রণক্ষেত্র দিল্লি, পুলিশসহ নিহত ৪
প্রকাশিত : ১০:৩৬, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০
ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাজধানী দিল্লি। এই আইনের বিরোধিতাকারী ও সমর্থকদের মধ্যে দিল্লির বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
গতকাল সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দিনভর পাল্টাপাল্টি পাথর নিক্ষেপ, যানবাহন ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত চার জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন।
তবে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, সন্ধ্যায় আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন ও ১৪৪ ধারা জারির পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
ভারতে সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দিল্লি পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা আগে ভারতের রাজধানী শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বলে জানিয়েছে দেশটির সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রথমবারের মতো ভারত সফর শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় সোমবার দুপুর ১১টা ৪০ মিনিটে গুজরাটের আহমেদাবাদে অবতরণ করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এয়ারফোর্স ওয়ান বিমান। বিমানবন্দর থেকেই তিনি মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত সবরমতী আশ্রমে যান। পরে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম গুজরাটের মোতেরা স্টেডিয়ামে উপস্থিত হন। সেখান থেকে আগ্রার তাজমহল সস্ত্রীক পরিদর্শনসহ বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে দিল্লি পৌঁছান তিনি। সেখানে আজ মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে তার।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফর শুরুর আগের দিনই উত্তর দিল্লির মৌজপুর এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিতর্কিত সিএএ সমর্থক ও বিরোধিতাকারীদের মধ্যকার ওই সংঘর্ষ সোমবার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এবং আরও সহিংস হয়ে ওঠে।
এদিন সন্ধ্যায় দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চান্দ বাগ এলাকায় সহিংসতায় হেড কনস্টেবল রতন লাল (৪২) নিহত হয়েছেন। এছাড়া গোকুলপুরিতে আহত হয়েছেন এক ডেপুটি পুলিশ কমিশনার। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কারদামপুরি এলাকায় সহিংসতায় মাথায় আঘাত পেয়ে এক বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় আরও দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। দিনভর সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ আরও অন্তত ৫০ জন আহত হন।
দিনভর সহিংসতার বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এর একটিতে সন্ধ্যায় গোকুলপুরির একটি টায়ার মার্কেটে ব্যাপক আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ভজনপুর, মৌজপুর, জাফরাবাদসহ অন্যান্য এলাকাতেও সহিংসতার ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। এসব ভিডিওতে যানবাহন, দোকানপাট ও বিভিন্ন ভবনে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ভজনপুরে পেট্রোল বোমা ছুড়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি পেট্রোল পাম্প।
গত শনিবার রাতে দিল্লির জাফরাবাদ এলাকায় এক হাজারেরও বেশি নারী সিএএ বিরোধী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু করে। সোমবার ওই এলাকার একটি ভিডিওতে লাল শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তিকে অস্ত্র হাতে নিয়ে নিরস্ত্র পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে তেড়ে যেতে দেখা গেছে। এছাড়া অন্য ভিডিওগুলোতে দুই পক্ষের সমর্থকদেরই পরস্পরের দিকে পাথর নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে।
সংঘর্ষ শুরুর প্রথম দিকে টিয়ার গ্যাস ছুড়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায় দিল্লি পুলিশ। তবে সহিংসতা বৃদ্ধি পেতে থাকলে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (আরএএফ) তলব করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রাজধানী শহরের বেশ কয়েকটি মেট্রো স্টেশন। উত্তরপূর্ব দিল্লিতে ১৪৪ ধারা জারি করে বড় ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
দিনভর সহিংসতার পর রাতে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা দাবি করেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ওই ঘোষণার পরও বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। তবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতের বিজেপি সরকার নাগরিকত্ব আইনে বিতর্কিত সংশোধনী আনার পর থেকেই দেশটি বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। দিল্লির শাহিনবাগে অবস্থান নিয়ে টানা দুই মাস ধরে বিক্ষোভ করে আসছেন নারীরা। ওই অবস্থানের কারণে বন্ধ হওয়া সড়ক কর্তৃপক্ষ খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার পর শনিবার রাত থেকে জাফরাবাদে একই ধরনের বিক্ষোভ শুরু হয়। আর রবিবার মৌজপুর এলাকায় সিএএ’র সমর্থনে মিছিলের ডাক দেন স্থানীয় বিজেপি নেতা কপিল শর্মা। সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের জন্য বিতর্কিত এই নেতা ওই মিছিল থেকে জাফরাবাদের বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে দিল্লি পুলিশকে আল্টিমেটাম দেন। এরপরই ওই এলাকায় সহিংসতা শুরু হয়।
আরও পড়ুন