করোনায় বিশ্বব্যাপী মৃত্যু হয়েছে ৫৭৯৫ জনের
প্রকাশিত : ১০:০৩, ১৫ মার্চ ২০২০
করোনাতঙ্কে কাঁপছে বিশ্ব। উৎপত্তিস্থল চীনে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণা করেছে করোনা। গত ২৪ ঘণ্টায় উহানসহ বেইজিংয়ে অন্তত ১৩ জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। সুস্থতার সংখ্যায় অন্যান্য দিনের তুলনায় ছিল কিছুটা কম।
উল্টোচিত্র চীনের বাহিরের দেশগুলোতে। বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অবস্থা উদ্বেগজনক। ইতালী ও ইরানের অবস্থ সবচেয়ে ভয়াবহ। দেশ দুটিতে প্রতিনিয়ত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এমন অবস্থায় ইউরোপকে পৃথকভাবে ‘মহামারির আশ্রয়কেন্দ্র’ বলে অভিহিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে আজ রোববার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, বিশ্বের ১৩২টি দেশে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি ভাইরাসটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৭৯৫ জনে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও প্রায় ১০ হাজার মানুষ। বর্তমানে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১ লাখ প্রায় ৫২ হাজার মানুষ।
এদিকে, বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসে বিধ্বস্ত ইতালি। খাবার দোকান থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলাধুলা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার পরও থামছে না আক্রান্ত ও মৃতের মিছিল। নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক না থাকায় দেশিয় কিছু সম্ভাব্য প্রতিষেধক দেশব্যাপী ছড়ালেও কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
শুক্রবার একদিনে আড়াইশো ব্যক্তির মৃত্যু হলেও গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ১৭৫ জন। দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর কিছু প্রাণহানি কমেছে বলে অনেকে মনে করছেন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ৪৪১ জন দাঁড়ালো। তবে মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার বেড়েছে। অর্থাৎ একদিনে তিন হাজার ৪৯৭ নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। যেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২১ হাজার ১৫৭ জনে পৌঁছেছে। যা চীনের পর সর্বোচ্চ।
ভয়বাহ এমন পরিস্থিতি ইউরোপের অন্যান্য দেশেও। যুক্তরাজ্য থেকে শুরু করে ফ্রান্স, স্পেনসহ অন্যান্য দেশগুলোয় দ্রুত সংক্রমণ বিস্তার করায় ইউরোপকে ‘মহামারির কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যেখানে লন্ডনে ২ বাংলাদেশির মৃত্যুর পাশাপাশি স্পেনে ৮ বাংলাদেশি মরণ এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
থেমে নেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানও। ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৬১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। যেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যান ৯৭ জন। আক্রান্ত সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৭২৯ জনে। এরপরই রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। তবে সেখানে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে করোনা। এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের দেশে প্রায় ৮ হাজার ১৬২ আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৭৫ জন।
এরপরই রয়েছে ইউরোপের আরেক দেশ স্পেন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। বর্তমানে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ।
এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ ভারতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১৩ মার্চ) দিল্লির এক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ওই নারীর বয়স ৬৬ বছর।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো একজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে এশিয়ার দেশটিতে এখন পর্যন্ত দুইজনের মৃত্যু হল। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৮৩ জনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও ২০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করোনা ভাইরাসের প্রকোপে গোটা বিশ্বই এখন কার্যত অচল। মুখ থুবড়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। চলমান এ পরিস্থিতি উত্তরণে প্রতিষেধক তৈরির বিকল্প নেই বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সে আলোকে এবার সুখবর দিয়েছে ব্রিটেন। দেশটির বিজ্ঞানীদের একটি দল জানিয়েছে যে, করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন (টিকা) তৈরি করেছেন তারা। বর্তমানে ভ্যাকসিনটি আরো উন্নত করার কাজ চলছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, সফলভাবে ইঁদুরের ওপর ওই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালিয়েছেন তারা।
ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনটি জুনের মধ্যে মানবদেহে পরীক্ষার (ট্রায়াল) জন্য প্রস্তুত হতে পারে। গবেষক দলটির প্রধান ড. রবিন শটক। তার নেতৃত্বে দলটি বর্তমানে প্যারিসের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করছেন। বানরের ওপর ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা নির্ধারণে তারা সেখানে কাজ করছেন। এর আগে কানাডা ও ইসরাইল ভেকসিন আবিষ্কারের বার্তা দিয়েছিল। তবে হাতে পাওয়া যেতে পারে বছরের শেষ দিকে বলে জানানো হয়।
এদিকে বিদেশফেরত ৩ কবাংলাদেশি সুস্থ হওয়ায় তাদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। আর, সারাদেশে ইতালি, ইরাক, সৌদি আরসহ অন্যান্য দেশ থেকে ফেরা অন্তত দেড় হাজার নাগরিককে হোম কোয়ারেন্টাইন ও রাজধানীর আশকোনা হজ্ব ক্যাম্পে রাখা হয়েছে।
আশঙ্কার বিষয়, ইতালি ও জার্মান ফেরতদের মধ্যে দুই নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকালেও দেড় শতাকি ইতালি প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। তাদেরকে পরীক্ষা করে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার চিন্তা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
এছাড়া, ভয়াবহ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ট্রেম্পের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ২০৬ জনে পৌঁছেছে। যেখানে মৃত্যু হয়েছে আরও ৮ জনের। এ নিয়ে সেখানে মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ জনে। করোনার পরীক্ষা করা হয়েছে ট্রাম্পেরও। তবে তিনি আক্রান্ত নন। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। শুক্রবার (১৩ মার্চ) স্থানীয় সময়ে দুপুরে এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন ট্রাম্প।
এই ঘোষণার পাশাপাশি প্রাণঘাতী ভাইরাসটি মোকাবেলায় ৫০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের ঘোষণা দেয়া হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এ অর্থ দেশের মানুষ ও প্রদেশের জন্য ব্যয় করা হবে। আমরা সবাই মিলে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করব।’
দ্রুত গতিতে করোনা ভাইরাসের বিস্তার হতে থাকায় গত ৩০ জানুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। ওই সময়ে সংস্থাটির প্রধান জানান, এর মাধ্যমে দুর্বল স্বাস্থ্য সেবার দেশগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া এবং তাদের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
এআই/
আরও পড়ুন