করোনাভাইরাস : মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৫৯, আক্রান্ত ১২ হাজার
প্রকাশিত : ১০:২৩, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০
ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। চীনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শুক্রবার পর্যন্ত প্রাণঘাতি এ ভাইরাসে নতুন করে আরও ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ারো ২৫৯ জনে। দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের বরাত দিয়ে সিএনএন এ খবর জানিয়েছেন।
যাদের মধ্যে ২৪৯ জনই করোনার উৎপত্তিস্থল উহান শহরের নাগরিক। বাকিরা দেশটির অন্যান্য শহরের বলে জানিয়েছে হুবেই প্রদেশ স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যাও। উহানসহ চীনজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজারে দাঁড়িয়েছে। ক্রমাগত তা বেড়েই চলেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবারের চেয়ে গতকাল শুক্রবার এ রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে কয়েকগুন। ফলে সতর্ক ব্যবস্থা জোরদার করেছে বিভিন্ন দেশ।
তবে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে এক লাখ দুই হাজারের অধিক লোক এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন-এমন সন্দেহে তাদের বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
তবে মহামারি করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা নিয়ে চীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে যে হিসাব দিয়েছে প্রকৃতপক্ষে ওই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালে মৃতের কোনো রেকর্ড না রেখেই তড়িঘড়ি করে মরদেহগুলো সৎকার করার কাজ করছে চীন।
ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী চীনের উহান শহরে মরদেহ সৎকারের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা বলছেন, হাসপাতাল থেকে তাদের কাছে সৎকারের জন্য যে মরদেহগুলো পাঠানো হচ্ছে তার বেশিরভাগের কোনো রেকর্ড রাখছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, চীন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াসহ বিভিন্ন শতকের বেশি ব্যক্তির মাঝে এই ভাইরাস মিলেছে। সবচেয়ে বেশি এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে (১৪ জন)। যুক্তরাষ্ট্রে আরও একজনের মাঝে এ ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে চীনাদের জন্য।
করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ অন্যান্য দেশগুলো তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে। উহানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ইতিমধ্যে দেশের আনা হচ্ছে। তাদেরকে রাজধানীর আশকোনা হজ্ব ক্যাম্পে ১৪ দিন রাখা হবে।
এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত বৃহস্পতিবার জেনেভায় এক জরুরি বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেয় সংস্থাটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রেইসাস বলেন, ‘এই ঘোষণার মূল কারণ শুধু চীনে কী হচ্ছে তা নয় বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশে কী ঘটছে সেটাও দেখতে হবে।
অন্যদিকে, করেনাভাইরাস রোধে মাস্ক সংকটে পড়েছে চীন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় বিশ কোটি মাস্কের অর্ডার দিয়েছে দেশটি। অর্থনৈতিক সংকটে পড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চললেও এখন পর্যন্ত এর প্রতিষেধক উদ্ভাবন হয়নি। প্রতিষেধক উদ্ভাবনে নিযুক্ত এক ফরাসি গবেষক জানান, “ওষুধ হাতে পেতে আরও কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে।”
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর উহানে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যাওয়ার পর চীনের সীমানা পেরিয়ে এই ভাইরাস রাজধানী বেইজিং, সাংহাই, ম্যাকাও ও হংকংয়ের বাইরে বিশ্বের ১৯টি দেশে ছড়িয়েছে।
এ পর্যন্ত চীন, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তাইওয়ানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ইসরায়েলেও এক রোগীর শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র চীনের মধ্যাঞ্চলের উহান শহর থেকে শত শত বিদেশি নাগরিককে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং নিহতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের উহান থেকে সরিয়ে নিচ্ছে।
তবে বিস্তার ঠেকাতে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ চীনগামী বিমানের ফ্লাইট বাতিল করছে। এর মধ্যে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, এয়ার এশিয়া, ক্যাথে প্যাসিফিক, এয়ার ইন্ডিয়া ও ফিনএয়ার ইতোমধ্যে চীনগামী বিমানের সংখ্যা কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে।
গত ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশির মত সমস্যা দেখা দেয়।
এছাড়া চীনের ভেতরেও এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মানুষের যাতায়াত বাড়ছে। তাই বিমানবন্দরসহ রেল ও বাস স্টেশনে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
২০০২ -২০০৩ সালে চীনে সার্স (সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই সময় প্রায় ৮০০ জন মারা গিয়েছিলেন। করনো ভাইরাস নিয়েও সেরকম আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এআই/
আরও পড়ুন