করোনা ভাইরাস: ৪ হাজার ছাড়ালো মৃতের সংখ্যা
প্রকাশিত : ০৯:৪১, ১০ মার্চ ২০২০
প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনে আবারও কমতে শুরু করেছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া ভাইরাসটির প্রকোপে দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বপ্রথম পূর্ববর্তী রেকর্ড ছাড়িয়ে কম সংখ্যক ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন।
উল্টো চিত্র ইউরোপের দেশ ইতালিসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে। সর্বোচ্চ সতর্কতার পরও এখনও নিয়ন্ত্রণের বাহিরে ভাইরাসটি। যেখানে গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের হারে উৎপত্তিস্থল চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে ইতালি, ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়া।
বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা ভাইরাসটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে। দেশটিতে একদিনেই মারা গেছে ৯৭ জন। আর চীনে প্রাণ গেছে ১৭ জনের।
এ নিয়ে চীন থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মরণ এ ব্যাধিতে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ৪ হাজার ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। যেখানে ৩ হাজার ১৩৬ জনই চীনা নাগরিক।
একইসঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের হার। যেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও প্রায় ৪ হাজার ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ সাড়ে ১২ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে চীনেই প্রায় ৮১ হাজার। বিশ্বব্যাপী করোনায় এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সাড়ে ৬৩ হাজার মানুষ।
আজ মঙ্গলবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এ খবর জানিয়েছে।
চীনের বাইরে সবচেয়ে করুণ অবস্থা ইতালিতে। ইউরোপের দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা একদিনে মৃতের ঘটনায় দ্বিতীয়। এর আগের দিন সেখানে মারা যায় ১৩৩ জন। ফলে ধারণা করা হচ্ছে চীনকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে দেশটি।
আশঙ্কাজনকহারে ছড়িয়ে পড়ায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৮০০ মানুষ। এ নিয়ে ইতালিতে করোনার সংক্রমণে ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ ভুগছেন।
আর রাজধানী রোমসহ ১১টি অঞ্চলের প্রায় দেড় কোটি মানুষকে নেয়া হয়েছে কোয়ারেন্টাইনে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সব স্কুল, কলেজ, সুইমিংপুল, পর্যটন কেন্দ্র, বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও প্রতিষ্ঠান। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে জনসমাগমে। বাতিল করা হয়েছে সব ধরনের খেলা।
অপরদিকে, শত প্রচেষ্টার পরও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে নিয়ন্ত্রণে আসছে না করোনা ভাইরাস। দেশটিতে নতুন করে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইরানে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ২৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ছয় হাজার ছাড়িয়েছে।
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় বেড়েছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ হাজার। গোটা শহরজুড়ে প্রতিষেধক ছেটানো হলেও কোনোভাবেই থামছে না প্রকোপ। সেখানে এখন পর্যন্ত অর্ধশতকের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
জাপানে নোঙ্গর করা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৬৯৬ যাত্রী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন এখন পর্যন্ত ৭ জন।
এদিকে জাপানকে অতিক্রম করে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ফ্রান্স, জার্মানি ও স্পেনে। প্রান্সে আরও ২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ২১ আর আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১২শ জনে দাঁড়িয়েছে।
থেমে নেই জার্মানিও। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২ জন মারা গেলেও বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানে প্রায় সাড়ে ১১শ মানুষের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণের দেখা মিলেছে।
আর স্পেনে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত সাড়ে ১১ হাজার, প্রাণহানি ২৮ জনের। জাপানের বিভিন্ন স্থানে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫১৪ জন। মৃতের সংখ্যা ৩ জন বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে-৫১৪ মৃত ২৪, নিউ ইয়র্কে- ৮৯, সিঙ্গাপুরে- ১৫০, হংকংয়ে-১১৫ মৃত ৩, সুইজারল্যান্ডে-৩৩২ মারা গেছেন ২ জন। যুক্তরাজ্যে-৩১৯, মৃত ৫, নরওয়েতে-১৯২, কুয়েতে-৬২, বাহরাইনে-৮৭, সুইডেনে-২৪৮, অস্ট্রেলিয়ায়-১০২, মালয়েশিয়ায়-১১৭, থাইল্যান্ডে-৫০ মারা গেছেন একজন।
অপরদিকে, তাইওয়ানে আক্রান্ত-৪৫ মৃত্য ১, নেদারল্যান্ডসে-৩২১, মৃত ৩, ইরাকে ৫৪ মৃত্যু ২, কানাডায়-৬০, অস্ট্রিয়ায় ১৩১, ভারতে ৩৪, আরব আমিরাতে ৫৯ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এছাড়া, , আইসল্যান্ড, বেলজিয়াম, আলজেরিয়া, সান মেরিনো, ভিয়েতনাম, ডেনমার্ক, ইসরাইল, লেবানন, ওমান, ম্যাকাউ, ক্রোয়েশিয়া, ইকুয়েডর, গ্রিস, কাতার, ফিনল্যান্ড, বেলারুস, আয়ারল্যান্ড, মেক্সিকো, পর্তুগাল, রোমানিয়া, পাকিস্তান, সেনেগাল, ফিলিপাইন, আজারবাইজান, ব্রাজিল জর্জিয়া, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, চিলি ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্তত ১১৪টি দেশ করোনায় ভুগছে।
এরমধ্যে বাংলাদেশের প্রথমবারের প্রাণঘাতী ভাইরাসটির সংক্রমণের দেখা মেলে গত রোববার। সম্প্রতি ইতালি ফেরত দুই নাগরিকের দেহে মরণ এ ব্যধিটির সন্ধান পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে একজনের সংস্পর্শে আরেকজনের স্ত্রীও আক্রান্ত হয়। এতে এক নারীসহ তিনজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
একইসঙ্গে আক্রান্তদের একজনের সংস্পর্শে আসা আরও ৪০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে। এছাড়া, করোনার লক্ষণ পাওয়া যাওয়ায় সিঙ্গাপুর ফেরত এক বাংলাদেশি শিশুসহ তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যায় তাদের রাজধানীর কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে বিমানবন্দর সূত্র জানায়।
এদিকে, বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়ানো করোনা ভাইরাসটি যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে ভয়ে ওমরাহ যাত্রী ও মসজিদে নববী ভ্রমণ সাময়িক স্থগিত করেছে সৌদি আরব।
আর করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচতে সাময়িক সময়ের জন্য বাংলাদেশসহ সাতটি দেশের সঙ্গে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কুয়েত ও কাতার। অন্যান্য দেশগুলো হলো- ভারত, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, লেবানন, ফিলিপাইন, সিরিয়া ও মিশর।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরেই প্রথম এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এখন পর্যন্ত এটি বিশ্বের অন্তত বহু দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এআই/
আরও পড়ুন