উত্তর কোরিয়াকে চীনের সাহায্যের প্রস্তাব, উদ্দেশ্য কী
প্রকাশিত : ২০:৪৩, ৯ মে ২০২০
করোনাভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন উত্তর কোরিয়াকে সহায়তা করতে চায় চীন। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং আনের কাছ থেকে পাওয়া এক বার্তার উত্তরে চীন একথা বলেছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে কোভিড নাইনটিনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীন আপাতদৃষ্টিতে যে সাফল্য দেখিয়েছে তার জন্য চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-কে অভিনন্দন জানিয়ে শুক্রবার কিম জং আন একটি বার্তা পাঠিয়েছেন। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে এ খবর জানানো হয়।
উত্তর কোরিয়ার সরকার এখনও বলছে যে সে দেশে একজনও আক্রান্ত হয়নি, কিন্তু বিশ্লেষক প্রশ্ন তুলছেন সেটা আদতেই সম্ভব কি না। দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খুবই ভঙ্গুর অবস্থায় এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করেন কোভিড নাইনটিনের প্রাদুর্ভাব সেখানে খুব সামান্য পরিসরেও ঘটলেও দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মারাত্মক চাপের মুখে পড়বে।
চীনা সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শি উত্তর কোরিয়ার নেতাকে মৌখিকভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন চীনে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় কিম-এর সমর্থনের জন্য তিনি কৃতজ্ঞ এবং এই মহামারির পটভূমিতে চীনের প্রতিবেশি ও মিত্র দেশটির মানুষের স্বাস্থ্য সম্পর্কে তিনি ব্যক্তিগতভাবে দৃষ্টি দিতে আগ্রহী।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে চীন উত্তর কোরিয়াকে "এই সঙ্কট মোকাবেলার জন্য তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা দিতে রাজি আছে।"
সম্প্রতি কিমকে বিশ দিন বাইরে কোথাও দেখা যায়নি এবং দেশটিতে বছরের অন্যতম সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান তার পিতামহের জন্মবার্ষিকী পালনের অনুষ্ঠানে তার অনুপস্থিতি নানা ধরনের জল্পনার জন্ম দিয়েছিল।
কোন কোন সংবাদ মাধ্যমের খবরে দাবি করা হয় তিনি "গুরুতর অসুস্থ", কেউ কেউ এমনকী জানায় তিনি মারা গেছেন। এরপর হঠাৎই দোসরা মে একটি সার কারখানার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তাকে কার্যত সুস্থ শরীরে হাজির থাকতে দেখা যায়।
বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় গোয়েন্দা দপ্তর থেকে দেশটির সংসদীয় কমিটিতে জানানো হয় যে মি. কিম-এর স্বাস্থ্য নিয়ে যেসব গুজব ছড়িয়েছে তার সত্যতার পক্ষে কোন তথ্যপ্রমাণ নেই।
"তাকে প্রকাশ্যে দেখা না গেলেও তিনি স্বাভাবিকভাবেই তার দায়িত্ব পালন করছেন," দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদীয় কমিটির একজন সদস্য কিম বিয়ুইং-কি সাংবাদিকদের বলেন।
দেশটির আইন প্রণেতারা বলছেন উত্তর কোরিয় নেতার অনুপস্থিতির সাথে কোভিড নাইনটিন প্রাদুর্ভাবের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে, যেটা পিয়ংইয়ং কর্তৃপক্ষ জানায়নি।
উত্তর কোরিয়া সংক্রমণহীন - কতটা বাস্তব?
বিবিসির বিশ্লেষক সিলিয়া হ্যাটন বলছেন উত্তর কোরিয়া গত কয়েক মাস ধরেই বলে আসছে কোভিড নাইনটিনের কোন সংক্রমণ দেশটিতে দেখা যায়নি।
উ. কোরিয়া ছিল প্রথম দেশ যারা এই ভাইরাস ছড়ানোর শুরুতেই সবরকম ভ্রমণ স্থগিত করে দেয়। অসমর্থিত সূত্রের খবর ছিল চীনের সাথে উত্তর কোরিয়ার যে দীর্ঘ সীমান্ত আছে সেখান দিয়ে চীন থেকে কেউ দেশটিতে ঢোকার চেষ্টা করলে তাকে গুলি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে।
কিন্তু এই সীমান্ত পুরোপুরি সিল করে দেয়া বাস্তব অসম্ভব, কারণ সিলিয়া হ্যাটন বলছেন উত্তর কোরিয়ার গোপন অর্থনীতি সীমান্তপথে চীনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অবৈধ ব্যবসার ওপরই ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
তবে তিনি বলছেন, উত্তর কোরিয়াকে সাহায্য করতে চাওয়ার পেছনে চীনের কিছু কারণও রয়েছে। বাস্তবতা হল, চীনকে সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখতে হলে, কোভিড নাইনটিন প্রতিবেশি দেশ থেকে ছড়ানোর সব সম্ভাবনা ঠেকাতে হবে।
অন্যদিকে, উত্তর কোরিয়ায় ভাইরাস ছড়ালে সেখানে অবস্থা কি দাঁড়াতে পারে তা নিয়ে চীনা কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এমনই ভগ্নদশা যে এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তা কিম জং আনের ক্ষমতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
কয়েক দশক ধরে উত্তর কোরিয়ার জন্য সবচেয়ে বড় সাহায্য দানকারী দেশ চীন, এবং চীন চায় কিম যাতে ক্ষমতায় থাকে। কারণ, মিস হ্যাটনের মতে, তার জায়গায় ক্ষমতায় অন্য কেউ এলে সেটা চীনের জন্য বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে। ঘরের দোরগোড়ায় কোন সমস্যা চীন চায় না।
বিশ্ব রাজনীতির স্বার্থেও চীন উত্তর কোরিয়াকে পাশে পেতে চায়। দুই দেশের কূটনৈতিক হৃদ্যতা আন্তর্জাতিক মানচিত্রে চীন ও উত্তর কোরিয়ার আপাত ঘনিষ্ঠতার একটা চিত্র তুলে ধরে।
উত্তর কোরিয়া আমেরিকান সাহায্যের প্রকাশ্য প্রস্তাবে সেভাবে সাড়া দেয়নি। দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনা থমকে গেছে। এই পটভূমিতে উত্তর কোরিয়া যদি চীনের সাহায্য গ্রহণ করতে রাজি হয়, তাহলে চীন বিশ্বকে দেখাতে পারবে দু:সময়ে উত্তর কোরিয়ার "প্রকৃত বন্ধু" একমাত্র চীন।
এসি
আরও পড়ুন