ডায়মন্ড জাহাজটি হয়ে উঠছে করোনার আস্তানা
প্রকাশিত : ১০:১৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০
ডায়মন্ড প্রিন্সেস। ছবি: সংগৃহীত
চীনের বাইরে করোনা ভাইরাসের সবচেয়ে বেশি বিপদ তৈরি করেছে কোনো দেশ বা অঞ্চল নয়, বরং সাগরে ভাসমান একটি জাহাজ। সেই জাহাজটি হলো ডায়মন্ড প্রিন্সেস। এই জাহাজে গত ১৪ দিনে সাড়ে পাঁচশরও বেশি যাত্রী ও ক্রু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ওই জাহাজে কোনো কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না ভাইরাসের বিস্তার।
এ মাসের চার তারিখে পর্যটক ভর্তি ব্রিটিশ পতাকাবাহী এই প্রমোদতরিটিতে ১০ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি টের পাওয়ার পর পরই এটিকে জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে নোঙর করা হয়। এরপর থেকেই চেষ্টা চলছে কোনো ভাবেই যেন অন্য যাত্রী বা ক্রু করোনায় সংক্রমিত না হন।
সে সময় জাহাজে যাত্রীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৬৬৬ জন, যারা ৫৬টি দেশের নাগরিক। নাবিক এবং অন্যান্য কর্মচারীরা ছিলেন মোট ১০৪৫ জন। সব মিলে ৩ হাজার ৭১১ জনের মতো।
তখন থেকেই তাদেরকে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়। জাহাজের কেবিনের ভেতর একরকম অবরুদ্ধ সময় কাটাতে হচ্ছে যাত্রীদের। যতটা সম্ভব চেষ্টা করা হচ্ছে একে অন্যের সংস্পর্শে যাতে না আসতে পারে। যাদের শরীরে যখনই করোনা ভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের তীরে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
কিছুটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জাপানের কর্তৃপক্ষ। প্রতি ঘণ্টায় নতুন করে চার থেকে পাঁচজনের শরীরে করোনা ভাইরাস ঢুকছে। প্রতিদিনই নতুন করে কয়েক ডজন যাত্রীর শরীরে এই ভাইরাস বাসা বাঁধছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জাপানের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ডায়মন্ড প্রিন্সেসে নতুন করে ৮৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ নিয়ে প্রমোদ জাহাজটিতে গত ১৪ দিনে ৫৪২ জন যাত্রী এবং ক্রু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হেলথ ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড. অ্যান্টনি ফাওচি গত সোমবার খোলাখুলি বলেছেন, কয়েক হাজার মানুষকে কোয়ারেন্টিনে রেখে যেভাবে জাহাজটিতে ভাইরাস আটকানোর চেষ্টা চলছে, তা তেমন একটা কাজে আসছে না।
সম্ভবত সে কারণেই একের পর এক দেশ ওই জাহাজে আটকে থাকা তাদের নাগরিকদের নিয়ে যেতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ৩৮০ জন নাগরিকের অধিকাংশকেই গত সোমবার বিশেষ একটি বিমানে করে নিয়ে গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার কানাডা জানিয়েছে, তারাও একটি বিমান ভাড়া করেছে। জাহাজে ২৫৬ জন কানাডার নাগরিক রয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩২ জন প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
দক্ষিণ কোরিয়াও একটি বিশেষ বিমান পাঠাচ্ছে তাদের চারজন নাগরিককে নিয়ে যেতে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রিটেনও তাদের নাগরিকদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। এদিকে ভারতও ওই জাহাজে থাকা ভারতীয় ক্রুদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
ইতিমধ্যে কয়েকশ’ জাপানি সৈন্য জাহাজে উঠে পুরোদমে স্যানিটাইজেশনের কাজ শুরু করেছে। বিশেষ করে যেসব যাত্রী আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেছেন, তাদের ছেড়ে যাওয়া কক্ষগুলো জীবাণুমুক্ত করার কাজ করছে সৈন্যরা।
জাপানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ১৯ তারিখ থেকে শুরু করে ২১ তারিখের মধ্যে জাহাজ থেকে যাত্রীদের নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সমস্ত যাত্রী ও ক্রুকে আলাদা করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে হাজারেরও বেশি ক্রুকে আরও কিছুদিন জাহাজে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
এএইচ/
আরও পড়ুন