! কলকাতার সঙ্গেই যে তার নাড়ির টান। তাইতো এ বছর অর্থনীতিতে যৌথভাবে নোবেল পাওয়া সেই অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগটা এখনও অটুট।

বাবা দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন প্রেসিডেন্সির অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ও অধ্যাপক। আর তার মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছিলেন সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস, কলকাতা এর অর্থনীতি বিভাগের একজন অধ্যাপক। আশির দশকে বাবার কলেজেই অর্থনীতির ছাত্র ছিলেন অভিজিৎ। ওই কলেজেরই আরেক কৃতি অমর্ত্য সেনও যে এই অর্থনীতিতেই নোবেল পেয়েছিলেন ১৯৯৮ সালে। অভিজিৎ হচ্ছেন দ্বিতীয় বাঙালি, যিনি অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন। 

ঘটনাচক্রে এবারের অর্থনীতির নোবেল যে দু’জনের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন অভিজিৎ, তাদের এক জন তার স্ত্রী এস্থার ডাফলো। যিনি অর্থনীতিতে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নোবেল প্রাপক। বিশ্বের দ্বিতীয় মহিলা হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন তিনি। 

আর অন্যজন হলেন মাইকেল ক্রেমার। হার্ভার্ডের অর্থনীতি বিভাগে গেটস প্রফেসর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি আমেরিকান একাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের ফেলো। ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের ইয়াং গ্লোবাল লিডারও মনোনীত হয়েছিলেন তিনি।

সোমবার নোবেল কমিটি অভিজিৎদের গবেষণা সম্পর্কে দু’এক কথা বলতে গিয়ে জানায়, দারিদ্র দূরীকরণ নিয়ে গবেষণার জন্যেই পুরস্কার দেয়া হল এই ত্রয়ীকে। মাত্র দু’দশকে ওঁদের গবেষণা পদ্ধতি উন্নয়ন অর্থনীতির রূপরেখা বদলে দিয়েছে। 

আর অভিজিৎ জানান, ‘নব্বইয়ের দশকের শেষে আমার স্ত্রী এস্থার ডাফলো আমার সঙ্গে কাজে যোগ দেয়। গত পঁচিশ বছরে বহু দেশ ঘুরে আমরা গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করেছি। ঘানা, চিলি, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত— সর্বত্র ঘুরে ঘুরে কাজ করেছি।’

অভিজিতের বেড়ে ওঠার অংশটা কলকাতায় হলেও তার জন্ম হয়েছিল মুম্বাইয়ে। ১৯৬১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। কয়েক বছর পর কলকাতায় চলে আসে তার পরিবার। অভিজিতের স্কুল জীবন কেটেছে সাউথ পয়েন্টে। তারপর বিটি রোডের ধারে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট-এ রাশিবিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হন। কিন্তু বাড়ি থেকে দূরত্বটা বেশি হওয়ায় ভর্তি হন প্রেসিডেন্সিতে। এবার অর্থনীতিতে। ১৯৮১ সালে সেখান থেকেই অর্থনীতিতে স্নাতক করেন অভিজিৎ। ওই বছরই স্নাতকোত্তর পড়তে চলে যান দিল্লিতে— জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর সেখান থেকে ১৯৮৮ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডিতে করার জন্য হার্ভার্ডে ভর্তি হন। অর্থনীতিতে পিএইচডি নিতে তার গবেষণার বিষয় ছিলো "এসেস ইন ইনফরমেশন ইকোনমিকস"। 

এরপর আর পিছনে ফিতে তাকাতে হয়নি অভিজিৎকে। নিজের পছন্দের এবং অনুসন্ধিৎসার বিষয় নিয়েই গবেষণা করেছেন। ঘুরে বেড়িয়েছেন তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।

অভিজিৎ প্রথমে এমআইটির সাহিত্য বিভাগের প্রভাষক ড. অরুন্ধতী তুলি ব্যানার্জিকে বিয়ে করেন। উভয়েই একসাথে কলকাতাতেই বেড়ে ওঠেন। তবে খুব বেশিদিন টেকেনি তাদের সংসার। কয়েক বছরের মধ্যে অভিজিৎ ও অরুন্ধতীর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। কবির ব্যানার্জি নামে তাদের এক পুত্র সন্তান ছিলো, যিনি ২০১৬ সালে মারা যান।

এদিকে অরুন্ধতীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর ফরাসি অর্থনীতিবিদ এস্থার ডাফলোর সঙ্গে বিবাহপূর্ব দীর্ঘ ১৮ মাস একত্রে বসবাস করেন অভিজিৎ। ২০১২ সালে জন্ম নেয় এ যুগলের প্রথম সন্তান। ১৯৯৯ সালে এস্থার এমআইটিতে অর্থনীতিতে পিএইচডি করার সময় অভিজিৎ তার যুগ্ম-তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। এস্থারও এমআইটির পোভার্টি অ্যালিভিয়েশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস বিভাগের একজন অধ্যাপক। অভিজিৎ ও এস্থার আনুষ্ঠানিকভাবে একে-অপরকে ২০১৫ সালে বিয়ে করেন।

অভিজিৎ বর্তমানে ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি'র অধীনে ফোর্ড ফাউন্ডেশন এর অর্থনীতি বিভাগে আন্তর্জাতিক অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তার কাজের মূল লক্ষ্য হলো অর্থনীতিতে উন্নয়ন।  তিনি ২০০৪ সালে আমেরিকান একাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস-এর ফেলো নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৯ সালে অর্থনীতির সামাজিক বিজ্ঞান ক্যাটাগরিতে ইনফোসিস পুরস্কার লাভ করেন। 

২০১২ সালে পুওর ইকোনমিকস বইয়ের জন্য এস্থার ডাফলো ও অভিজিৎ যৌথভাবে জেরাল্ড লুয়েব অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ২০১৩ সালে তৎকালীন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন কর্তৃক সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বিশেষজ্ঞ প্যানেলে কাজের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরের বছর কিইল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি থেকে বার্নহার্ড-হামস-পুরস্কার পান। 

জাতিসংঘের ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন মূলক কর্মসূচিতে তিনি ছিলেন মহাসচিবের অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা। এসময়ে গবেষণাপত্র, বিভিন্ন জার্নালে লেখার পাশাপাশি অভিজিৎ লিখে গেছেন একের পর এক বই। তার মধ্যে অর্থনীতি বিষয়ে অভিজিতের লেখা চারটি বই বিশ্বজুড়ে বিপুল ভাবে সমাদৃত। তার ‘পুওর ইকোনমিক্স’ বইটি তো গোল্ডম্যান স্যাক্স বিজনেস বুক সম্মানে ভূষিতও হয়। একইসঙ্গে দু’টি তথ্যচিত্রও তৈরি করেন অভিজিৎ।

সুযোগ পেলেই কথা সমসাময়িক অর্থনীতি, ভারতের অর্থনীতি নিয়েই কথা বলেন অভিজিৎ। আসলে অভিজিতের মূল পথচলাটাই তো অর্থনীতির রাস্তায়। নিজের দেশ যখন ‘নোটবন্দি’ বা ‘জিএসটি’-র মতো বিষয়ে তোলপাড়, অভিজিৎ তখন সে সবের কঠোর সমালোচনা করেছেন, কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করেই। কারণ, ভারতের অর্থনীতি থেকে তার নজর কখনও সরেনি। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক অধ্যাপক হিসেবে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে-তে কর্মরত অভিজিৎ তো আসলে আম জনতার সমস্যার কথাই ভেবেছেন। ভেবেছেন দারিদ্রের কারণ নিয়েই!

আর বৈশ্বিক দারিদ্র্যতা দূরীকরণে ভূমিকা রাখায় এস্থার ডাফলো এবং মাইকেল ক্রেমার এর সঙ্গে অর্থনীতিতে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হন অভিজিৎ।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি