ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

অভিজিৎ দম্পতির গবেষণা ছিল ব্র্যাকের মডেল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২৫, ১৬ অক্টোবর ২০১৯

দারিদ্র্য দূরীকরণে অবদানের জন্য এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী এমআইটির অধ্যাপক দম্পতি অভিজিৎ ব্যানার্জি ও এস্তার ডুফলো বিশ্বের শীর্ষ বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের দারিদ্র্য বিমোচনের একটি মডেল নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। 

২০০৭ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ব্র্যাকের আলট্রা-পুওর গ্র্যাজুয়েশন বা অতিদারিদ্র্য থেকে উত্তরণের মডেল নিয়ে নিবিড়ভাবে গবেষণা করেছিলেন তারা। 

এ গবেষণার ফল প্রকাশ হওয়ার পরপরই বিশ্বজুড়ে ব্র্যাকের অতিদারিদ্র্য বিমোচনের মডেল নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। বর্তমানে বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশে দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্র্যাকের এই মডেল বিভিন্নভাবে ব্যবহার হচ্ছে।

২০১৫ সালে অধ্যাপক অভিজিৎ ব্যানার্জি ও এস্তার ডুফলোর গবেষণার ওপর একটি প্রবন্ধ ছাপা হয় বিখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টে। 

এতে বলা হয়, দরিদ্ররা যে দরিদ্র, তার কারণ শুধু এই নয় যে তাদের অর্থ নেই। আরও নানাবিধ অভাবের কারণে তারা দরিদ্র। যেমন- অনেক মৌলিক বিষয়ে সম্যক জ্ঞান, আর্থসামাজিক সুযোগ-সুবিধা এবং নিজেদের সক্ষমতার ওপর আস্থার অভাব।

দারিদ্র্য বিমোচনে যত কর্মসূচি দুনিয়ায় আছে তাতে দেখা গেছে, কেবল অল্প কিছু এলাকার অল্প কিছু মানুষ অল্প কিছু সময়ের জন্যই উপকৃত হয়। মূল সমস্যাটা হলো, এসব কর্মসূচিতে যারা অংশগ্রহণ করে, শুরুতে তাদের অনেকেই দারিদ্র্যসীমার উপরে উঠে আসে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে সেই অবস্থা তারা ধরে রাখতে পারে না। বেশিরভাগই কিছুদিন পরে আবার আগের অবস্থায় ফেরত যায়। যেমন ধরা যাক ক্ষুদ্রঋণের কথা। এ ধরনের ঋণ নিয়ে শুধু তারাই উন্নতি করতে পারে, যারা ব্যক্তি হিসেবে উদ্যোগী প্রকৃতির। 

অতিদরিদ্রদের মধ্যে আবার এ ধরনের উদ্যোগী মানুষের সংখ্যা খুব একটা বেশি না। একইভাবে শিক্ষার বিনিময়ে অর্থ বা এ ধরনের প্রকল্পের সাফল্যের জন্য প্রয়োজন কার্যকর শিক্ষা ব্যবস্থা। এক দেশে যেটা কাজ করেছে, অন্য দেশে তা করেনি। এর মূল কারণ সংস্কৃতি ও পারিপার্শ্বিকতায় ভিন্নতা। এবং অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সবচেয়ে দরিদ্র যারা, তাদের অবস্থায় পরিবর্তন আনাটাই সবচেয়ে কঠিন।

এ বাস্তবতায় অধ্যাপক ব্যানার্জি ও অধ্যাপক ডুফলো দারিদ্র্য দূরীকরণের এমন একটি কৌশল বের করেছেন, যা সব জায়গায়, সব ধরনের মানুষের জন্য কাজ করবে। তাদের গবেষণাটি করা হয় সাত বছর ধরে, বিশ্বের ছয়টি দেশের প্রায় ১০ হাজার দরিদ্র পরিবারের ওপর। এ কৌশলের অংশ হিসেবে ওই পরিবারগুলোকে প্রথমে কিছু সম্পদ (মূলত গরু-ছাগল বা হাঁস-মুরগি) হস্তান্তর করা হয়। 

এরপর তাদের দেওয়া হয় কিছু নগদ অর্থ সহায়তা। সবশেষে দুই বছর ধরে তাদের নানা রকম প্রশিক্ষণ ও উৎসাহ দেওয়া হয়, যাতে তারা সেই সম্পদগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে। ঘানা, পাকিস্তান ও পেরুর মতো কয়েকটি দেশে দেখা গেছে যে এই ফর্মুলায় একেবারে হতদরিদ্র মানুষের জীবনে একটা দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

অতিদারিদ্র্য দূর করার এ কৌশলটির মূল প্রবক্তা বাংলাদেশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। সংস্থাটি এর নাম দিয়েছে 'গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম'। ব্র্যাকের গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রামেও দরিদ্রদের হাঁস-মুরগি দেওয়া হয়েছে। তবে সঙ্গে দেওয়া হয়েছে কিছু নগদ অর্থ সাহায্য, যাতে তাদের প্রথমেই সেই হাঁস-মুরগি খেয়ে ফেলার প্রয়োজন না হয়। পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে হাঁস-মুরগি পালনের ওপর প্রশিক্ষণও। এ বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ব্র্যাকের মাঠকর্মীরা বারবার তাদের বাড়িতে গেছেন, নিয়মিত তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে চেষ্টা করেছেন। 

এমআইটির গবেষক ব্যানার্জি, ডুফলো এবং তাদের সহযোগীরা স্থানীয় এনজিওগুলোর সাহায্যে এ মডেল নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন ইথিওপিয়া, ঘানা, হন্ডুরাস, ভারত, পাকিস্তান ও পেরুতে। সব জায়গাতেই অতিদরিদ্রদের এই কর্মসূচির আওতায় আনা হয়। ভারতে যে পরিবারগুলো এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে, তাদের ৭৩ শতাংশ ছিল অতিদরিদ্র। ইথিওপিয়ায় ছিল ৬৬ শতাংশ। তাদের সবার দৈনিক আয় ছিল ১ দশমিক ২৫ ডলারের কম।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি