ভারতে তাবলিগের ১২ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে মামলা
প্রকাশিত : ১৮:৫৬, ৫ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ২৩:৪৯, ৫ এপ্রিল ২০২০
তাবলিগ জামাতের সদস্য ১২ জন বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা রুজু করেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের পুলিশ।
এই ১২ জন বাংলাদেশি দিল্লির মারকাজ নিজামুদ্দিনের জামাতে অংশ নিয়ে গত দু'সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে উত্তরপ্রদেশের শামলি জেলার একটি তাবলিগ মসজিদে অবস্থান করছিলেন।
এই বারোজনের মধ্যে অন্তত দুজন ইতিমধ্যেই করোনাভাইরাস পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন, বাকিদেরও পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
শামলির পুলিশ প্রধান ভিনিত জয়সোয়াল জানিয়েছেন, "পর্যটক ভিসা নিয়ে ভারতে প্রবেশ করার পর এই বিদেশি নাগরিকরা বেআইনিভাবে ধর্মীয় কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছেন, এ কারণেই তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে।"
তিনি আরও জানান, যে দুজন বাংলাদেশি নাগরিক এর মধ্যেই করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন, তাদের এখন রাখা হয়েছে ঝিনঝিনা-র একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আইসোলেশন ওয়ার্ডে।
ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে বিশেষভাবে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্যই প্রস্তুত করা হয়েছে।
দু'জন বাংলাদেশি ছাড়াও ভারতের আসামের বাসিন্দা আর একজন তাবলিগ সদস্যও করোনা-আক্রান্ত হয়ে তাদের সঙ্গে একই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি আছেন।
বাকি আরও ১০ জন বাংলাদেশিকে নিকটবর্তী ভাওয়ান শহরের একটি সরকারি কলেজ ভবনে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
দিল্লিতে তাবলিগ জামাতের সদর দফতর 'বাংলাওয়ালি মসজিদ' বা 'মারকাজ নিজামুদ্দিনে' মার্চ মাসের যে জামাত নিয়ে ভারতে বিতর্কের ঝড় বইছে, এরা সবাই সেই সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন।
মারকাজ নিজামুদ্দিনের ওই জামাতকে ভারত সরকার ইতিমধ্যেই এ দেশে করোনাভাইরাস ছড়ানোর অন্যতম প্রধান হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাবলিগের প্রধান মাওলানা সাদ কান্দহালভি-ও এখনও পর্যন্ত ফেরার হয়ে আছেন।
ওই জামাতে অংশ নিয়ে তাবলিগের শত শত সদস্য, যার মধ্যে ভারতীয়রা ছাড়াও আরও অন্তত ২০টি দেশের নাগরিকও ছিলেন, তারা ধর্মপ্রচারের কাজে ভারতের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছেন।
তাদের সবার খোঁজে এবং তারা কার কার সংস্পর্শে এসেছেন, সেটা জানতে এখনও গোটা দেশ জুড়ে ব্যাপক 'ম্যানহান্ট' চলছে। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মুসলিম-অধ্যুষিত জেলা শামলি রাজধানী দিল্লি থেকে মাত্র সোয়াশো কিলোমিটার দূরে।
শামলি জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, বারোজন বাংলাদেশি ও আসামের একজন বাসিন্দাকে নিয়ে তাবলিগের তেরোজনের ওই দলটি শামলিতে এসে পৌঁছয় গত ১৭ই মার্চ।
শামলির জেলা প্রশাসক যশজিৎ কাউর জানিয়েছেন, "তাবলিগের এই দলটি ভেসানি গ্রামের এক মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিল। দিল্লির মারকাজ নিয়ে সারা দেশ জুড়ে হইচই শুরু হওয়ার পর প্রশাসন ওই মসজিদে খোঁজ নিতে গেলে এদের সন্ধান পাওয়া যায়।"
"আমরা এদের সবাইকে কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করি এবং তাদের দেহ থেকে স্যাম্পল নিয়ে তা করোনাভাইরাস টেস্টের জন্য পাঠানো হয়।
সেই পরীক্ষার ফলেই অন্তত দুজন বাংলাদেশি ও একজন ভারতীয় নাগরিক করোনা-আক্রান্ত হিসেবে নিশ্চিত হয়েছেন। এরই মধ্যে শনিবার উত্তরপ্রদেশ পুলিশ শামলি জেলার ভাওয়ান থানাতে ১২জন বাংলাদেশির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে তাবলিগের যে সদস্যরা অসহযোগিতা করছেন বা স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করছেন, উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার ইতিমধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল সিকিওরিটি অ্যাক্টের মতো কড়া আইন প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তাবলিগ জামাতের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের এই কঠোর নীতির অংশ হিসেবেই ১২ জন বাংলাদেশির বিরুদ্ধে পুলিশি পদক্ষেপ নেওয়া হল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আগেই জানিয়েছে, যে বিদেশিরা পর্যটক ভিসা নিয়ে ভারতে ঢুকে মারকাজে অংশ নিয়েছেন- তাদের প্রত্যেককে কালো তালিকাভুক্ত করে ভারতে প্রবেশ চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
দিনকয়েক আগে হরিয়ানার পালওয়ালেও একটি মসজিদে দিল্লির মারকাজ-ফেরত তিনজন বাংলাদেশি নাগরিককে পাওয়া গিয়েছিল। তবে তাদের বিরুদ্ধে ওই রাজ্যের বিজেপি সরকার কোনও এফআইআর দায়ের করেছে বলে জানা যায়নি।
এসি
আরও পড়ুন