ইংলিশ জানলে আউটসোর্সিংয়ে রয়েছে চাকরির সুযোগ
প্রকাশিত : ১৯:৪৪, ৩০ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ১৬:২০, ২২ নভেম্বর ২০১৮
তথ্যপ্রযুক্তি ও আউটসোর্সিংয়ে কাজের বিশাল বাজারে অপার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের জন্য। তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়াও সেবা ও অর্থনৈতিক খাতে ইউরোপ এবং আমেরিকার মতো দেশগুলোতে বিপুল পরিমাণে জনশক্তি দরকার। খুব দক্ষ না হয়েও শুধু স্নাতক পাস এবং ইংরেজিতে লেখা, পড়া ও বলায় সাবলীল হলেই আউটসোর্সিং খাত থেকে একজন কর্মী আয় করতে পারেন মাসে প্রায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। দেশের আউটসোর্সিং ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিয়েই এমনই আশাবাদ বাংলাদেশের আউটসোর্সিং ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কাজী আইটি সেন্টার লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইক কাজীর। আজ মঙ্গলবার ইটিভি অনলাইনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান মাইক কাজী।
ইটিভি অনলাইন: তৈরি পোষাক খাতের পর দেশের দ্বিতীয় সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে মনে করা হয় আইটি খাতকে। আপনি কী মনে করেন?
মাইক কাজী: আইটি সেক্টরে আমাদের জন্য খুবই ভালো একটা সময় যাচ্ছে। আমি এটাকে ‘গোল্ডেন টাইম’ বলব। আমাদের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় খাত। আমাদের দেশে প্রায় ৩০ লাখ স্নাতক পাশ বেকার আছেন। তাই আমাদের জন্য কাজের অনেক সুযোগ আছে। আইটি বা আউটসোর্সিংয়ে তারা কাজ করতে পারেন। এতে করে বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আনতে পারি আমরা। এর জন্য দরকার দক্ষ জনশক্তি। দক্ষ মানবশক্তি পেলে আমরা বিদেশ থেকে চাকরি এনে দিতে পারি এখানকার তরুণদের।
ইটিভি অনলাইন: আপনার দৃষ্টিতে দক্ষ কর্মীর মূল্যায়ন কেমন?
মাইক কাজী: এখানে দক্ষ কর্মীর সংজ্ঞা নিয়ে আমরা পিছিয়ে আছি। অনেকে বলে যে, আমরা চাকরি পাই না। আমরা বলি যে, আমরা চাকরি দিতে গেলে দক্ষ কর্মী পাই না। এটা কেন বলছি যে, আইটি এবং আউটসোর্সিংয়ে আমাদের গ্রাহক বিদেশি। কেউ আমেরিকার অথবা কেউ চীনের। তাই তাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ইংরেজি বা চীনা ভাষা লোক দরকার। অন্তত ইংরেজিতে সাবলিল এমন কর্মী তো দরকার। আমাদের গ্রাহক যেমন চায় তেমনই তো আমাদেরকে দিতে হবে। কিন্তু সেই অনুযায়ী আমাদের লোকবল প্রশিক্ষিত নয় কিন্তু। এখানে বলে রাখি আমাদের দেশের জনবল কিন্তু খুবই মেধাবী। একটা উদাহরণ দেই। কোনো একটা পরীক্ষা যদি বাংলায় নেওয়া হয় তাহলে দেখা যায় সবকিছুতে ১০০ –তে ১০০ পেয়েছেন এমন কর্মীও আছে। কিন্তু সেই পরীক্ষা যদি ইংরেজিতে নেওয়া হয় তাহলে কিন্তু ৫ শতাংশও পাস করে না। এ জায়গাটা ঠিক করতে পারলে আমাদের প্রতিবন্ধকতা অনেকখানি কেটে যাবে।
ইটিভি অনলাইন: তাহলে তরুণরা যে এই খাতে আসবেন; সম্ভাবনা কেমন?
মাইক কাজী: এই খাতে চাকরির অভাব নেই। অন্তত শুধু কাজী আইটিতে তো নেই। আমাদের কথাই যদি বলি আমাদের তিনটি সেন্টারে ৮০০ কর্মী কাজ করেন। আমাদের এখনই আরও অন্তত ৫০০ কর্মী দরকার। আমরা দেশের ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘চাকরি মেলা’ নামের একটি ক্যারিয়ার বুথ ক্যাম্প করছি। আগামী এক বছরে এসব ক্যাম্পাস থেকে আমরা ৫০০ জনকে চাকরি দেবো।
ইটিভি অনলাইন: আইটি এবং আউটসোর্সিং এর সমগ্র খাত নিয়ে যদি জানতে চাই তাহলে এই খাতের সম্ভাবনা এবং প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
মাইক কাজী: এই খাতের সম্ভাবনা এক কথায় বিশাল। পাশের দেশ ভারতের কথাই যদি বলি তারা প্রতিবছর ২০০ বিলিয়ন ডলার আয় করতেছে। ফিলিপাইন ৩০ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। এটা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের বাজার। দেশের তৈরি পোষাক খাতের চেয়েও এখানে ভালো করা সম্ভব।
ইটিভি অনলাইন: বাংলাদেশের আউটসোর্সিংয়ে কাজী আইটি কেমন কাজ করছে? বিশেষ করে আপনাদের কার্যক্রম সম্পর্কে যদি আমাদের বলেন।
মাইক কাজী: কাজী আইটিতে আমরা যে কাজ করি তা হচ্ছে আমেরিকাতে যেসব ব্যাংক আছে তাদের আর্থিক খাতের যেসব কাজ আছে যেমন ফিনান্সিয়াল বিশ্লেষণ, ব্যবসা বিশ্লেষণ বা একাউন্টিং এর কাজ সেসব আমরা বাংলাদেশ থেকেই করে দেই। আমি ৯ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে যাই। সেখানে এসব বিষয়ে কাজ করি। কিন্তু সবসময় আমার মনে হতো দেশের জন্য কাজ করবো। বিশেষ করে আমার মা এ বিষয়ে আমাকে অনেক তাগিদ দিতেন। সেই তারণা থেকে ২০০৯ এ দেশে আসার পর এই কাজী আইটি সেন্টারের যাত্রা করি আমি।
ইটিভি অনলাইন: আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কেমন?
মাইক কাজী: আমি বলবো আমাদের পরের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের জন্য আরও কর্মসংস্থান নিয়ে আসা। আমাদের এখন যে লক্ষ্যমাত্রা অর্থাৎ ৫০০ জন কর্মীকে নিয়োগ দেওয়ার পর আমরা যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে আরও কাজ আনবো। শুধু তাই না, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, ডালাস এবং লস এঞ্জেলসে আমাদের অফিস আছে। আমাদের দেশের ছেলে মেয়েরা সেখানে গিয়ে কাজ করতে পারে। তবে এর জন্য ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে।
এখানে আরেকটা কথা বলি। এই খাতে কিন্তু আমাদের কাজের অভাব নেই। সেখানে প্রচুর কাজ। আর সেসব কাজে সেখান থেকে লোক নিয়োগ দিতে হলে চার থেকে পাঁচ হাজার ডলার বেতন দিতে হবে। কিন্তু আমাদের এখানে এক হাজার ডলারেই কাজ পাওয়া যায়। তাই প্রতিষ্ঠানগুলো আউটসোর্সিং করে। তাদেরও সঞ্চয় আমাদেরও কাজ হয়। অনেকে মনে করে যে, আমাদের বুঝি কাজ নাই। আসল সত্যটা হচ্ছে আমরা জনবল তৈরি করতে পারলে অনেক কাজ আছে আমাদের জন্য।
ইটিভি অনলাইন: দক্ষ জনবল তৈরিতে আপনাদের কোন উদ্যোগ আছে কী না?
মাইক কাজী: এখানে আমাদের আসলেই একটা উদ্যোগ আছে। প্রথমত, আমার জানা মতে, আমাদের অফিসে আমরা নতুনদেরক দেখেশুনে চাকরির সুযোগ দেই। অর্থাৎ এখানে এসে কেউ কিছুদিন কাজ করতে পারে। তাদেরকে কী কাজ করতে হবে তা হাতে কলমে দেখতে পারে। তারপর কারও যদি কাজ পছন্দ হয় তাহলে করতে পারে। এমনটা আর কোন স্বদেশি প্রতিষ্ঠানে আছে বলে আমাদের জানা নেই।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমরা কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ মাসের একটা কোর্স করাতে আমরা আগ্রহী। কোর্স শেষে পরীক্ষা নেওয়া হবে। ৮০ শতাংশ নম্বর যারা পাবেন তারাই চাকরি পাবেন। আমরা হয়তো এখন চাহিদার ১০ শতাংশ কর্মী সরবরাহ করতে পারি। আরও ৯০ শতাংশ চাকরির বাজার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে”।
//এসএইচএস// এসএইচ/
আরও পড়ুন