ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

করোনা ভাইরাস: ভারতে আরও ৫ জন হাসপাতালে ভর্তি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:২৮, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে রেহাই পেতে গত ১৫ জানুয়ারি ৬শ’র বেশি ভারতীয়কে নিজ দেশে ফেরত এনে বিভিন্ন হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এর মধ্যে গত পাঁচ দিনেই তিনজনের দেহে প্রাণঘাতি এ ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এবার নতুন করে আরও ৫ জনের দেহে এ সংক্রমণের লক্ষণ পাওয়া গেছে। 

তাদের মধ্যে একজনের রক্ত পরীক্ষায় করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি। বাকি চারজনের এখনো রিপোর্ট হাতে আসেনি। তবে লক্ষণ দেখা দেয়ায় সেনাবাহিনীর বেস হাসপাতালে তাদের নিবির পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে ভারতে ১৩ জনকে এ ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আক্রান্তরা সবাই কেরালা রাজ্যের। খবর আনন্দবাজার ও এনডিটিভির।   

এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণকে কেরালা সরকার ‘রাজ্যের বিপর্যয়’ বলে ঘোষণা করেছে। এর ফলে এই সংক্রমণের মোকাবেলায় বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করতে পারবে রাজ্য প্রধান। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেরালা পুলিশও পাবে বাড়তি ক্ষমতা। সংক্রমণ ঠেকাতে গঠন করা করেছে আলাদা টাস্ক ফোর্সও। 

নতুন করে যাতে কারো দেহে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্যে ইতিমধ্যেই নজরদারি, যোগাযোগ রক্ষা এবং কাউন্সেলিং সংক্রান্ত কাজের জন্য ৪০ হাজারেরও বেশি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গ্রাউন্ড স্টাফকে একত্রিত করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে তাদের ছুটি। 

গত ডিসেম্বরের শেষ দিন চীনে প্রথম ভাইরাসটির সন্ধান মেলে। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে এই মরণব্যাধি। এতে ফিলিপাইন ও হংকংয়ের দুই নাগরিকসহ অন্তত ৪২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে।

শুধু গতকাল সোমবারই এ ভাইরাসে মারা গেছেন ৬৪ জন। চীন ছাড়াও বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশের এ রোগের সংক্রম মিলেছে। ফলে বিশ্বজুড়ে বইছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। 

ভারতের সরকারি সূত্রের খবর, সেনাবাহিনীর বেস হাসপাতালে ভতি ৫ জনের বিভিন্ন রকমের পরীক্ষার জন্য তাদের রক্তের নমুনা পাঠানো হয়েছে দিল্লির ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এমস)’-এ। একজনের রক্তপরীক্ষার ফলাফল জানা গিয়েছে। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। বাকি ৪ জনের রক্তপরীক্ষার ফলাফল এখনও জানা যায়নি।

কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজা বলেন, ‘গোটা রাজ্যের সবকটি জেলায় ২টি করে হাসপাতালে আলাদা করে বিশেষ বিভাগ তৈরি করে মোট ২৮টি জায়গায় চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গত ৩ দিনে ৮০ জনেরও বেশি মানুষ করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ওই ৩ রোগীর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসায় তাদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে এবং একটি হাসপাতালে বিশেষ বিভাগে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’

এছাড়াও গোটা রাজ্য জুড়ে ২ হাজার ২৩০ জনেরও বেশি মানুষের উপর কড়া নজর রাখছে কেরালা সরকার। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালের বিচ্ছিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন এবং বাকিদের ঘরের মধ্যেই চিকিৎসা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। চীন সফরের বিষয়ে নতুন করে সতর্কতা জারি করে নির্দেশনা দিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। 

রাজ্যের সাত জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তারদের বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্যে মুসৌরি পাঠানো হচ্ছিল। কিন্তু এখন তাদের রাজ্যেই থাকতে বলা হয়েছে। সকলকে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত যে কোনও বিষয়ে সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছ বলেও জানান রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

ওদিকে সংক্রমণ আটকাতে চীনের ১৯টি শহর বহির্বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আকাশ পথ তো আছেই, ট্রেন-বাস-ফেরিসহ গণপরিবহণের সমস্ত ব্যবস্থা বন্ধ এই সব শহরে। স্কুল-কলেজ-অফিস বন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দারা রীতিমতো ঘরবন্দি। 

এমনকি, বাজার করতে বেড়োনেতেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তার উপরে রোগীর সংখ্যা যে মাত্রায় বাড়ছে, তাদের চিকিৎসার সকল সুবিধা দেওয়াও সমস্যা হয়ে যাচ্ছে দেশটির সরকারের।

করোনা মোকাবেলায় মাত্র দশ দিনেই একটি বিশেষ হাসপাতাল তৈরি করেছে বেইজিং। দেড় হাজার শয্যাবিশিষ্ট ওই হাসপাতাল শুরু হয়ে যাবে এই সপ্তাহেই। তবে সার্জিক্যাল মাস্কসহ বেশ কিছু চিকিৎসার সরঞ্জামের সংকট শুরু হয়েছে দেশটিতে।

চীনের বাইরে প্রায় ২৫টি দেশে ছড়িয়েছে এই মরণঘাতি ভাইরাস। ভারত ছাড়াও জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, ফিলিপিন্স, ম্যাকাও, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কাম্বোডিয়া, তাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, কানাডা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইটালি, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, আমেরিকা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে মিলেছে করোনা সন্ধান। 

এআই/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি