ভারতের ঝাড়খণ্ড যেমন
প্রকাশিত : ১১:০৬, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৩:০৬, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯
ভারতের ২৯টি রাজ্যের মধ্যে একটি হলো ঝাড়খণ্ড। পূর্ব ভারতের রাজ্যটির রাজধানীর নাম রাঁচি। বিহারের দক্ষিণাংশ থেকে আলাদা হয়ে ২০০০ সালের ১৫ নভেম্বর গঠিত হওয়া রাজ্যটি নানা খনিজ সম্পদে পূর্ণ ৷
ঝাড়খণ্ডের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে বিখ্যাত কয়েকটি হল হলুদপুকুর, রাজমহল, নেতারহাট, হাজারীবাগ, মন্দারগিরি ইত্যাদি৷
ঐতিহাসিকদের মতে, মগধ সাম্রাজ্যের আগেও ঝাড়খণ্ড নামে একটি স্বতন্ত্র ভূ-রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক স্থান ছিল। গৌতম কুমার বেরার বইয়ে হিন্দু মহাকাব্য ভবিশ্য পুরাণের উল্লেখ আছে। আদিবাসী শাসকগণ, যাদের মধ্যে কেউ কেউ আজ পর্যন্ত উল্লেখিত হয় মুন্ডা রাজা উপাধিতে, তারা মূলত বড় খামারভূমিগুলোর মালিকানার অধিকারী ছিল। প্রায় ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহাজনপদের যুগে, ঝাড়খণ্ড রাজ্য মগধ, অঙ্গ, বঙ্গ, কালিঙ্গ, কাশী এবং বাজ্জি’র অংশ ছিল।
১৭৬৫ সালে এই অঞ্চলটি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে আসে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক ঝাড়খণ্ড অঞ্চলে নিপীড়ন ও উপনিবেশীকরণ স্থানীয় জনগণের মধ্যে স্বতঃস্ফুর্ত বিরোধিতার সঞ্চার করেছিল। ১৮৫৭ সালের ভারতে সিপাহী বিদ্রোহের প্রায় ১০০ বছর আগে, ঝাড়খণ্ডের আদিবাসীরা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ধারাবাহিকতা শুরু করেছিল।
খুব শিগগিরই বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। উপজাতীয় বিদ্রোহগুলো মুন্ডা উপজাতিদের নিকটবর্তী প্রতিবেশি তামর এলাকায় পূর্ব দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮২০ সালে খোলা বিদ্রোহ শুরু হয় এবং তারা জমিদার ও ব্রিটিশ সেনাদের সঙ্গে দুই বছরের জন্য যুদ্ধ করে। এটি লাকরা কুল রিশিংস ১৮২০-১৮২১ নামে পরিচিত। তারপর ১৮৩২ সালের মহান কোল রিসিংস বা বিদ্রোহী আসেন। এটি প্রথম বড় আদিবাসী বিপ্লব যা ঝাড়খণ্ডে ব্রিটিশ প্রশাসনকে ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত করেছিল। জমিদারদের কাছ থেকে উপজাতীয় কৃষককে তাদের উত্তরাধিকারী সম্পত্তি থেকে উৎখাত করার চেষ্টা করার ফলে এটি ঘটেছিল। ১৮৫৫ সালে দুই ভাই সিধু ও কানহুর নেতৃত্বে সাঁওতাল বিদ্রোহ শুরু হয়।
তারপর ১৮৯৫ সালে বিরসা মুন্ডার বিদ্রোহ, ছড়িয়ে পড়ে এবং ১৯০০ সাল পর্যন্ত চলে। এই বিদ্রোহ মূলত খুনটি, তামর, সারওয়াদা ও বন্দগাঁও এর মুন্ডা অধ্যুষিত অঞ্চলে ছড়িয়েছিল। তার সমর্থকরা লোহারদাগার ওঁরাও, সিসাই ও ব্যারওয়ে অঞ্চল থেকে আকৃষ্ট হন।
অখণ্ড বিহার থেকে ঝাড়খণ্ড তৈরির ইতিহাসে তিনজন মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতির দায়ে জেলে গিয়েছেন। এই তালিকায় পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে জড়িত অবিভক্ত বিহারের দুই মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্র (প্রয়াত) ও লালুপ্রসাদ যাদব রয়েছেন। তেমনই রয়েছেন খনি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মধু কোড়া। এই তিনজনকেই জেলে পাঠানোর কারিগর বলে পরিচিত সরযূ রায়।
বছর দুয়েক আগে তাকালে দেখা যায় ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রের রঙ প্রায় গেরুয়াই, কেননা দেশটির বেশিরভাগ রাজ্যেই নিজেদের জয়ের পতাকা লাগাতে সক্ষম হয় বিজেপি। কিন্তু সব শুরুরই যেমন একটা শেষ থাকে, ঠিক সেভাবেই আবার ২০১৯ সালের একেবারে শেষের দিকে তাকালে দেখা যায় ক্রমশই যেন রাজ্যগুলোতে শক্তিক্ষয় হচ্ছে মোদি-অমিত শাহের দলটির (বিজেপি)। মহারাষ্ট্রের পর গতকাল সোমবার ঝাড়খণ্ড বিধানসভাও হাতছাড়া হল দলটির।
এবার ৮১ আসনের বিধানসভায় বিজেপি শেষপর্যন্ত পেয়েছে ২৫ আসন। আর ৪৬টিতে জয় পেয়েছে জেএমএম-কংগ্রেস-আরজেডি মহাজোট। অন্যান্যদের দখলে ১০টির মতো আসন।
ঝাড়খণ্ডের আয়তন ৩০ হাজার ৭৭৮ বর্গমাইল। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ৩ কোটি ২৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৩৪।
রাজ্যটিতে সাক্ষরতার হার ৬৭ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, হিন্দুধর্ম রাজ্যটির সর্বাধিক ৬৭ দশমিক ৮ শতাংশের পালিত ধর্ম। এর পর আছে ইসলাম ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং খ্রিস্টান ৪ দশমিক ৩ শতাং। অন্যান্য প্রধান ধর্ম হিসেবে সরনা ধর্ম জনসংখ্যার ১২ দশমিক ৮ শতাংশ।
ঝাড়খণ্ডে পাঁচটি বিভাগ রয়েছে- পালামৌ, উত্তর ছোটনাগপুর, দক্ষিণ ছোটনাগপুর, কোলহান এবং সাঁওতাল পরগনা। এই পাঁচটি বিভাগের আওতায় রয়েছে ২৪ টি জেলা।
এই রাজ্যে বেশকিছু সুপ্রাচীন মন্দির রয়েছে। তার মধ্যে দেওঘর জেলার বৈদ্যনাথ মন্দির, রামগড় জেলার ছিন্নমস্তা মন্দির ও রাঁচি জেলার মা দেউড়ি মন্দির প্রসিদ্ধ।
রাজ্যটির গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ১. আইআইআইটি, রাঁচি ২. ভারতীয় ব্যাবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান, রাঁচি ৩. ভারতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, ধানবাদ ৪. রাষ্ট্রীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, জামশেদপুর ৫. বিড়লা ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি, মেসরা, রাঁচি।
ঝাড়খণ্ডে বিবিধ খেলাধুলা প্রচলিত। রাঁচি শহরের জেএসসিএ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এখানে রাঁচি শহরের বিরসা মুন্ডা হকি স্টেডিয়ামে হকির প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। হকি ইন্ডিয়া লীগ-এর রাঁচি রেইস দলের ঘরের মাঠও এটি। এখানে জামশেদপুর শহরের জেআরডি টাটা স্পোর্টস কমপ্লেক্স-এ ফুটবল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। ইন্ডিয়ান সুপার লীগ-এর জামশেদপুর এফসি দলের ঘরের মাঠ এটি।
একে//
আরও পড়ুন