ঢাকা, সোমবার   ১০ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ফ্রান্সের একটি গীর্জা থেকে যেভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৪৭, ৩০ মার্চ ২০২০

Ekushey Television Ltd.

চীনের উহানে একটি প্রাণীর মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিল করোনা ভাইরাস। পর্যায়ক্রমে তা দেশটির অন্যান্য অঞ্চলের সাথে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বিস্তার লাভ করতে থাকে।

চীনের বাহিরে ভাইরাসটির সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী ইউরোপ। গতমাসের শুরুতে সর্বপ্রথম এ অঞ্চলে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ইউরোপে করোনায় প্রথম মৃত্যু ফ্রান্সে। কিন্তু কিভাবে দেশটিতে করোনার প্রকোপ দেখা দিয়েছিল তা অনেকেরই অজানা। 

খ্রিষ্টান অধ্যুশিত দেশটিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ক্রিশ্চিয়ান ওপেন ডোর গির্জায় জড়ো হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। সপ্তাহব্যাপী ওই ধর্মীয় উপাসনায় শুধু ফ্রান্সের নয়, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডসহ অন্যান্য অঞ্চলের বহু মানুষ এতে সমবেত হয়েছিলেন।

এখান থেকেই ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এই উপাসনায় অংশ নেয়া কোনো একজনের শরীরের ভাইরাসটি বহন করায়, তা দ্রুত অন্যের শরীরের ছড়িয়ে পড়ে। 

এই গির্জার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রথম করোনা রোগী পাওয়া যায় ২৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর দেশটির জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই গির্জায় আগতদের ও তাদের সংস্পর্শে আসাদের শনাক্ত করতে দীর্ঘ অনুসন্ধান শুরু করেন। কিন্তু তার আগেই গির্জায় আগতরা দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েন।

মুলহাউসের স্থানীয় সরকার বলছে, উপাসনার জন্য ওই সময় গীর্জায় অংশ নিয়েছিলেন এমন আড়াই হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। যেখানে প্রাণ হারান ১৭ জন। 

যা পরবর্তীতে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার বুর্কিনা ফাঁসো থেকে ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ কর্সিকা, লাতিন আমেরিকার গায়ানা থেকে সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্সের পারমাণবিক পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ইউরোপের বৃহত্তম গাড়ি প্রস্তুতকারক মার্সিডিজ-বেঞ্জের কারখানায়ও।

ধর্মীয় ওই অনুষ্ঠানের কয়েক সপ্তাহ পর সীমান্ত বন্ধ করে দেয় জার্মানি। দীর্ঘ ২৫ বছর পর প্রথমবারের পর দুই দেশের নাগরিকদের অবাধে চলাফেরায়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। গির্জার ওই ঘটনার কারণেই জার্মানি এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে।

ক্রিশ্চিয়ান ওপেন ডোর গির্জার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা রয়টার্সকে যে গল্পটি বলেছেন তাতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের গতি এবং নাজুক পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে। ফ্রান্সের ওই অঞ্চলের স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এখনও এই সংক্রমণ মোকাবিলার প্রস্তুতি পর্বে রয়েছেন।

ফ্রান্সে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ হাজার ১৭৪ এবং মারা গেছেন ২ হাজার ৬০৬ জন। উত্তর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতো ফ্রান্সের সরকারও বড় ধরনের জনসমাবেশ কিংবা মানুষের অবাধ চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেনি।

গির্জা কর্তৃপক্ষ উপাসনায় অংশগ্রহণকারীদের একটি তালিকা দেশটির স্বাস্থ্যবিভাগের কাছে দিয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিভাগের তদন্তকারীরা বলছেন, বেশ দেরি হয়ে গেছে। ফ্রান্সের পূর্বাঞ্চলের জাতীয় জনস্বাস্থ্য সংস্থার মহামারি বিশেষজ্ঞ মাইকেল ভার্নি বলেন, গির্জায় শিশুদের দেখাশোনা যারা করেন, ইতিমধ্যে তাদের অনেকেই করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা হেরে গিয়েছি। আমরা বুঝতে পারছি, আমাদের সামনে এখন করোনার টাইম বোমা অপেক্ষা করছে।’

এআই/এসি
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি