ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কেরালার মসজিদে হিন্দু বিয়ের অনন্য নজির

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:২৬, ২০ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১৬:০৯, ২০ জানুয়ারি ২০২০

ধর্মের নামে মানুষকে বিভাজিত করার অভিযোগ উঠছে ভারতে। এ নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা কম চলছে না দেশটিতে। এই সাম্প্রদায়িক অশান্তির প্রেক্ষাপটে কেরালার মসজিদে হিন্দু দম্পতির বিয়ে সৃষ্টি করল এক অনন্য নজির। গতকাল রোববার কেরালার আলাপুঝার চেরুভাল্লি মুসলিম জামাত মসজিদে হিন্দু রীতিতে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। 

হিন্দু রীতির প্রতিটি আচার মেনে অঞ্জু-শরতের বিয়ের সাক্ষী থাকতে কেরালার ওই মসজিদ চত্বরে ভিড় জমান নানা ধর্মের, নানা শ্রেণির মানুষ। আর সেই বিয়ের কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রী টুইট করলেন, 'এটাই কেরালার একতার চিত্র'।

দু'বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে অকূলপাথারে পড়েছিলেন বিন্দু। তিন সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে কোনক্রমে দিন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু মেয়ে অঞ্জুর বিয়ে দেওয়ার মতো টাকার ব্যবস্থা করে উঠতে পারছিলেন না কোনোমতেই। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন প্রতিবেশী নিজামউদ্দিন। তিনিই অঞ্জুর মা’কে মসজিদের জামাত কমিটিতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। 

কিন্তু অঞ্জুর মা দ্বিধায় ছিলেন- মসজিদ কর্তৃপক্ষ কি হিন্দু মেয়ের বিয়েতে সাহায্য করতে রাজি হবেন? মনে এই দ্বিধা নিয়েই জামাত কমিটির দ্বারস্থ হন বিন্দু। কিন্তু সেখানে মেলে অভাবনীয় সাড়া। জামাতের একজন সদস্য অঞ্জুর বিয়ের খরচের দায়িত্ব নিলেন। 

বিয়ে হবে কিন্তু প্রীতিভোজ হবে না তা কি করে হয়! তাই প্রীতিভোজের ব্যবস্থাপনার কথা জুম্মার নামাজে আসা মুসলিমদের জানানো হয় বিষয়টি। আর তাতে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে রাজি হন অনেকেই। ফলে বিয়ের পর অতিথীদেরকে ভোজের আপ্যায়নও করা হয়।

গতকাল রবিবার বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য মসজিদ চত্বরেই বানানো হয়েছিল বিয়ের প্যান্ডেল। আর এখানেই মালা বদল থেকে শুরু করে সব হিন্দু আচার-আচরণ মেনে বিয়ের অনুষ্ঠান চলে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা অবধি। তারপর চলে প্রীতিভোজ।

হিন্দু-মুসলিম মিলে হাজার খানেক আমন্ত্রিত অতিথী তৃপ্তিভরে প্রীতিভোজ শেষে আশীর্বাদ করেন নবদম্পতিকে। মসজিদ কমিটির এই সাহায্যে অভিভূত নবদম্পতিও। শুধু বিয়ের আয়োজন করা নয়, নববধূকে ১০টি স্বর্ণমুদ্রা এবং দুই লাখ টাকাও উপহার দিয়েছে মসজিদ কমিটি।

এই খবর ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে অনেকে মন্তব্য করেন। এর মধ্যে কয়েকজনের মন্তব্য- ‘এটাই হল ভারতের সংস্কৃতি | নাজিমউদ্দিন এবং মসজিদ কমিটিকে ধন্যবাদ।’

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিরোধী প্রস্তাব পাস হয়েছে কেরালা বিধানসভায়। সেই রাজ্যের সম্প্রীতির এমন নজির তুলে ধরার সুযোগ ছাড়তে চাননি মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। অঞ্জু-শরতের বিয়ের ছবি পোস্ট দিয়ে তিনি লিখেছেন 'কেরালা বরাবর ধর্মীয় সম্প্রীতির এমন নজিরই দেখিয়েছে। কেরালায় আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, ঐক্যবদ্ধই থাকব।'

সূত্র: ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি