ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৭ নভেম্বর ২০২৪

‘মেধাবী-যোগ্যদের চাকরির অভাব নেই’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৪৩, ৬ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৬:০৮, ৭ মার্চ ২০১৮

ড. এম রেজওয়ান খান

ড. এম রেজওয়ান খান

উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেই সমস্যা নয়। অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে, যেগুলো মানসম্মত উচ্চশিক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। রয়েছে শিক্ষক সংকটও। অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খাতা না দেখে নম্বর দেন এমন নজিরও রয়েছে। কাজেই অনিয়ম ও দুর্নীতি সবখানেই আছে। এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তাই  উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে সরকারকে আরও সহায়ক ভূমিকা রাখতে হবে। এমনটাই মনে করেন শিক্ষাবিদ ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এম রেজওয়ান খান। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১৯৮০ সালে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি এবং পরবর্তীতে এমএসসি করেন। ১৯৮৬ সালে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি করেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি সৌরশক্তি নিয়ে গবেষণা করছেন। 

সম্প্রতি একুশে টিভি অনলাইনের সঙ্গে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার মান, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড, তরুণ শিক্ষার্থীদের চাকরি বাজারসহ নানা বিষয়ে তার কথা হয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।

একুশে টিভি অনলাইন : শিক্ষার মানোন্নয়নে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কতটা ভূমিকা রাখছে?

ড. এম রেজওয়ান খান : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেখানে সরকারের সহায়তা দিয়ে বিশাল অবকাঠামো তৈরি হয়; যা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এর ওপর সরকারের জুড়ে দেওয়া কর-ভ্যাট পরিশোধ করতে হচ্ছে। রয়েছে জমির সংকট ও চড়া মূল্য। এসব বিষয়ে সরকারের সহায়তা না থাকায় নানা সংকট নিয়ে চলতে হচ্ছে। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নেই, মানসম্মত শিক্ষক সংকট এবং মানসম্মত শিক্ষা নেই।  আপনি বলছেন অনেকেই সনদ বাণিজ্য করছে। সরকারের কাছে যদি এমন প্রমাণ থাকে কারা শিক্ষার নামে সনদ বাণিজ্য করছে তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিক।

শিক্ষার মানোন্নয়নে ধরে রাখতে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভৃমিকা পালন করছে। কাজেই ঢালাওভাবে এমন দোষারোপ করা উচিৎ নয় যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা হয় না। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যা পাবলিক বিশ্ববিদ্যাল থেকেও বেশি মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে। বর্তমানে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি মেধা ও যোগ্যতার দিক থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে যাচ্ছে। তারা পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও চাকরির বাজারের নিজেদের মেধার প্রমাণ করছে। তাই এটিকে মাথায় রেখে শিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

একুশে টিভি অনলাইন : চাকরি বাজারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ কোনগুলো?

ড. এম রেজওয়ান খান :  আসলে চাকরির বাজারে বেসরকারি ও পাবলিক বলে কথা নেই। যোগ্যতা যার আছে সে চাকরি পাবে এটা স্বাভাবিক। বেসরকারি থেকে পড়ে অনেকেই বিদেশে চাকরি জন্য চলে যাচ্ছেন। তবে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর কদর সবখানে রয়েছে। চাকরির ক্ষেত্রে কিছু প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উল্লেখ করে দেয় এটা বেআইনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ছে বলে সে ভালো পারবে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে এটা মুখ্য বিষয় নয়। তার যোগ্যতা কতটুকু আছে এটা বড় বিষয়।

একুশে টিভি অনলাইন : শিক্ষার মান বাড়াতে সরকারকে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?

ড. এম রেজওয়ান খান : উচ্চশিক্ষাসহ শিক্ষার সামগ্রিক মানোন্নয়নে সরকার ইতোমধ্যে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রত্যেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকার পর্যবেক্ষণ করছে। এখন যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ভালো হতে চায়- তাদেরকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যাদের চেষ্টা নেই তাদের তো বারবার সুযোগ দেওয়া যাবে না।

তবে কিছু সমস্যা রয়েই গেছে তা হলো-  বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনও পিএসডি প্রোগ্রাম চালু করতে দেওয়া হয়নি। সরকারের ধারণা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও পিএসডি প্রোগ্রাম চালু করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। এছাড়া সরকারি যেসব গবেষণা ফান্ড আছে তা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত। বিভিন্ন ধরনের কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত। বাজারমুখী শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। 

একুশে টিভি অনলাইন : দেশে  শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর তুলনায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আছে কতটা? 

ড. এম রেজওয়ান খান :  কিছু সীমাবন্ধতা আছে। আমাদের দেশে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে কিন্তু তেমন দক্ষ মানুষ নেই। পড়াশোনা শেষ করে কিছু সময় নিলেও চাকরি সবার হয়ে যাচ্ছে। দক্ষ ও মেধাবীরা কিন্তু বেকার থাকে না। পড়াশোনা শেষ করে অনেকেই ভালো ভালো কোম্পানিতে চাকরি পাচ্ছে। অনেকেই নিজেই কোনো কোম্পানি খুলে প্রতিষ্ঠা লাভের চেষ্টা করছে। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা বেশি। বাংলাদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরিতে বেশি অবদান রাখছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

একুশে টিভি অনলাইন : দেশের চাকরির বাজারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থীদের দখল আছে কতটা?

ড. এম রেজওয়ান খান : চাকরির বাজারে বড় অংশ জুড়ে আছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ব্যবসা ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সবচেয়ে বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

একুশে টিভি অনলাইন : দেশে  তথ্য-প্রযুক্তি প্রসারে কি করণীয় বলে আপনি মনে করেন। 

ড. এম রেজওয়ান খান : তথ্য-প্রযুক্তি প্রসারে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। এমনকি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন ধরনের স্বল্পমেয়াদী কোর্সের ব্যবস্থা রয়েছে। যেকোনো শিক্ষার্থী এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। এমনকি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ নিলে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে দেওয়া হয়।

 একুশে টিভি অনলাইন : বর্তমান কোন কোন বিষয় পড়তে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি?

 ড. এম রেজওয়ান খান : বর্তমানে  তথ্য-প্রযুক্তি ও ব্যবসা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি। এর মূল কারণ  তথ্য-প্রযুক্তি ও ব্যবসা খাতে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে।

একুশে টিভি অনলাইন: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ড. এম রেজওয়ান খান :  একুশে টিভি অনলাইনকেও ধন্যবাদ।

এসএইচ/ এআর


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি