বিমান দুর্ঘটনা: বেকায়দায় ইরান
প্রকাশিত : ১৫:২৭, ১০ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১৫:৩৮, ১০ জানুয়ারি ২০২০
গত শুক্রবার ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন হামলায় নিহত হন ইরানের এলিট ফোর্স হিসেবে পরিচিত বিপ্লবী গার্ড করপোরেশনের (আইআরজিসি) ‘কুদস বাহিনী’র প্রধান জেনারেল কাশেম সোলাইমানি। এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এরপর ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ওই হামলার পর ইরান দাবি করে, মার্কিন দুটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলায় অন্তত ৮০ মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ওই হামলায় তাদের সামান্য ক্ষতি হয়েছে।
এরপর গত বুধবার সকালে ইরানের রাজধানী তেহরানে ১৭৬ আরোহীসহ ইউক্রেনের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা সব যাত্রীই নিহত হয় বলে নিশ্চিত করে ইরানি গণমাধ্যম। এরপর খুজতে শুরু করা হয় বিমান দুর্ঘটনার কারণ।
বিধ্বস্ত ইউক্রেনের বিমানটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিষ্ফোরিত হয়েছে বলে দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র। বিমানে আঘাত হানার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে তারা। তবে বিমানটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত হয়নি বলে দাবি ইরানের।
এদিকে পশ্চিমা নেতারা মনে করছেন, বিমানটি ভুলবশত ইরানের মিসাইল আঘাত করায় বিধ্বস্ত হয়েছে।
কানাডা এবং ব্রিটেনের নেতারা এই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত দাবি করেন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, তিনি বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সূত্র থেকে যে তথ্য পেয়েছেন তাতে মনে হচ্ছে যাত্রীবাহী বিমানটি মিসাইলের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে বিষয়টি অনিচ্ছাকৃতভাবে হতে পারে বলে ট্রুডো উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, কানাডার মানুষের মনে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে এবং তাদের উত্তর জানা দরকার।
তবে বিষয়টি নিয়ে কাউকে দোষারোপের সময় এখনো আসেনি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ইউক্রেন এয়ারলাইন্সের সে বিমানটিতে কানাডার ৬৩জন নাগরিক ছিল, যারা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ হয়ে টরন্টো যাবার কথা ছিল।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাথে একমত পোষণ করেছেন। জনসন বলেন, ঘটনাটি নিয়ে কানাডার সাথে ব্রিটেন ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
কানাডা সফররত ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেন, ইরান ভ্রমণ না করার জন্য ব্রিটিশ নাগরিকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ওই বিমান দুর্ঘটনার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেন, বিমানটিতে আসলে কী ঘটেছিল সে বিষয়ে তার সন্দেহ রয়েছে।
মার্কিন গণমাধ্যম অনুমান করছে, যাত্রীবাহী বিমানটিকে ইরান হয়তো আমেরিকার যুদ্ধ বিমান ভেবে ভুল করতে পারে।
কারণ যে সময়টিতে যাত্রীবাহী বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে তার কিছুক্ষণ আগে ইরান মিসাইল হামলা চালিয়েছে। ফলে আমেরিকার দিক থেকে সম্ভাব্য হামলার আশংকা করেছিল ইরান।
আমেরিকার গোয়েন্দা সূত্র উদ্ধৃত করে সিবিএস টেলিভিশন নেটওয়ার্ক বলছে, সে সময় স্যাটেলাইটে দুটি মিসাইলের সংকেত পাওয়া গেছে। এরপরই বিস্ফোরণের আরেকটি সংকেত পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার উত্তেজনা প্রতিনিয়ত বাড়লেও বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বেকায়দায় ইরান। কারণ আসলেই কী মিসাইলের আঘাতে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে? নাকি বিমানের কোনো কারিগরি ত্রুটির কারণে ইঞ্জিন বিস্ফোরণ হয়েছে? নাকি সন্ত্রাসী হামলার অংশ হিসেবে বিমানের ভেতরে কোন বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে?
যদি মার্কিন বিমান ভেবে মিসাইল দিয়ে ওই বিমান বিধ্বস্ত করা হয় তাহলে অব্যশই তোপের মুখে পড়তে হবে ইরানকে। তবে তদন্ত যেহেতু শুরু হয়েছে, হয়ত আর কিছুদিন পরেই মিলবে এর আসল ঘটনা।
আরও পড়ুন