ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

একইসঙ্গে মাতৃত্ব রক্ষা ও আইনজীবী হয়ে ওঠার গল্প

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ১৯:২০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১৯:৪১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১

তরুণ আইনজীবী অ্যাড. মাহিয়া মেহজাবিন রিফা

তরুণ আইনজীবী অ্যাড. মাহিয়া মেহজাবিন রিফা

একইসঙ্গে মাতৃত্ব রক্ষা ও একজন আইনজীবী হিসেবে বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন রংপুরের মেয়ে মাহিয়া মেহজাবিন রিফা। মাতৃত্বকালীন কঠিন সময়ও তার আইনজীবী হওয়ার স্বপ্নকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। 

একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে নিজের লালিত স্বপ্ন পূরণের কথা বলতে গিয়ে রিফা বলেন, ছোটবেলা থেকেই তুখোড় আইনজীবী হওয়ার তীব্র ইচ্ছাই তাকে এই বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে প্রেরণা দিয়েছে। সেইসঙ্গে আইনজীবী স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সহযোগিতার কথা জানাতেও ভোলেননি তিনি।

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কৃতি শিক্ষার্থী মাহিয়া মেহজাবিন রিফা রংপুর বিভাগের সিটি কর্পোরেশন এলাকার অন্তর্ভুক্ত ৩২নং ওয়ার্ডের রফিকুল ইসলামের একমাত্র কন্যা। তার পিতা রফিকুল ইসলাম একজন মৌসুমী ব্যবসায়ী এবং মা লাকি বেগম একজন গৃহিনী। একমাত্র ছোট ভাই এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। 

তিনি ২০১১ সালে রংপুর বিভাগের তালুক তামপাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও রংপুর মডেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অতঃপর ছোটবেলা থেকেই তুখোড় আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য নিয়ে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আইন বিভাগে অধ্যয়ন শুরু করেন এবং দীর্ঘ চার বছর মেয়াদি এলএলবি অনার্স ও এক বছর মেয়াদী এলএলএম (আইন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি) সম্পন্ন করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অধীনে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য নিবন্ধিত হন। এবং বার কাউন্সিল প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন। 

এর কিছুদিন পর সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী মোঃ ইমরান হোসেনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রিফা। যখন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়, তখন তিনি ছয় মাসের সন্তানসম্ভবা ছিলেন। এই মাতৃত্বকালীন কঠিন সময়ও তার আইনজীবী হওয়ার স্বপ্নকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। এমতাবস্থায় ছোটবেলা থেকেই তুখোড় আইনজীবী হওয়ার তীব্র ইচ্ছা থেকে এই কঠিন সময়ের মধ্য দিয়েই তিনি তার প্রস্তুতি চালিয়ে যান এবং বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। 

একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে এক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে মাহিয়া মেহজাবিন জানিয়েছেন, তার সেই কঠিন সময়ের কথা। রিফা বলেন, খুব একটা সহজ ছিল না আমার সেই সময়ের পথ চলা। তবে এই কঠিন সময়টা আমি জয় করতে পেরেছি শুধুমাত্র আমার স্বামী এবং আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের  সহযোগিতায় ও অনুপ্রেরণায়। 

রিফা আর বলেন, ঘোরতর অন্ধকার রাতের পর যেমন উজ্জ্বল দিবসের সূচনা হয়, ঠিক তেমনিভাবে সেই কঠিন সময় পার করার পর মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে একে একে আমার কাছে দুইটি সুসংবাদ আসে। যার প্রথমটি ছিল- গত ২০ এপ্রিল তারিখে আমার কোল আলো করে আসে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। যার নাম ‘মারিয়াম আল-আকসা’। আর দ্বিতীয়টি ছিল- তার ঠিক এক মাস পর ২৯ মে বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ফলাফল। 

মাহিয়া রিফা জানান, বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ হলে তিনি গত ৬ সেপ্টেম্বর ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং ২৫ সেপ্টেম্বর বার কাউন্সিলের চূড়ান্ত ফলাফলের মাধ্যমে নিবন্ধিত আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। 

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে একজন আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর অ্যাড. মাহিয়া মেহজাবিন রিফা সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন এবং একইসঙ্গে যে কোনো আইনি সহায়তা নিয়ে সর্বদা সাধারণ অসহায় মানুষ, রংপুরবাসী তথা নিজ এলাকাবাসীর পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। 

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি