দাবানলের পর ঝড় ও বন্যায় বিধ্বস্ত অস্ট্রেলিয়া
প্রকাশিত : ১০:৫২, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১১:০৪, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০
দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে বন্যা বিস্তৃত ছিল- বিবিসি
একটার পর একটা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে অস্ট্রেলিয়া। ভয়াবহ দাবনল থেকে উঠে আসতেই দেশটি এরই মধ্যে এক ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে। এর আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দেশটির পূর্ব উপকূল। খবর বিবিসি ও এবিসি নিউজ’র।
রোববারও পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় ১২টিরও বেশি দাবানলের খবর মিলেছে বলে জানায় বুরো অব মেটিরিয়োলজি। এ ছাড়া আরও কয়েকটি জেলার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই দাবানল-সতর্কতা জারি করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
শনিবার বিকালে অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলে প্রায় ২০০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় ড্যামিয়ান। যদিও বড়সড় ক্ষয়-ক্ষতির খবর নেই। আছড়ে পড়ার পর ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি হারালেও তীব্র ঝড়ো হাওয়া সমস্যা বাড়িয়েছে বাসিন্দাদের। সঙ্গে রয়েছে প্রবল বৃষ্টিপাত।
অন্যদিকে গত তিন দিন ধরে প্রায় বিরামহীন প্রবল বর্ষণ চলছে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলের সিডনি এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের বিভিন্ন এলাকায়। যার জেরে বন্যায় বিধ্বস্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ১৯৯৮ সালের পরে বৃষ্টিপাতের জেরে এমন পরিস্থিতি এই প্রথম দেখছে অস্ট্রেলিয়া। তাড়াতাড়ি তা নিয়ন্ত্রণে না আনা গেলে প্রাণহানির আশঙ্কাও তৈরি হতে পারে।
বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে কুইন্সল্যান্ডেও। রোববারই এই সতর্কবার্তা জারি করেছেন আবহাওয়াবিদেরা। শনিবার রাত থেকে লাগাতার বৃষ্টি চলছে কুইন্সল্যান্ডে। ব্রিসবেনের ২০০ কিলোমিটার পশ্চিমে বৃষ্টির কারণে একটি খাঁড়ি উপচে পড়ার কারণে ড্যালবির বাসিন্দাদের জন্যও বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে।
গত সপ্তাহে সিডনিতে বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে ওই এলাকায় কয়েক মাস ধরে চলা দাবানলের আগুন প্রায় নিভে গেছে। এছাড়া প্রবল বর্ষণে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম জনবসতিপূর্ণ রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলসের জলাধারগুলোও ফের ভরে উঠেছে। সিডনি ও এর আশপাশের এলাকায় প্রায় ৪শ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ওয়ারাগাম্বা বাঁধে পানির পরিমাণ ৪০ শতাংশ থেকে একলাফে বেড়ে ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে। সিডনি শহরের প্রায় পাঁচ ভাগের চারভাগ পানিই এই বাঁধ থেকে সরবরাহ করা হয়।
এছাড়া ক্রমাগত পানিবৃদ্ধির কারণে বন্যা ও ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বিশেষ ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে নিউ সাউথ ওয়েলস ফায়ার সার্ভিসের সিডনি সদর দফতর। গত সেপ্টেম্বর থেকে দাবানলে জ্বলছে অস্ট্রেলিয়া। এতে অন্তত ৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছে, মারা গেছে ৫০ কোটিরও বেশি প্রাণি। দাবানলের লেলিহান শিখায় ধ্বংস হয়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, পুড়ে ছাই হয়েছে লাখ লাখ একর জমির গাছপালা। গরমের মৌসুম হওয়ায় দাবানলের আগুন নেভাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন দেশটির দমকলকর্মীরা। তাদের জন্য একপ্রকার আশীর্বাদ হয়েই যেন শুরু হয়েছে প্রবল বর্ষণ!
গত তিন বছর ধরে খরা ও ধূলিঝড়ে ভুগছিল দেশটির দুব্বো অঞ্চল। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, পানি ব্যবহারেও বিধিনিষেধ আরোপ করতে হয়েছিল শহর কর্তৃপক্ষকে। এবার শুষ্ক-রুক্ষ এই শহরেও নেমেছে বৃষ্টির ধারা। প্রবল বৃষ্টিপাতে দাবানল গেলেও সিডনির বিভিন্ন এলাকায় বন্যার কারণে অন্তত ১০ হাজার বাড়িঘর বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এক সপ্তাহের জন্য সেখানকার সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন।
তবে আবহাওয়াবিদ জেন গোল্ডিং বলছেন, দেশটিতে আরও বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমি জানি কিছু কৃষক আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। আমাদের যেটা দরকার তা হচ্ছে, আরও বৃষ্টিপাত। বৃষ্টি স্বল্পতায় মাটির এত গভীর পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে যে, বৃষ্টির ধারা আরও চলা দরকার।
এমএস/
আরও পড়ুন