করোনা ভাইরাস: যে বয়সের মানুষ বেশি মারা যাচ্ছে
প্রকাশিত : ১১:০৬, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১১:০৯, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০
চীন থেকে উৎপত্তি মরণব্যাধি করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০’র মতো মানুষ মারা গেছে। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
গতকাল মঙ্গলবার চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন (এনএইচসি) বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এএফপি জানায়, চীনে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে প্রথম যে ব্যক্তি মারা যান, তার বয়স হয়েছিল ষাটের বেশি। তার শারীরিক অবস্থাও ভালো ছিল না। শুধু তিনিই নন, গত ডিসেম্বরে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল পর্যন্ত মারা যাওয়া ৪২৫ জনের মধ্যে ৮০ শতাংশেরই বয়স ৬০ কিংবা তারও বেশি। একই সঙ্গে এদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ আগে থেকেই ডায়াবেটিসের মতো কোনো না কোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন।
হেলথ কমিশন জানায়, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহার ২ দশমিক ১ শতাংশ। এ হার ২০০২-০৩ সালে ছড়িয়ে পড়া সেভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোমের (সার্স) মৃত্যুহারের চেয়ে অন্তত ১০ শতাংশ কম। সার্সের সংক্রমণে বিশ্বজুড়ে ওই সময় মারা যায় প্রায় ৮০০ মানুষ। তাছাড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের শিকার ৯৭ শতাংশই হুবেই প্রদেশের। হুবেইয়ের বাইরে এ ভাইরাসে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ।
এদিকে চীনের বাইরে গতকাল পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেছেন দুজন। তাদের মধ্যে ৩৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি উহান থেকে হংকংয়ে গিয়ে মারা যান। অন্য ব্যক্তি মারা যান ফিলিপাইনে। তিনিও উহানে ভ্রমণ করেছিলেন।
এনএইচসি জানায়, চীনে আক্রান্ত ২০ হাজার ৪০০ ব্যক্তির মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৬৩২ জন সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী হলো এক মাস বয়সী এক শিশু। সব থেকে বয়স্ক ব্যক্তির বয়স ৯০ বছর।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ভাইরাসটির সংক্রমণে যারা মারা গেছেন, তাদের বয়স ৩৬ থেকে ৮৯ বছরের মধ্যে। মৃতদের মধ্যে অন্তত পাঁচজনের বয়স ষাটের নিচে। সবচেয়ে কম ৩৬ বছর বয়সে মারা যাওয়া ব্যক্তি উহানের অধিবাসী। তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন ৯ জানুয়ারি। এর দুই সপ্তাহ পরই তিনি হূদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। তবে তার আগে থেকেই কোনো রোগ ছিল কিনা, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
এছাড়া হাসপাতাল থেকে যাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে, তাদের অধিকাংশেরই বয়স তুলনামূলক কম। গত বৃহস্পতিবার ছেড়ে দেয়া হয়েছে ৩৫ বছর বয়সী শেনজেনের এক বাসিন্দাকে। এছাড়া ১০ বছর বয়সী এক শিশুকেও ছেড়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বলা হচ্ছে, যারা মারা গেছেন তাদের অনেকেরই আগে থেকে স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল। এর মধ্যে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ অন্যতম। মৃতদের মধ্যে ৮৬ বছর বয়সী একজনকে ৯ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চার বছর আগে তার কোলন ক্যান্সারের অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। এছাড়া তিনি উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসেও ভুগছিলেন। এছাড়া ৮০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ভুগছিলেন পারকিনসন’স রোগে।
ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে ঢুকে পড়েছে। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি সন্ধান মিলেছে ফিলিপাইনে (১৫০)। এরপরই থাইল্যান্ড ও হংকং।
এছাড়াও ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, ম্যাকাও, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কাম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, কানাডা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইটালি, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, আমেরিকা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে মিলেছে করোনা ভাইরাসের সন্ধান।
মরণঘাতি এ ভাইরাস ক্রমে বেড়ে চললে জাপান, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ তাদের আকাশ পথ সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয়। তাদের পর গত রোববার থেকে চীনের সঙ্গে সীমান্ত সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় ভারত, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ।
এদিকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা চলমান রয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশির মত সমস্যা দেখা দেয়।
আরও পড়ুন