কৃষিতে প্রযুক্তি
স্মার্টফোনে পৌঁছে যাবে মাছ-মুরগি-গরু পালনের সেবা
প্রকাশিত : ১৬:১৮, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ২১:৩৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
উবার, পাঠাও এবং ওভাইয়ের মতো কৃষকদের জন্য স্মার্টফোন সেবা চালু করতে যাচ্ছে এসিআই এগ্রো লিংক লিমিটেড। এ সেবা কৃষকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে শিক্ষিত কৃষক, বিক্রয় প্রতিনিধি ও ডিলার নিয়োগ করবে প্রতিষ্ঠানটি। আর এ সেবা গ্রহণ করে কৃষকরা ঘরে বসেই জানতে পারবে তার পুকুর মাছ চাষের জন্য উপযোগী কি না, পুকুরে কি পরিমাণ মাছ চাষ করতে হবে, মাছের কখন ক্ষিদে পেয়েছে এবং পুকুরে অক্সিজেনের পরিমাণ কেমন।
আবার কোন মুরগি ডিম দিচ্ছে, কোনটি ডিম দিচ্ছে না তাও জানা যাবে এই অ্যাপস ব্যবহার করে। শুধু তাই নয়, গরু-মহিষের ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি দারুণ কাজে আসবে। জানা যাবে, কোন গরু অসুস্থ্য আবার কোনটি সুস্থ। কি খাওয়ালে গরু মোটাতাজা হবে, বেশি দুধ দিবে। এ সব সেবাই পাওয়া যাবে স্মার্টফোন সেবায়। একটি অ্যাপসের মাধ্যমে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানিয়েছেন এসিআই এগ্রোলিংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফএইচ আনসারি। আজ বুধবার একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইনের প্রতিবেদক মোহাম্মদ জুয়েল।
একুশে টেলিভিশন: প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কৃষিক্ষেত্রে বড় ধরণের কোন পরিবর্তন আসবে বলে আপনি মনে করেন কি?
ড. এফএইচ আনসারী: বর্তমান সরকারের নানা প্রচেষ্টায় ডিজিটাল সেবা এখন গ্রামে-গঞ্জে পৌঁছে গেছে। আর এতে দেশের উন্নয়নও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তির ছোঁয়া না থাকায়, এ খাতটি বেশিদূর এগোতে পারেনি। চীন, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ যখন কৃষিক্ষেত্রে অবদানের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। এর অন্যতম কারণ আমাদের প্রযুক্তির অভাব। প্রযুক্তিকে কাজে না লাগাতে না পারায় আমাদের কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই অনেকেই কৃষিখাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তবে আশার কথা হলো, এখন শিক্ষিতদের একটা অংশ কৃষিখাতের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। এরা যদি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যথাযথভাবে কৃষিকাজ চালিয়ে যান, তাহলে নিঃসন্দেহে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কৃষিক্ষেত্রে বড় ধরণের পরিবর্তন আসবে।
একুশে টেলিভিশন: আপনারা কোন কোন প্রযুক্তি আনতে যাচ্ছেন? সেগুলো সম্পর্কে বলুন-
ড. এফএইচ আনসারী: আমরা প্রধানত কৃষিতে সব ধরণের সেবাই দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে স্মার্টফোনের মাধ্যমে দেওয়া সেবা প্রযুক্তিটি সম্পূর্ণ নতুন। উবার, পাঠাও এবং ওভাইয়ের মতোই ভ্রাম্যমাণ সেবা দিবে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ধরণের চিপস ব্যবহার করে খামারের মুরগি, পুকুরের মাছ, গরু-ছাগল-মহিষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যাবে ওই অ্যাপসের মাধ্যমে।
পুকুরের অবস্থা নিরীক্ষণ: স্মার্টফোনে একটি অ্যাপস থাকবে। ওই অ্যাপসের মাধ্যমে পুকুরের অবস্থা যাচাই করা যাবে। আর পুকুরের মধ্যে থাকবে একটি সেন্সর ও চিপস। এর মাধ্যমে পুকুরের পানির অবস্থা নিরীক্ষণ করা যাবে। দেখা যাবে পুকুরে কি পরিমাণ অক্সিজেন আছে। মাছের কি পরিমাণ খাদ্য প্রয়োজন। আর সে অনুসারেই মাছকে খাদ্য দেওয়া হবে। পুকুরের মাঝখানে একটি ড্রাম থাকবে। ড্রামের নিচে একটি ঢাকনা থাকবে। ওই সেন্সর আর চিপসের মাধ্যমে দেখা যাবে, মাছের কখন খাবার প্রয়োজন। আবার খাওয়ার মাঝখানে কোন খাবার প্রয়োজন আছে কি না। যদি মাছের ক্ষিদে মিটে যায়, তাহলে ঘরে বসে ওই অ্যাপস ব্যবহার করে ঢাকনা বন্ধ করে দেওয়া যাবে। আবার যখন খাদ্য দেওয়া প্রয়োজন হবে তখন ওই অ্যাপস ব্যবহার করে ঢাকনা খুলে দেওয়া হবে।
মুরগির ডিম নিরীক্ষণ: ধরুণ কোন মুরগি ডিম দিচ্ছে, আর কোনটি দিচ্ছে না তা এমনিতে জানা সম্ভব না। তখন এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বুঝা যাবে কোন মুরগি ডিম দিচ্ছে আবার কোনটি দিচ্ছে না। তখন এই অ্যাপস ব্যবহার করে কোন পশু চিকিৎসককে ডাকতে পারবে ওই কৃষক। এতে সহজেই কোন মুরগি ডিম দিচ্ছে না, তা শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
গরু-মহিষ: বাংলাদেশে গরু-মহিষের চাহিদা প্রচুর। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের দেশে বাচ্চা জন্মদানের সময় অনেক গরু মারা যায়। আবার অনেক সময় বাছুরও মারা যায়। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা যাবে। তখন কেন্দ্রীয়ভাবে গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে এর ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দেওয়া হবে, গরু কোন সমস্যায় ভোগছে। গরুর কি চিকিৎসা দরকার। এ ছাড়া কৃষিতে ব্যবহৃত নানা যন্ত্রপাতি পেতে এই অ্যাপস ব্যবহার করে অর্ডার করতে পারবেন তারা।
একুশে টেলিভিশন: অনেকগুলো কৃষিখাতের মধ্যে কোন খাতটিকে আমাদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত?
ড. এফএইচ আনসারী: ধান চাষ যদিও আমাদের প্রধান কৃষি উপাদান। তারপরও এ খাতে লাভবান হতে হলে, আমি বলবো উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ফলের চাষ, ছাগল-গরু-মহিষের খামার, মৎস চাষ, পোল্ট্রি পালন, শাক-সবজি চাষের দিকে নজর দেওয়া উচিত। অল্প সময়ের মধ্যে অধিক লাভ পেতে হলে অবশ্যই কৃষিক্ষেত্রের এ বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিতে হবে।
একুশে টেলিভিশন: অভিযোগ আছে, কৃষকরা সবসময় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। এ ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কি থাকবে?
ড. এফএইচ আনসারী: এ কথা সত্য যে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে এটাও সত্য তাদের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ রয়েছে। দেখা গেছে, একই এলাকার কৃষকরা একেক মৌসুমে সবাই একই ধরণের ফসলের চাষ করেন। তাই বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি ফসল থাকায় ফসলের মূল্য যায় কমে। এতে অনেক সময় কৃষকরা ফসল পেতে যে টাকা খরচ করেন, অনেক সময় সে টাকাও তুলতে পারেন না। তাই কৃষকদের উচিত ‘সোস্যাল এগ্রিকালচারের’ দিকে যাওয়া। স্যোসাল এগ্রিকালচার হলো এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে কৃষকরা সবাই ভিন্ন ভিন্ন ধরণের ফসলের চাষ করবে। এতে বাজারে একই ধরণের ফসল কম থাকায় দামও বাড়বে। কৃষকও লাভবান হবে।
একুশে টেলিভিশন: তরুণদের কৃষিক্ষেত্রে যুক্ত করার জন্য সরকারের কি কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
ড. এফএইচ আনসারী: কৃষিখাতকে বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে বেসরকারিকরণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার বেশ তরুণদের প্রশিক্ষণ দিতে পারে। মূলত তরুণদের যুক্ত করতে দরকার তহবিলের। সরকার যদি তহবিল গঠন করে সার, বীজ, আমদানিকৃত খাবারে ভর্তুকি দেয় তাহলে এ খাতে উদ্যোক্তারা ভাল করতে পারবে। তবে সবচেয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আছে, তা হলো ব্যাংকের ঋণ। সহজ শর্তে ও কম সুদে যদি উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই এই খাতে তরুণদের আগ্রত বাড়বে।
একুশে টেলিভিশন: আমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ
ড. এফএইচ আনসারী: একুশে টেলিভিশনকেও ধন্যবাদ।
আরও পড়ুন