এক মাসে একই হাসপাতালে ১০০ শিশুর মৃত্যু
প্রকাশিত : ২৩:৩৪, ২ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ২৩:৪৪, ২ জানুয়ারি ২০২০
এক মাসে ১ হাসপাতালে অন্তত ১০০ শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ মৃত্যুর নেপথ্যে হাসপাতাল কর্মীদের অবহেলা অন্যতম কারণ এমনটি তদন্তে উঠে এসেছে। ভারতের রাজস্থানে এ ঘটনা ঘটে। খবর এনডিটিভি’র
জানা যায়, গত ডিসেম্বরের শেষ দুই দিনে ঐ হাসপাতালে অন্তত ৯ শিশুর মৃত্যু হয়। রাজস্থানের কোটা শহরের সরকারি জেকে লোন হাসপাতালে ঘটেছে এ বিপুল সংখ্যক শিশু মৃত্যুর ঘটনা। জয়পুর থেকে ২৫১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই হাসপাতালে শিশু অধিকার সুরক্ষা জাতীয় কমিশন তথা এনসিপিসিআরের একটি দল পরিদর্শণ করেছে। বিষয়টিতে সমালোচনায় মুখর হয়েছে বিরোধী দল। এনসিপিসিআর তদন্তে নেমে দেখতে পেয়েছে হাসপাতাল চত্বরে ঘুরে বেড়াচ্ছে শুকোর। হাসপাতালের দরজা-জানালা ভাঙা। পাশাপাশি সেখানে কর্মীসংখ্যাও অপ্রতুল।
এক. ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর এই হাসপাতালে ৪৮ ঘণ্টায় ১০টি শিশুর মৃত্যু হয়।
দুই. ৩০ ডিসেম্বর মারা যায় চারটি শিশু। পরের দিন ৩১ ডিসেম্বর পাঁচটি শিশুর মৃত্যু হয়। সব ক'টি ক্ষেত্রেই মৃত্যুর কারণ জন্মের সময় ওজন কম থাকা। তেমনটাই জানিয়েছেন হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ড. সুরেশ দুলারা।
তৃতীয়. এনসিপিসিআর তদন্তে নেমে দেখতে পেয়েছে হাসপাতাল চত্বরে ঘুরে বেড়াচ্ছে শুকোর। হাসপাতালের দরজা-জানলা ভাঙা। ফলে কনকনে শীতে শিশুগুলিকে প্রবলভাবে আবহাওয়ার প্রকোপে পড়তে হচ্ছে। পাশাপাশি সেখানে কর্মীসংখ্যাও অপ্রতুল বলে জানানো হয়েছে।
চতুর্থ. প্রবল সমালোচনা শুরু হওয়ার পর রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলত হিন্দিতে একটি টুইট করে জানান, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দলকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি। রাজস্থানকে ‘নিরোগী' করতে আমরা দায়বদ্ধ। সরকার শিশুদের মৃত্যু নিয়ে সংবেদনশীল। এবং এক্ষেত্রে কোনও রাজনীতি থাকা উচিত নয়।’
পঞ্চম. রাজ্যের মেডিকেল অ্যাডুকেশন সোসাইটি জেকে লোন হাসপাতালের সদ্যোজাতদের বিভাগে গলদ খুঁজে পেয়েছে। দেখা যায়, সেখানে ইনকিউবেশন ইউনিট ঠিক মতো কাজ করছে না। তাছাড়া স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় একটি ইনকিউবিটরে দু'টি শিশুকে রাখতে হচ্ছে।
ছয়. যদিও এই সপ্তাহের গোড়াতেই রাজস্থান সরকারের এক কমিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ক্লিন চিট দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল, শিশুদের সঠিক চিকিৎসাই দেওয়া হচ্ছে এখানে।
সাত. শিশুমৃত্যুর ঘটনায় রাজস্থানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রঘু শর্মা জানিয়েছেন, ‘আমরা এই ঘটনায় দুঃখিত। ক্লিনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। বহু শিশুকেই নিয়ে আসা হয় আশঙ্কাজনক অবস্থায়। বিজেপি চাইলে অডিট করে দেখতে পারে। কিন্তু আমরা সেই সমস্ত শিশুকে বাঁচাতে পেরেছি যাদের বাঁচার মতো পরিস্থিতি ছিল।’
আট. বিজেপি পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি প্যানেল গঠন করেছে। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, যিনি কোটার সাংসদ, তিনি রোববার এই বিপুল সংখ্যক শিশুমৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
নয়. বিজেপি ও মায়াবতী রাজ্যে শিশুমৃত্যুর ঘটনার সমালোচনা করার পর বিষয়টি কংগ্রেসের সভাপতি সনিয়া গান্ধির কাছেও পৌঁছেছে। রাজস্থানের কংগ্রেস সভাপতি অবিনাশ পান্ডে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বৃহস্পতিবার সনিয়া গান্ধির সঙ্গে দেখা করেন। অবিনাশ জানিয়েছেন, সনিয়া গান্ধি বিষয়টিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতিকে।
দশ. রাজস্থানে শিশুমৃত্যুর হার অনেকটাই বেশি। প্রতি ১,০০০ জনে ৩৮টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে এ রাজ্যে।
এমএস/এসি
আরও পড়ুন