ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৪ নভেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারের প্রতি ৪ নির্দেশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:২৬, ২৪ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ০৯:৫৮, ২৪ জানুয়ারি ২০২০

রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও সহিংসতা বন্ধ করাসহ মিয়ানমারকে কয়েকটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা আইসিজে। একইসঙ্গে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত অতীতের হামলার সকল তথ্য প্রমাণ সংরক্ষণেরও নির্দেশ দিয়েছে দেশটিকে।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদুর করা মামলায় আইসিজে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে ওই অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেওয়া হয়েছে।

আদেশে আরও বলা হয়েছে, জাতিসংঘ কনভেনশনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দিতে হবে। মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী পুনরায় কোনো ধরনের গণহত্যা কিংবা গণহত্যার ষড়যন্ত্র করতে পারবে না। বিচারের চূড়ান্ত রায় প্রকাশিত না হওয়া পযর্ন্ত ৪ মাস পরপর মিয়ানমারকে এ বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

গণহত্যা সনদের ধারা ২ এর আওতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সব ধরনের সুরক্ষা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা মিয়ানমারকে পূরণ করতে হবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে বাস্তুচ্যুতির মতো পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে মিয়ানমারকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূল ও গণহত্যার বিপদ থেকে সুরক্ষার দাবিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) দ্বারস্থ হওয়া গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশকে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ নিপীড়ন ও বঞ্চনার অবসানের পথে একটি ছোট পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, এই আদেশ এক দিনে রোহিঙ্গাদের জীবন বদলে দেবে না। তবে এটি একটি প্রক্রিয়ার সূচনা, যার মাধ্যমে আমরা আশা করি, একদিন তারা নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে রাখাইনে ফিরে যেতে পারবেন।’

আদালতের প্রধান বিচারপতি আবদুলকোয়াই আহমেদ ইউসুফ আদেশ পড়ে শোনান। ১৭ বিচারপতি সমন্বয়ে গঠিত প্যানেলের ১৪ জন স্থায়ী বিচারপতি এবং দুজন অ্যাডহক বিচারপতি আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে এ রায়ের পর মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংসতা ও বৈষম্য অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) মানবতার মর্যাদা রক্ষায় এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে আদালত সর্বসম্মতভাবে মিয়ানমারের প্রতি যে চার দফা অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, এগুলো মেনে চলা মিয়ানমারের জন্য বাধ্যতামূলক।

অন্তর্বর্তী ৪ ব্যবস্থা :
১. গণহত্যা সনদ অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের হত্যাসহ সব ধরনের নিপীড়ন থেকে নিবৃত্ত থাকতে হবে।
২. সেনাবাহিনী বা অন্য কেউ যাতে গণহত্যা সংঘটন, ষড়যন্ত্র বা উসকানি দিতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. গণহত্যার অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত সব সাক্ষ্যপ্রমাণ রক্ষা করতে হবে।
৪. চার মাসের মধ্যে আদেশ অনুযায়ী মিয়ানমার যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, তা আদালতকে জানাতে হবে।

অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাগুলো হচ্ছে :
১. গণহত্যা সনদের বিধি ২ অনুযায়ী মিয়ানমারকে তার সীমানার মধ্যে রোহিঙ্গাদের হত্যা, জখম বা মানসিকভাবে আঘাত করা, পুরো জনগোষ্ঠী বা তার অংশবিশেষকে নিশ্চিহ্ন করা এবং তাদের জন্মদান বন্ধের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ থেকে অবশ্যই নিবৃত্ত থাকতে হবে।

২. মিয়ানমারকে অবশ্যই তার সীমানার মধ্যে সেনাবাহিনী বা অন্য কোনো অনিয়মিত সশস্ত্র ইউনিট বা তাদের সমর্থনে অন্য কেউ যাতে গণহত্যা সংঘটন, গণহত্যার ষড়যন্ত্র, প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে গণহত্যার জন্য উসকানি দেওয়া, গণহত্যার চেষ্টা করা বা গণহত্যার সহযোগী হতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. গণহত্যা সনদের বিধি ২–এর আলোকে গণহত্যার অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত সব সাক্ষ্যপ্রমাণ রক্ষা এবং তার ধ্বংস সাধনের চেষ্টা প্রতিরোধ করতে হবে।

৪. এই আদেশ জারির দিন থেকে চার মাসের মধ্যে আদালতের আদেশ অনুযায়ী মিয়ানমার যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, তা আদালতকে জানাতে হবে। এরপর থেকে আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রতি ছয় মাস পরপর এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে হবে।

এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি