করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৭০
প্রকাশিত : ০৮:৫৮, ৩০ জানুয়ারি ২০২০
চীনে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। প্রাণঘাতি এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৭০ জনে দাঁড়িয়েছে। যাদের মধ্যে ১৬২ জনই করোনার উৎপত্তিস্থল উহান শহরের নাগরিক। বাকিগুলো দেশটির অন্যান্য শহরের।
এছাড়া বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যাও। উহান শহরের ৪ হাজার ৫৮৬ জন নিয়ে গোটা দেশে ৭ হাজারেরও বেশি মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত। ক্রমাগত তা বেড়েই চলেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবারের চেয়ে গতকাল বুধবার এ রোগে আক্রান্তের হার ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া চীনের বাইরে সারাবিশ্বে আরও ৯১ জনের দেহে এ ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। ফলে সতর্ক ব্যবস্থা জোরদার করেছে দেশগুলো।
এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির প্রধান ড. মাইক রায়ান বলেছেন, ‘চ্যালেঞ্জ বড় হলেও চীন তা মোকাবেলা করার চেষ্টা করছে। আমরা এ ঘটনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে এসেছি। আমরা বিশ্বাস করি যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ এখনও দানা বাঁধতে পারে।’
আগামিকাল বৃহস্পতিবার ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী ‘জরুরি অবস্থায়’ রয়েছে কিনা তা নিয়ে চীনের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
গত ৩১ ডিসেম্বর উহানে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যাওয়ার পর চীনের সীমানা পেরিয়ে এই ভাইরাস রাজধানী বেইজিং, সাংহাই, ম্যাকাও ও হংকংয়ের বাইরে বিশ্বের ১৯টি দেশে ছড়িয়েছে।
এ পর্যন্ত চীন, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তাইওয়ানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ইসরায়েলেও এক রোগীর শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র চীনের মধ্যাঞ্চলের উহান শহর থেকে শত শত বিদেশি নাগরিককে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং নিহতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের উহান থেকে সরিয়ে নিচ্ছে।
তবে বিস্তার ঠেকাতে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ চীনগামী বিমানের ফ্লাইট বাতিল করছে। এর মধ্যে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, এয়ার এশিয়া, ক্যাথে প্যাসিফিক, এয়ার ইন্ডিয়া ও ফিনএয়ার ইতোমধ্যে চীনগামী বিমানের সংখ্যা কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে।
সম্প্রতি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে উহান শহরের এক চিকিৎসাকর্মী দাবি করেছেন ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দেশটিতে ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে। যদিও করোনা ভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৭ হাজারেরও বেশি বলে দাবি চীনা কর্তৃপক্ষের।
এছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, নেপাল, ফ্রান্স, সৌদি আরব, কানাডাসহ অন্তত ১২টি দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে।
গত ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশির মত সমস্যা দেখা দেয়।
এছাড়া চীনের ভেতরেও এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মানুষের যাতায়াত বাড়ছে। তাই বিমানবন্দরসহ রেল ও বাস স্টেশনে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
২০০২ -২০০৩ সালে চীনে সার্স (সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই সময় প্রায় ৮০০ জন মারা গিয়েছিলেন। করনো ভাইরাস নিয়েও সেরকম আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এআই/
আরও পড়ুন