চাকরি হারিয়েছেন চীনের ৮ কোটি মানুষ
প্রকাশিত : ১৯:৩০, ৮ মে ২০২০
করোনার মহামারি চীনের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। সংকুচিত হয়ে গেছে দেশটির চাকরির বাজার। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটির সরকারি তথ্যে বেকারত্বের সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয় না। প্রকৃত সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এ দেশটিতে ইতোমধ্যেই বেকার হয়েছেন অন্তত আট কোটি মানুষ। শিগগিরই এ তালিকায় যোগ হতে যাচ্ছেন আরও ৯০ লাখের মতো। তবে মোট কতজন চাকরিচুত্য হয়েছেন তার প্রকৃত তথ্য দিচ্ছেনা দেশটির কর্তৃপক্ষ। খবর সিএনএন’র।
চীনের সরকারি হিসাবে, গত কয়েক বছরে সেখানে বেকারত্বের হার চার শতাংশের কাছাকাছি থেকে পাঁচ শতাংশের ওপর উঠেছে মাত্র। তবে এই পরিসংখ্যানে কেবলমাত্র শহুরে চাকরিজীবীদেরই হিসাবে ধরা হয়, গ্রামাঞ্চলের শ্রমিকরা এতে অন্তর্ভুক্ত নেই।
তারপরও চীনের সরকারি হিসাবেই করোনা মহামারিতে তাদের বেকারত্বের হার বৃদ্ধি দেখা গেছে যথেষ্ট। গত মার্চে চীনে বেকারত্বের হার ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, এর আগের মাসেই তা ছিল রেকর্ড ৬ দশমিক ২ শতাংশ। সিএনএন বিজনেসের হিসাবে, চীনের সরকারি এই তথ্যমতে অন্তত ২ কোটি ৭০ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
চীনের বাজারে চাকরি খুঁজতে অভ্যস্ত ছিলেন ওয়াং। ২৬ বছর বয়সী তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এই কর্মী গত বছরের পুরোটাই এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানিতে চাকরি করতে বাধ্য হন। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য সংঘাতের ডামাডোলে চীনের প্রযুক্তিখাত এক ধরনের অস্থিরতায় পড়ে। এবং পুঁজিবাজারেও শেয়ারের দর উত্থান পতনে থাকে। চীনের সরকারি হিসাবে, গত কয়েক বছরে সেখানে বেকারত্বের হার চার শতাংশের কাছাকাছি থেকে পাঁচ শতাংশের ওপর উঠেছে মাত্র। তবে এই পরিসংখ্যানে কেবলমাত্র শহুরে চাকরিজীবীদেরই হিসাবে ধরা হয়, গ্রামাঞ্চলের শ্রমিকরা এতে অন্তর্ভুক্ত নেই।
তারপরও চীনের সরকারি হিসাবেই করোনা মহামারিতে তাদের বেকারত্বের হার বৃদ্ধি দেখা গেছে যথেষ্ট। গত মার্চে চীনে বেকারত্বের হার ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, এর আগের মাসেই তা ছিল রেকর্ড ৬ দশমিক ২ শতাংশ। সিএনএন বিজনেসের হিসাবে, চীনের সরকারি এই তথ্যমতে অন্তত ২ কোটি ৭০ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
অনেকে বৃহৎ কোম্পানি সীমিত পরিসরে হলেও কর্মী ছাঁটাই করে। ওয়াং সর্বশেষ চাকরি করেছেন বেজিংভিত্তিক একটি ইন্টারনেট কোম্পানিতে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে কোম্পানিটি ওয়াংকে চাকরীচ্যুত করে। গত বছরের দুঃসময়ের পর যখন সামনে সুদিনের আশা করেছিলেন ঠিক তখনই পরিস্থিতি যে অসহনীয় হয়ে উঠবে তা ছিল ওয়াংয়ের ধারণার বাইরে।
সিএনএন বিজনেসকে টেলিফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, গতবছর যেন জাহান্নামে ছিলাম। কিন্তু ২০২০ সাল তার চাইতেও খারাপ। করোনাভাইরাস আমাদের অর্থনীতিকে সামনে থেকেই শক্ত আঘাত করেছে।
নিজের পুরো নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি ওই সাক্ষাৎকার দেন। নাম প্রকাশ করা হলে পরিচিত বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের কাছে তিনি যে বেকার সেটা প্রকাশ হয়ে যাবে, ফলে তারা দুশ্চিন্তা করবেন- এমন চিন্তা থেকে শুধু ওয়াং নন, চীনের অনেকেই চাকরি হারানোর পরেও তা গোপন রেখেছেন।
এছাড়াও, জনসম্মুখে বেকারত্বের কথা প্রকাশ করলে পরবর্তীতে চাকরি পাওয়া অসম্ভব হবে এমন আশঙ্কাতো আছেই।
তবে লুকোছাপা যতোই চলুক, করোনার মহামারি চলতি বছরের বেশ কয়েক সপ্তাহ চীনা অর্থনীতির বিশাল চাকাকে প্রায় থামিয়ে দিয়েছিল। এর ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশটিতে কোটি কোটি মানুষ কর্মসংস্থান হারান।
ঠিক কত মানুষ এখন সেখানে কর্মহারা তার সঠিক তথ্য পাওয়া খুব মুশকিল। বেজিং প্রকাশিত সরকারি তথ্য খুবই অস্বচ্ছ বলে অভিযোগ রয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের বিশেষজ্ঞদের।
তবে সমালোচনা থাকলেও সরকারি তথ্য সাম্প্রতিক সময়ে বেকারত্বের হার বৃদ্ধির সূচনা দেওয়া হচ্ছে। মার্চে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। যা আগের মাসের ৬ দশমিক ২ শতাংশের রেকর্ড হারের চাইতে কিছুটা কম। অতি সাম্প্রতিক তথ্যানুসারে শুধু গত মার্চেই দুই কোটি ৭০ লাখ লোক চাকরি হারিয়েছেন। চীনের সরকারি তথ্যকে নিজস্ব এক হিসাবে গণনা করে বার্তা সংস্থা সিএনএন এই সংখ্যা তুলে ধরে। এর ফলে মার্চ নাগাদ মোট ৮ কোটি লোক কর্মসংস্থান হারিয়েছে বলেও জানানো হয়।
চলতি বছরই দেশটিতে রেকর্ড সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী গ্রাজুয়েট হয়ে বের হচ্ছেন। এ বছর এদের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে অন্তত ৮৭ লাখ। ফলে শিগগিরই চীনে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনার ধাক্কায় এ বছর এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হচ্ছে চীনে। এছাড়া ১৯৭৬ সালের পর প্রথমবার সংকুচিত হচ্ছে দেশটির অর্থনীতি। চীনা ইনস্টিটিউট ফর এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চ ও ঝাওপিন ডটকমের (চীনের বৃহত্তম চাকরির সন্ধানদাতা ওয়েবসাইট) জরিপে দেখা গেছে, দেশটিতে গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনায় ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসে চাকরির ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে অন্তত ২৮ শতাংশ। বিপরীতে চাকরিপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় নয় শতাংশ।
এমএস/এসি
আরও পড়ুন