তিন সূচক-ই ধরে রাখতে পারবে বাংলাদেশ: মির্জ্জা আজিজ
প্রকাশিত : ১৯:১১, ১৯ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১০:০৯, ২৪ মার্চ ২০১৮
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের শর্ত হিসেবে যে সূচকগুলোর রয়েছে তার তিনটিতেই নির্ধারিত মান অর্জন করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) সম্প্রতি এমন ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে নির্দিষ্ট সময়েই উন্নয়নশীল দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। যা দেশের জন্য বড় একটি অর্জন।
উন্নয়নশীল দেশ হলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ বিষয়ে জানতে একুশে টেলিভিশন অনলাইন মুখোমুখি হয় অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের।
তিনি বলেন, এটা আমাদের বড় অর্জন। যে তিনটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে আমরা এটা অর্জন করতে পেরেছি। আমি মনে করি সে তিনটি সূচকের কোনটিতে বাংলাদেশের অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ সবকটি সূচকই ধরে রাখতে পারবে বাংলোদেশ। পাঠকদের উদ্দেশ্যে সাক্ষাৎকারটির হুবহু তুলে ধরা হলো।
প্রথমে আমাদের মনে রাখতে হবে যে এলডিসি থেকে উত্তোরণের তিনটি ক্রাইটেরিয়া আছে। যার মধ্যে কিছু সাব ক্রাইটেরিয়াও আছে। তিনটি ক্রাইটেরিয়ার একটি হচ্ছে পার ক্যাপিটা বা ন্যাশনাল ইনকাম (মাথাপিছু আয়)। দ্বিতীয়টি হলো মানবসম্পদ সূচক। এটির মধ্যে আবার ৪ থেকে ৫টি উপসূচক আছে। যেগুলোর গড় দিয়ে একটা হিউম্যান অ্যাসেসমেন্ট বের করা হয়। তৃতীয়টি হচ্ছে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা। এখানে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে এর সবগুলো সুচকেই আমরা সফলতা দেখিয়েছি। তবে তিন বছর অন্তর আরো দুটি রিভিউ হবে বাংলাদেশের জন্য। যার একটি হবে ২০২১ সালে। অপরটি হবে ২০২৪ সালে। এ সময়ে আমরা সূচকগুলিতে সক্ষমতা দেখাতে পারলে আমাদের উন্নয়নশীল দেশ ঘোষণা করা হবে।
তবে সূচকগুলোতে যে আমরা সক্ষমতা দেখিয়েছি। এটা আমাদের বড় অর্জন। ধারাবাহিকভাবে আমাদের দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা বেশ ভালো করছি। যার ফলে সহাস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাও আমরা অর্জন করতে পেরেছি। তবে মানব সম্পদের একটি উপসূচকের একটিতে আমরা পিছিয়ে আছি সেটা হলো মাতৃমৃত্যুর হার। ইকোনমিক ভালনারেবল ইনডেক্সে আমাদের ৩২ বা তার নিচে থাকতে হবে। আমাদের অবস্থান হলো ২৫ দশমিক ২। সব মিলিয়ে আমি মনে করি তিনটি সূচকের কোনটিতে বাংলাদেশের অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা আমি দেখছি না।
তবে এ ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। মাথাপিছু আয় যদি ভারত, চীন ও ভিয়েতনাম বলি তাদের তুলনায় আমাদের মাথাপিছু আয় কম আছে। এ ক্ষেত্রে ২০২১ সালের মধ্যে প্রত্যেক বছরে যে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আসবে তা অনেকটা অবাস্তব। কারণ আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ হয়নি।
আর একটা চ্যালেঞ্জ হলো দারিদ্র বিমোচন এবং দারিদ্র দূরীকরণ। এখানেও আমাদের বড় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে ঠিক-ই। কিন্তু বার্ষিক দারিদ্র হ্রাসের হার কমে যাচ্ছে। গত ২০০২ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত প্রত্যেক বছর দারিদ্র বিমোচনের হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল। পরবর্তী ২০০৫ থেকে ২০১০ পর্যন্ত তা ১ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসছিল। ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত এটা আবার ১ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসছিল। এখনও আমাদের প্রায় ৪ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে। দারিদ্র বিমোচনের এ হার আরো বাড়াতে হবে। এর জন্য আমাদের বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।
আর একটা হলো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি। এক্ষেত্রে ২০০৮ ও ২০০৯ সালে বাজেট ও জাতীয় উৎপাদনের আনুপাতিকহার হিসেবে এ ক্ষেত্রে বরাদ্দ আস্তে আস্তে কমে গেছে।যদিও টাকার অঙ্ক বেড়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তাই আমি মনে করি সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ আরো বাড়ানো উচিত। এর সঙ্গে সঙ্গে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মনুষগুলোর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। কর্মমুখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়া আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে-অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা। এটাতে আমাদের বেশ অগ্রগতি আছে। তবে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা দূর করতে আরো উদ্যোগ নিতে হবে। বহুমখী পণ্যের উৎপাদন ও রফতানির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদানও ভালো। উপকূলীয় অঞ্চলে আমাদের বন্যা বা প্রাকৃতিক দূর্যোগ হলে সেগুলো মোকাবেলার সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে।
অনুলিখন: রিজাউল করিম
/ এআর /
আরও পড়ুন