করোনা ঠেকাতে বিভিন্ন দেশ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে
প্রকাশিত : ১৯:০৮, ১১ মার্চ ২০২০
করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সব দেশ যে ঠিক একই রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে তা নয়। নানা দেশ নানা রকম পদক্ষেপ নিচ্ছে। চীন থেকেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সূচনা এবং সেদেশে অত্যন্ত কঠোর এবং নজিরবিহীন সব পদক্ষেপ নিয়েছিল চীনা কর্তৃপক্ষ।
বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং বা আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়েছে এমন দেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য বিমানবন্দরে নজরদারি এবং দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষার ব্যবস্থা অনেক দেশ করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন গত ১৪ দিনের মধ্যে চীন বা ইরানে গিয়েছিলেন এমন বিদেশী যাত্রীদের ঢুকতে দিচ্ছে না। চীন থেকে আসা সকল ফ্লাইট পাঠানো হচ্ছে ১১টি মার্কিন বিমানবন্দরে এবং যাত্রীদের জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
নজরদারির ব্যবস্থার মধ্যে আছে:
বিমানবন্দরে মেডিক্যাল স্টাফ রাখা, আগত যাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করা যাতে তারা অসুস্থ বোধ করলে তা বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের জানানো এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণগুলো সম্পর্কে তথ্য দেয়া। বিমানবন্দর এবং রেল স্টেশনের মতো অন্যান্য পরিবহন 'হাব'গুলোতে স্ক্রিনিংএর ব্যবস্থা অনেক দেশেই করা হয়নি।
তবে এর কার্যকারিতা সীমিত বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মত দিয়েছেন। এর একটা কারণ, করোনাভাইরাস কারও দেহে ঢুকলে তার দেহে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। এক গবেষণায় দেখা গেছে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত যাত্রীদের মাত্র অর্ধেককে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।
স্কুল কলেজ বন্ধ
জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেসকো বলছে, ১৪টি দেশ এ পর্যন্ত সব স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে, এবং অন্য ১৩টি দেশ কিছু স্কুল বন্ধ করেছে। জাপানে মার্চের শুরুতে সব স্কুল বন্ধ করা হয়েছে- যেখানে ১৮৬ জন করোনা ভাইরাস সংক্রমিত ব্যক্তি চিহ্নিত হচ্ছে। অন্যদিকে ইতালি আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে। স্পেনের মাদ্রিদ এলাকায় সব স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা হয়েছে।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি- সংক্রমণ দেখা দিয়েছে এমন জায়গায় অল্প কিছু স্কুল সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে।
উন্মুক্ত সঙ্গীতানুষ্ঠান ও খেলা বন্ধ:
বেশ কিছু দেশে খেলা বাতিল করা হয়েছে, অথবা দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেলা হচ্ছে। ইউরোপে বেশ কিছু ফুটবল, রাগবি ও এ্যাথলেটিক্স ইভেন্ট স্থগিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় স্থগিত হয়েছে ইন্ডিয়ান ওয়েলস নামের টেনিস টুর্নামেন্ট। ইতালিয়ান ও সুইস ফুটবল লিগ অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফুটবলের কিছু খেলা দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে হবে।
আগামী ২৪শে জুলাই জাপানের অলিম্পিক শুরু হবার কথা- তা এখনো স্থগিত করার কোন সিদ্ধান্ত হয়নি তবে জাপানের অলিম্পিক মন্ত্রী বলেছেন, এটা যেন নির্ধারিত সময়েই হয় তার জন্য সব চেষ্টা তারা করে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেছেন, তেমন কোন পরিস্থিতি হলে অলিম্পিক পিছিয়ে এ বছরের শেষ দিকে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশে এ মাসেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য এক বছরব্যাপি অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন হবার কথা ছিল। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত হবার পর সেই অনুষ্ঠানমালার বেশ কিছু অংশ স্থগিত এবং বিদেশী অতিথিদের আগমন পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
জাদুঘর ও পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ:
বিভিন্ন দেশে কিছু বিশ্ববিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে, কোথাও দর্শনার্থীর সংখ্যা কমানো হয়েছে বা আগতদের বলা হয়েছে একে অপরের খুব কাছাকাছি না যেতে। এক মাস বন্ধ থাকার পর সাংহাইয়ের বিশাল ডিজনি অবকাশ কেন্দ্র আংশিকভাবে খুলে দেয়া হয়েছে। তবে হংকং-এর ডিজনিল্যান্ড এবং জাপানের ডিজনি থিম পার্কগুলো এখনও বন্ধ।
এশিয়ার বিভিন্ন দেশে মিউজিয়াম ও অন্যান্য পর্যটন এলাকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ইতালিতে রোমের কোলিসিয়ামসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। ফ্রান্সে প্যারিসের ল্যুভ মিউজিয়াম করোনা ভাইরাস আতংকে বন্ধ করা হয়েছিল তবে এখন তা খুলে দেয়া হয়েছে, তবে কোন দর্শক অসুস্থ বোধ করলে, বা সংক্রমিত দেশ থেকে এসে থাকলে তাদের সেখানে না যেতে বলা হচ্ছে।
প্যারিসে আইফেল টাওয়ার খোলা রয়েছে তবে টিকিট বিক্রি হচ্ছে শুধু ব্যাংক কার্ড দিয়ে বা অনলাইনে। প্যারিসের ডিজনিল্যান্ডও খোলা রয়েছে, তবে তাদের একজন কর্মী গত সপ্তাহে করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হন। সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনা, ইরাকের কারবালার মত ধর্মীয় পবিত্র স্থানগুলোতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা বা বিধিনিষেধ আরোপিত হয়েছে।
বিভিন্ন এলাকায় লোকজনকে কোয়ারেন্টিন করা:
চীনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে অন্য কিছু দেশও বিভিন্ন এলাকায় লোকজনের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের চেষ্টা করছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্টে তার দেশে লোকজনকে ঘরে থাকা এবং ভ্রমণের আগে অনুমতি নেবার আদেশ দিয়েছেন। সেখানে রাস্তা ও বিমানবন্দরেও চেকিং করা হচ্ছে। তবে এর কার্যকারিতা এখনো নিশ্চিত নয়।
ইরানে পবিত্র কোম শহরে ব্যাপকভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে এ শহরে বাইরের লোকের ঢোকা বন্ধ করা বা লোকজনের চলাচল সীমিত করার পদক্ষেপ নেয়, তবে এর কিছু সমালোচনা হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় দেগু শহরে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত দুটি এ্যাপার্টমেন্ট ব্লক কোয়ারেন্টিন করা হয়- যেখানে শিনচিওঞ্জি নামের একটি খ্রীষ্টান ধর্মীয় গোষ্ঠীর লোকের বসবাস করতেন। উত্তর কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ পিয়ংইয়ংএ ৩৮০ জন বিদেশী কূটনীতিক ও অন্যান্য স্টাফদের এক মাসের বেশি সময়ের জন্য তাদের নিজ নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিন করে রাখে। বিবিসি
এমএস/এসি
আরও পড়ুন