করোনার মধ্যেও বিয়ের হিড়িক!
প্রকাশিত : ১৪:১১, ১ মে ২০২০
করোনাজ্বরে স্তব্ধ গোটা বিশ্ব। থমকে গেছে চিরায়িত জীবন ব্যবস্থা। কিন্তু প্রাদুর্ভাবের আগে যেসব উৎসব, অনুষ্ঠানের দিন ঠিক করা হয়েছিল, তার সব কি বাতিল হয়েছে? না, চাইলেও সব বাতিল করা যায় না। তাই এমন পরিস্থিতিতেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিয়ে হয়েছে, হচ্ছে।
করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সংকট মোকাবিলায় নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, ক্যালিফোর্নিয়ার মত অঙ্গরাজ্যগুলোতে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে। তারপরও পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ক্যালিফোর্নিয়ায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন এক তরুণ যুগল।
গত ১৭ এপ্রিল টু ওয়ে রেডিওর মাধ্যমে গির্জার যাজকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করানোর জায়গাতেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে নেন তারা।
করোনা ইউরোপ ও আমেরিকায় ভয়াবহ রূপ নিলেও খুব বেশি একটা দাপট দেখাতে পারেনি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র রাশিয়ায়। তারপরও সেখানে সামাজিক শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
এর মধ্যদিয়েই সরকারের নির্দেশনা মেনে রাজধানী মস্কোতে বিয়ের আয়োজন করেছেন এক দম্পতি। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা সেরে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বেরিয়ে আসলে নবদম্পতিকে শারীরিক দূরত্ব মেনে অভিনন্দন জানায় অতিথিরা।
রাশিয়ায় বিয়ে
করোনায় হাবুডুবু খাচ্ছে ইউরোপের প্রাণকেন্দ্র জার্মানি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬৩ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে দেশজুড়ে। তারপরও থেমে নেই বিয়ের মত উৎসবের।
গত ২০ মার্চ দেশটির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরের টাউন হলের বাইরে এক দম্পতির বিয়ের সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতা হয়। চলমান সংকটের কারণে স্বল্প সংখ্যক অতিথির উপস্থিতিতে এ বিয়ের আয়োজন করা হয়।
জার্মানিতে বিয়ে
মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে যুদ্ধবাজ রাষ্ট্র ইসরাইয়েলেও থেমে নেই করোনার ছোবল। তবে, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে সেখানে। তারপরও নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
এমন অবস্থায়ও দেশটির জেরুজালেমে গত ২৭ এপ্রিল বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন এক দম্পতি। পরস্পরকে চুমু খেয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন এ যুগল।
প্রাণঘাতি করোনা খুব বেশি একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি প্রাচীন সভ্যতার অগ্রজ মিশরীয়দের জীবনে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ২৯২ জন। সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর মধ্যেও অনেকটা স্বাভাবিক সেখানকার জীবন ব্যবস্থা।
তাই করোনার সংকটে থেমে থাকেনি বিয়ের মতো উৎসবের। সম্প্রতি সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। কারফিউ জারির বার্তা পেয়েই একদিনে আগে বিয়ের কাজটা সেরে ফেলেন রাজধানীর কায়রোর এক দম্পতি।
কারফিউয়ে সারারাত আর ঘর থেকে বেরোনো যাবে না। তাই বিয়ের পর গাড়িবহর নিয়ে আনন্দে মেতেছে নবদম্পতির পরিবারও।
করোনা প্রথমদিকে হানা দেয় সুইজারল্যান্ডে। তবে, দেশটির সরকারের নেয়া পদক্ষেপ আর নাগরিকদের সচেতনতায় বর্তমানে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে সেখানে করোনা। চলমান এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতেও গত ১৪ এপ্রিল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন দেশটির এক সমকামী যুগল।
গোটা ইউরোপজুড়েই ছেয়ে গেছে করোনা। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় ইতালি। মৃত্যুপুরী দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৮ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়েছে করোনা। দেশজুড়ে লকডাউন চলছে। তবে, শিথিল করা হয়েছে অনেক কিছুই। বিশেষ করে উৎপাদন মুখী কারখানাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে।
এমন অবস্থাও গত ২৭ এপ্রিলে পেসকালায় বিয়ে সেরেছেন এক যুগল। করোনা থেকে বাঁচতে বিয়ের অনুষ্ঠানেও পাত্র-পাত্রী এবং অতিথিরা আসেন মাস্ক পড়ে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেও ভুলেননি অতিথিরা।
বেলজিয়ামে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা। এর মধ্যেও লকডাউন উপেক্ষা করে গত ১১ এপ্রিল বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করেছেন ব্রাসেলসের এক দম্পতি। পাত্র-পাত্রী মাস্ক না পরলেও অতিথিরা তা ভুল করেননি।
বেলজিয়ামে বিয়ে
যুদ্ধ বিধস্ত ইরাকে তেমনটা পাত্তা পায়নি করোনা। তারপরও বাড়তি সতর্কতায় দেশটির সরকার ও নাগরিকরা। তবে অনেকটা সচল স্বাভাবিক জীবনাচার। এর মধ্যেই কারবালায় এক যুগল খুব সতর্কতার সাথে নিজেদের বিয়ের কাজটা সেরে ফেলেন। যেখানে পাত্র নাক মুখ ঢেকেছেন মাস্কে, আর পদায় কপাল ঢেকেছেন পাত্রী।
আর বৈশ্বিক করোনার প্রকট দূর না হওয়া পর্যন্ত বিয়ের অপেক্ষা বাড়িয়েছেন মেক্সিক্যান এক যুগল। দেশটিতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনার থাবা। যার শিকার হয়েছেন এখন পর্যন্ত ১৯ হাজার ২২৪ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৮৫৯ জন। প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে।
এমন অবস্থায় গত ১০ এপ্রিল ওই যুগলের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। পারতেনও খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে আনুষ্ঠানিকতা সেরে নিতে। কিন্তু জীবনের এত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিনকে প্রিয়জনদের উপস্থিতিতে বরণ করতে চান বলে আগামী আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠান পিছিয়ে দিয়েছেন তারা।
এআই/
আরও পড়ুন