ঢাকা, শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪

কৃষিতে বিনিয়োগ-কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ব্যাপক: ইলিয়াস মৃধা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৪৮, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দেশ। এটি কৃষিনির্ভর দেশ হিবেসেও বিশ্বখ্যাত। এদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ এবং শ্রমশক্তি ৬০ ভাগ কৃষি কাজে নিয়োজিত। দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কৃষি উন্নয়ন, কৃষিভিত্তিক শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নয়ন করা দরকার।

দেশে কৃষি খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি ভাবে বহুমুখী উদ্যোগ নিলে সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশ-এমনটাই মনে করেন প্রাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস মৃধা।

সম্প্রতি একুশে টিভি অনলাইনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা জানান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।

একুশে  টিভি অনলাইন: কৃষি খাতকে এগিয়ে নিতে করনীয় কি?

ইলিয়াস মৃধা: কৃষি খাতে উন্নতির জন্য আমাদের দু’টি দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এক অর্থকরী ফসল উৎপাদনের দিকে মন দিতে হবে। দুই বিজ্ঞানভিক্তিক কৃষিকে প্রাধান্য দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের শ্রমের মানসস্মত মুজরি নির্ধারণ করতে হবে। না হলে এ পেশায় আগামীতে লোক খোঁজে পাওয়া যাবে না। লোক সংকট নিয়ে কৃষি খাতকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। আগের থেকে কিছুটা হলেও কৃষি খাত উন্নতি লাভ করছে। আগে আমার গরু দিয়ে জমি চাষ করতাম।

এখন আমরা যন্ত্রের মাধ্যমে জমি চাষ করি। কৃষিকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে পারলে এবং উৎপাদিত ফসলকে যদি প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে পারি। তাহলে কৃষি খাতের প্রসারতা বাড়বে। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। তবে খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, মোট জাতীয় উৎপাদনে বিপুল অবদান এবং সর্বাধিকসংখ্যক কর্মসংস্থানের উৎস হওয়া সত্ত্বেও দেশের সার্বিক চাহিদা ও কৃষির বর্তমান উৎপাদনের মধ্যে এখনও বিপুল পার্থক্য রয়েছে। বিষয়টি দেশের প্রধান প্রধান আমদানি দ্রব্যের তালিকায় নজর দিলে বিষয়টি আরো সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

দেশের কৃষি খাতে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে, তবে কিছুটা প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে পারলে আমরা কৃষির প্রকৃত স্বাদ পেতে পারি।

কৃষির সম্ভাবনা বলতে, মোট জাতীয় উৎপাদনে একক বৃহত্তম খাত হিসেবে কৃষিই সর্বাধিক অবদান রাখছে, শস্য উৎপাদন পদ্ধতি ব্যাপকভাবে শ্রমঘন এবং কৃষি খাতে বিদ্যমান উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তি, দক্ষ ও অদক্ষ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান কৃষি খাতই বৃহত্তম উৎস, বছরব্যাপী বিদ্যমান অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ, জৈব বৈচিত্র্যের ব্যাপক সমাহার, বিভিন্ন প্রজাতির শস্য এবং কৃষিজ উৎপন্ন হলো আমিষ, খনিজ ও ভিটামিনের প্রধান উৎস এবং সর্বোপরি কৃষিজাত উৎপন্নের ক্ষেত্রে অন্যান্য উৎপাদনের চেয়ে অধিকতর মূল্য সংযোজনের সুযোগ রয়েছে।

আবার প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে, কৃষি ব্যবস্থা প্রকৃতির খেয়াল খুশির ওপর নির্ভরশীল এবং ঝুঁকিপূর্ণ, আবাদযোগ্য ভূমির লভ্যতা ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে, কৃষিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্যমান ব্যাপক দারিদ্র্য, কৃষি কাজের অন্য প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাব, কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উপযুক্ত আধুনিক প্রযুক্তির স্বল্পতা, অনুন্নত ও দুর্বল বাজার ব্যবস্থার কারণে কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা, কৃষিজ উৎপন্নসমূহ দ্রুত পচনশীল এবং ফসল-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অত্যধিক এবং ফল এবং শাক-সবজিসহ বিভিন্ন কৃষিজ উৎপন্নের পুষ্টিমান সমন্ধে সাধারণ মানুষের সীমাবদ্ধ জ্ঞান। এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে।

কৃষিকে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। শুধুমাত্র ব্যক্তি পর্যায়ের বা কৃষক পর্যায়ের খাত বললে একে, ভুল বলা হবে। কৃষির উন্নয়নে এখন প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ব্যবহার করা করতে হবে। বৈচিত্র্য আনতে হবে কৃষিতে। প্রযুক্তি প্রসারতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রুচির পরির্বতন আসছে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই কৃষি প্রক্রিয়াজাত করতে হবে। তাহলে আমরা সারা বছর মৌসুমী ফল খেতে পারবো।

যেমন আমের মৌসুমে আম খেতে পারি। পরে আমের তৈরি আচার খেতে পারবো। সারা বছর আমের জুস খেতে পারবো। এমন অবস্থা সৃষ্টি করতে পারলে আমরা দুই দিন থেকে সুবিধা লাভ করতে পারবো। একদিকে সারাবছর  মৌসুমী ফলের স্বাদ নিতে পাচ্ছি। অন্যদিকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে পারবো। বৈদেশিক আয়ের অর্থ দিয়ে আমরা কৃষিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারবো।

একুশে টিভি অনলাইন : দুধে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে করণীয় কি?

ইলিয়াস মৃধা: বাংলাদেশে দুধের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এখনও গুড়া দুধ প্রচুর পরিমাণে আমদানি করতে হচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে যে পরিমান দুধ প্রয়োজন সে পরিমাণ দুধ আমরা যোগান দিতে পারি না। বাধ্য হয়েই বিদেশ থেকে গুড়া দুই নিয়ে আসতে হয়।

আমরা বিদেশ থেকে গাভী নিয়ে আসতে পারি বা আমাদের দেশে আবহাওয়ার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে এমন গাভী পালন করতে পারি। তাহলে একদিন দুধের  চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে আমরা দেশি গরু দিয়ে কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছি। আশা করি আমরা যদি এমন পদক্ষেপ নিতে পারি বিদেশ থেকে আর দুধ আমদানি করতে হবে না।

একুশে টিভি অনলাইন: কৃষি খাতে রফতানি বাড়াতে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?

ইলিয়াস মৃধা: কৃষি খাতে রফতানি বাড়তে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতের সঙ্গে যে অশুল্ক বাজার রয়েছে সেটা যদি সমধান করা যায় তাহলে রফতানি আরও বাড়বে। এছাড়া জিরো ডিগ্রী শর্তে যেসব দেশগুলো রফতানি সুযোগ দিয়ে থাকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পোষাক শিল্পে জিএসপি দিচ্ছে না। তবে আমার যদি কৃষি পণ্যে জিএসপি সুবিধা নিতে পারি। কৃষিকে আমরা আরও এগিয়ে নিতে পারবো। সরকার যে ১০০টিরও বেশি শিল্প অঞ্চল করার উদ্যোগ নিয়েছেন।  এর সঙ্গে যদি কৃষিকে প্রধান্য দিয়ে শিল্প অঞ্চল তাহলে আরও বেশি উন্নতি ভালো করতে সক্ষম হবো। এবং স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

একুশে টিভি অনলাইন: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়া জন্য ধন্যবাদ।

ইলিয়াস মৃধা: একুশে পরিবারকেও ধন্যবাদ।

টিআর / এআর

 

 

 

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি