সংসারি হতেই মালয়েশিয়া যাচ্ছিলেন রোহিঙ্গা তরুণীরা!
প্রকাশিত : ১৩:২২, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০
কক্সবাজারের টেকনাফের বঙ্গোপসাগরে রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার গভীর রাতে এ ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৫ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে এবং নিখোঁজ রয়েছে অন্তত ৫২ জন। সেই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে আরও বেশ কিছু রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে। তারা প্রত্যেকে অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন।
এ ঘটনার পর যারা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের উদ্ধারে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড। যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাদের মধ্যে অনেক নারী রোহিঙ্গাও রয়েছেন। আটক করা হয়েছে পাচারকারী দুই দালালকে।
জীবনের সন্ধানে, উন্নত জীবনযাপনের আশায় ঝুঁকি নিয়ে পুরুষরা এই অবৈধপথ অবলম্বন করলেও কেনো নারীরা এই ভয়াবহ পথে পা বাড়িয়েছে- সেই প্রশ্ন ছিল সবার। কিন্তু আটক নারী রোহিঙ্গাদের বক্তব্য শুনে হতবাক হয়েছেন অনেকেই।
অপরদিকে, ঘটনার পর এক প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন- যারা অবৈধভাবে যাত্রা করেছিল তাদের সবাই ক্যাম্পের বাইরের রোহিঙ্গা। কিন্তু অভিযানের পর দেখা গেছে এদের অধিকাংশই ক্যাম্প থেকে পালিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছিল।
উদ্ধার হওয়া টেকনাফের শামলাপুর ক্যাম্পের তরুণী রোকসানা বেগম বলেন, ‘আমার বাবা বেঁচে নেই। বিয়ের বয়স হয়েছে। কিন্তু বিয়ে করতে গেলে যৌতুক দিয়ে হবে। যা সম্ভব হচ্ছে না। বুঝতে পারছি ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আর সেই চিন্তায় জীবনটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। পরিচিতদের মাধ্যমে জেনেছি, মালয়েশিয়ায় স্থানীয় ও প্রবাসীরা বিনা যৌতুকে তরুণীদের সম্মান দিয়ে বউ করে নেন। তাই সংসারি হতেই ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে মালয়েশিয়া পাড়ি দিচ্ছিলাম। কিন্তু ভাগ্য আমাদের সহায় হয়নি।’
ঠিক একইভাবে মধুরছড়া ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়া জাদিমুরার হোসনে আরা বলেন, ‘ক্যাম্পে জীবনটা বিষিয়ে উঠেছে। স্বজাতিরাই অসহনীয় আচরণ করে। এখানে সময়টা অতিবাহিত হলেও বুড়িয়ে যেতে হচ্ছে। তাই পরিচ্ছন্ন ভবিষ্যতের সন্ধানে আমরা ঝুঁকি নিয়েছি।’
উদ্ধার হওয়া এসব রোহিঙ্গা তরুণীর সঙ্গে কিছু বিধবা ও স্বামী-পরিত্যক্তাও রয়েছেন।
লম্বাশিয়ার ইয়াসমিন নামে এক বিধবা বলেন, ‘সন্তান ও নিজেদের সামনের দিনগুলো সুন্দর করার আশায় আমরা ট্রলারে মালয়েশিয়া পৌঁছাতে চেষ্টা করেছিলাম। এভাবে মাঝ সাগরে ট্রলার ডুবে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে কল্পনাও করিনি।’
এদিকে রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলারডুবির ঘটনার মঙ্গলবার জীবিত উদ্ধার ৭২ জনকে টেকনাফ থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। বুধবার সকালে সাগর থেকে উদ্ধার আরও একজনকে সেন্টমার্টিনেই রাখা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৭৩ জনকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সদস্যরা।
পুলিশ আরও জানায়, মানবপাচারের জন্য মালয়েশিয়াগামী ট্রলারটি পরিচালনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে আটক ৮ জনের মধ্যে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় নাগরিক রয়েছে।
এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে পুলিশের পক্ষ থেকে টেকনাফ থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। থানা হেফাজতে রাখা রোহিঙ্গাদের পরবর্তীতে কোথায় রাখা হবে সে নির্দেশনা দেবেন আদালত। পুলিশ আদালতের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছে।
প্রসঙ্গত, প্রশাসনিক কড়াকড়িতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে সাগরপথে মালয়েশিয়া মানবপাচার চক্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সোমবার রাতে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া রোহিঙ্গাবোঝাই ট্রলারটি ডুবে যায়। কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন সাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে ঘটা ট্রলারডুবির ঘটনায় নিহত নারী-শিশুসহ ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনায় জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৭১ জনকে। উদ্ধার ও নিহতদের মাঝে অধিকাংশই নারী। যাদের সিংহভাগই তরুণী। এখনও কয়েকজন নিখোঁজ বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নিখোঁজদের মাঝে অনেকে সাঁতরে সেন্টমার্টিনের তীরে ফিরেছে বলে খবর এসেছে।
এসএ/
আরও পড়ুন