ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

যেসব দেশে করোনা নেই

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:০৩, ১৩ এপ্রিল ২০২০

বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ রূপে আবির্ভূত হয়েছে করোনা ভাইরাস। প্রতি মুহূর্তে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ লাখ ৫৩ হাজার ১৫৫ জন এবং মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার ২৪৭ জন। বিশ্বের সব প্রান্তে এই ভাইরাসের আক্রমন হলেও কিছু দেশ এখনও রয়েছে করোনা মুক্ত।

জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশের সংখ্যা ১৯৩টি। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ১৮টি দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। এগুলোর বেশির ভাগ বিচ্ছিন্ন দ্বীপরাষ্ট্র। দেশগুলো হলো- কমোরোস, কিরিবাতি, লেসোথো, মার্শাল আইল্যান্ডস, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, উত্তর কোরিয়া, পালাউ, সামোয়া, সাও তোমে অ্যান্ড প্রিনসিপ, সলোমোন আইল্যান্ডস, দক্ষিণ সুদান, তাজিকিস্তান, টোঙ্গা, তুর্কমেনিস্তান, টুভালু, ভানুয়াতু ও ইয়েমেন।

যদিও বিশেষজ্ঞতের মতে, উত্তর কোরিয়া ও যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের মতো দেশগুলোতে সরকারিভাবে করোনা শনাক্তের সংখ্যা শূন্য বলা হলেও সেখানে আক্রান্ত হননি, এমনটা বলা যাবে না। তবে বিশ্বের সবচেয়ে কম লোক যাতায়াত করে, এমন ১০টি দেশের মধ্যে সাতটিই কোভিড–১৯-মুক্ত। দেশগুলোতে করোনা না পৌঁছানোর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্যে একটি হতে পারে দুর্গমতা। দ্বীপরাষ্ট্র হওয়ায় সেখানে লোকজনের যাতায়াত কম। ঘনবসতিও নেই। ফলে সেখানকার বাসিন্দারা এমনিতেই স্বেচ্ছাবিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করেন। তাই সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা সহজ হয় এসব দেশে।

তাছাড়া কিছু দেশের সরকার করোনা মোকাবিলায় আগেভাগে জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র নাউরু এর একটি। করোনা রোগী শনাক্ত না হলেও সেখানে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট লিওনেল এঙ্গিমিয়া। ১০ হাজার জনসংখ্যার বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ নাউরুতে পর্যটক খুবই কম যান। দেশটিতে বছরে পর্যটকের সংখ্যা মাত্র ১৬০ জন বলে জানিয়েছে একটি পর্যটন প্রতিষ্ঠান। লোক কম হওয়ায় সেখানে সামাজিক দূরত্বের দরকার না হলেও হাসপাতাল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম খুবই কম। তাই করোনা ঢুকে গেলে তা সামাল দেওয়া দেশটির জন্য দুরূহ বিষয়। তাই চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও ইরান থেকে আসা ভ্রমণকারীদের প্রবেশে আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটির সরকার।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত না হলেও নাউরুর মতো কিরিবাতি, টোঙ্গা, ভানুয়াতু ও অন্যান্য ছোট দ্বীপরাষ্ট্রেও একই ধরনের জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটির মেডিকেল স্কুলের ডিন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাবেক কমিশনার চিকিৎসক কলিন টোকোটোঙ্গা বলেন, এসব দ্বীপরাষ্ট্রতে খুব ভালো স্বাস্থ্যব্যবস্থা নেই। রাষ্ট্রগুলো খুবই ছোট ও দুর্বল। অনেক দেশে তো কোনো ভেন্টিলেটর নেই। যদি এসব অঞ্চলে করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটে, তাহলে পুরো জাতিই ধ্বংস হয়ে যাবে। এ ছাড়া এসব অঞ্চলের নাগরিকদের মধ্যে ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ ও বুকের সমস্যার হার অনেক বেশি। যাঁরা আগে থেকেই এসব রোগে আক্রান্ত, তাঁদের জন্য করোনাভাইরাস খুবই মারাত্মক।

যুক্তরাজ্যের লিভারপুল স্কুলের ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ পিটার ম্যাকফারসন বলেন, তথ্যপ্রমাণ বলছে, সব দেশেই করোনা পৌঁছে যাবে। তবে দ্বীপরাষ্ট্রগুলো যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা প্রশংসনীয়।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনের রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক অ্যান্ডি টাটেম বলেন, ‘আমাদের যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, তাতে আমি নিশ্চিত নই যে কোনো দেশ এই সংক্রামক রোগ থেকে রেহাই পাবে।’

তবে তিনি এটাও বলেছেন, নাউরুর মতো দেশগুলো লকডাউনের মতো যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা কাজ করতে পারে। তবে চিরকাল একই ফল না–ও আসতে পারে।

এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি