ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গা সংকট : সু চিকে হেগে নিয়ে গেছেন যে ব্যক্তি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:১৬, ২৩ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১৩:১৬, ২৩ জানুয়ারি ২০২০

জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার অভিযোগ এনে মামলা করেছিল গাম্বিয়া। সেই মামলার শুনানিতে প্রথমবারের মতো আদালতে দাঁড়িয়ে ওই ইস্যুতে কথা বলেন মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সাং সু চি। কিন্তু সু চিকে আদালতে হাজির করার ক্ষেত্রে যে মানুষটির বিশেষ অবদান রয়েছে তাকে হয়তো অনেকেই চেনন না। তিনি আর কেউ নন, গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী আবুবকার তাম্বাদুর।

জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত আজ বৃহস্পতিবার ওই মামলায় আদেশ দিতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে অনেকের মনে কৌতুহল দেখা দিয়েছে কে এই আবুবকর তাম্বাদুর। তাই আসুন জেনে নেয়া যাক রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বের আলোচিত এই মানুষটি সম্পর্কে-

১৯৭২ সালে জন্ম নেয়া আবুবকার তাম্বাদুর গাম্বিয়ার রাজধানী বানজুলে বড় হয়ে ওঠেন। তিনি ছিলেন আঠারো ভাইবোনের মধ্যে একজন। এতো ভাই বোন থাকার পেছনে রয়েছে অন্য রহস্য। আর তা হচ্ছে তার পিতার তিনজন স্ত্রী ছিল।

তরুণ বয়সে আবুবকার খেলাধুলায় খুব ভালো ছিলেন। তিনি ফুটবল খেলতে পছন্দ করতেন। নিজের দেশের জন্য শিরোপাও এনে দিয়েছিলেন তিনি।

এ বিষয়ে আবুবকার তাম্বাদুর বলেন, ‘আমি খারাপ খেলোয়াড় ছিলাম না।’

৪৭ বছর বয়সী এই ব্যক্তি তার শৈশব জীবনকে ‘ভাগ্যবান’ বলে বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যবিত্ত পরিবার দেশে একটি প্রাইভেট স্কুল এবং ব্রিটেনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পড়াশোনার খরচ বহন করতে সমর্থ হয়েছিল।

পিতাকে অসন্তুষ্ট করার ভয়ে তিনি খেলাধুলার স্বপ্ন বাদ দিয়ে দেন এবং একাডেমিক পথে হাঁটতে শুরু করেন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই আইন নিয়ে পড়তে চাইনি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে (ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়) প্রথম যে বিষয়টি পড়ার জন্য আমাকে বলা হয়, সেটা ছিল আইনবিদ্যা।’

পড়াশোনা শেষ করে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং একজন সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে কাজ শুরু করেন। ক্রমে রাজনীতি সচেতন হয়ে উঠছিলেন তিনি। বুঝে নিচ্ছিলেন গাম্বিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এক পর্যায়ে তিনি ও তার বন্ধুরা মানবাধিকার লঙ্গনের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেন।

২০০০ সালে এপ্রিল মাসে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জাম্মেহ’র কুখ্যাত নিরাপত্তা বাহিনী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি করে, এতে ১৪জন শিক্ষার্থী, একজন সাংবাদিক এবং একজন রেডক্রস স্বেচ্ছাসেবী নিহত হন।

তাম্বাদু দেখতে পান যে, তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে এবং নির্যাতন করা হচ্ছে। কিন্তু তার পরিবার জাম্মেহর বিরোধিতা করার পরিণতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে এবং তাকে দেশের বাইরে কাজ করতে রাজি করান। এরপর তিনি আন্তর্জাতিক বিচারের ক্ষেত্রে কাজ করতে শুরু করেন।

এই স্বেচ্ছা নির্বাসন তাকে জাতিসংঘের সেই আদালতে কাজ করার সুযোগ এনে দেয়, যেটি রোয়ান্ডা গণহত্যার কুশিলবদের বিচার করার জন্য স্থাপিত হয়েছিল। রোয়ান্ডা সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অফ স্টাফ মেজর জেনারেল অগাস্টাস বিজিমুনগুর বিচারে তার ভূমিকা ছিল।

তিনি বিশ্বাস করেন, তিনি যা করছিলেন, সেটা শুধুমাত্র রোয়ান্ডার গণহত্যাকারীদের বিচারের জন্যই নয়।

তার ভাষায়- ‘এটা ছিল আফ্রিকান সব নেতাদের প্রতি একটা বার্তা। আমি এটাকে দেখি আফ্রিকায় বিচার এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করার একটি সংগ্রাম হিসাবে। এটা শুধুমাত্র রোয়ান্ডার ব্যাপার নয়।’

২০১৭ সালের শুরুতে জাম্মেহর পতনের পর তাম্বাদু গাম্বিয়ায় ফিরে আসেন এবং প্রেসিডেন্ট আদামা ব্যারোর মন্ত্রিসভায় কাজ করতে শুরু করেন।

এক অপ্রত্যাশিত সফরে কক্সবাজারে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা শিবিরে এসেছিলেন আবুবাকার তাম্বাদুর। যখন তিনি বেঁচে ফিরে আসা মানুষজনের কাহিনী শুনছিলেন, তখন মিয়ানমারের সীমান্তের অন্য পাশ থেকেও যেন তিনি গণহত্যার দুর্গন্ধ টের পাচ্ছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, আমি উপলব্ধি করছিলাম, টেলিভিশনের পর্দায় আমরা যা দেখি, পরিস্থিতি আসলে তার চেয়েও কতটা গুরুতর। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনী এবং বেসামরিক বাসিন্দারা সংগঠিত হামলা চালাচ্ছে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে, মায়ের কোল থেকে শিশুদের ছিনিয়ে নিয়ে জ্বলন্ত আগুনে ছুঁড়ে মারছে, পুরুষদের ধরে ধরে মেরে ফেলছে, মেয়েদের ধর্ষণ করছে এবং সবরকমের যৌন নির্যাতন করছে।’

মানবাধিকার সংগঠন গ্লোবাল সেন্টার ফর দি রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্টের প্রধান, সাইমন অ্যাডামস বলেন, কথিত নৃশংসতার দায়ে মিয়ানমারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করার জন্য শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিই সাহস, দক্ষতা এবং মানবতা দেখিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘অনেকে চীনাদের প্রতিশোধের ভয়ে ভীত। অন্যরা বলেছেন, এই কাজ করার জন্য এটা উপযুক্ত সময় নয়, রাজনৈতিকভাবে এটা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু আমি তার সাহস দেখে মুগ্ধ। তিনি বুঝতে পারছিলেন, এর জন্য কতটা চাপ আসতে যাচ্ছে, কিন্তু সেটা সামলাতে তিনি একটা কৌশল বেছে নিয়েছেন।’

সূত্র : বিবিসি

এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি