শিগগিরই নিয়োগ হবে ৫৭ হাজার শূন্য পদে
প্রকাশিত : ১৭:৩৬, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৮:৪৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮
রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে বহু পদ শূন্য হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগেই এসব শুন্য পদে নিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৈঠকে শূন্য পদে নিয়োগের জটিলতা কাটিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয় হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, সরকার চায় এসব শূন্য পদে খুব তাড়াতাড়ি নিয়োগের ব্যবস্থা করতে।
সবমিলিয়ে রাজস্ব খাতের ৫৭ হাজার শূন্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হবে প্রায় ৪২ হাজার জনবল। পর্যায়ক্রমে এসব শূন্যপদে নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে।
সূত্র জানায়, শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়ের চার বিভাগ ও সংস্থায় ৫৩ হাজারের বেশি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ৪২ হাজার ২১২টি পদ খালি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে (বিবিএস) ২ হাজার ২৩৪টিসহ বিভিন্ন সংস্থায় পদ শূন্য আছে ২ হাজার ৫২০টি। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থায় ১ হাজার ২৫৭টি শূন্য পদ রয়েছে।
এ তিন মন্ত্রণালয়ের মোট ৫৭ হাজার শূন্য পদে নিয়োগ সম্পন্ন করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই বৈঠকে বেশ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে দ্রুততম সময়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্নিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে মাসভিক্তিক শূন্যপদ পূরণের প্রতিবেদক প্রতিমাসের তৃতীয় সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে তাদের শূন্য পদের তালিকা তৈরি করে প্রধামন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ফিডার (অস্থায়ী শূন্য পদ) পদে যোগ্যতা অর্জনের কারণে পদোন্নতির জটিলতা থাকলে প্রয়োজনে বিধি-বিধান অনুযায়ী যোগ্যতার শর্ত কমাতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কিছু জটিলতার কারণে ওপিএসসি সদস্যদের সভাভিত্তিক পরিবর্তনের ফলে নিয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ্য করে বৈঠক স্থগিত করা হয়। পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে অতি জরুরি ভিত্তিতে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক নিয়োগ কমিটির জন্য কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বণ্টন সুনির্দিষ্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বিধি চূড়ান্ত না করায় নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না।
চূড়ান্ত নিয়োগ বিধি তৈরি করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বৈঠকে অনুরোধ করা হয়। বৈঠকে দৈনিক ভিত্তিতে (অস্থায়ী) যেসব কর্মচারী ব্যাংকে কর্মরত আছেন, তাদের বিষয়ে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। শূন্য দের বিপরীতে কতজন অস্থায়ী শ্রমিক কাজ করছেন, তার তালিকা পাঠানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক নীলুফার আহমেদের সভাপতিত্বে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক থেকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর নিয়োগ সম্পর্কিত কর্মপরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৯৯টি পদ শূন্য রয়েছে। এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৫৩টি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। তা ছাড়া অস্থায়ীভাবে ৪৪টি পদের মেয়াদ গত মে মাসে শেষ হওয়ায় পদগুলো সংরক্ষণে জ্রনপ্রশাসনের সম্মতি পাওয়া গেছে। নিয়োগ চূড়ান্ত করতে অর্থ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাতটি পদে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) চিঠি দেওয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে শূন্য পদের সংখ্যা ৪২ হাজার ২১২। পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে নিয়োগ চলমান। এসব নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হলেও সরাসরি নিয়োগ দেওয়া সম্ভব এমন পদে নিয়োগ দেওয়ার কাজও শেষ করা হবে। মামলার কারণে বিভাগীয় পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, অর্থ বিভাগে শূন্য পদের সংখ্যা ১০৯। পদোন্নতি, সংরক্ষিত কোটা ও সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে এ পদগুলো পূরণ করা হবে বলে জানা গেছে। অর্থ বিভাগের অধীন হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিএজি), ফিমা ও অডিট অধিদপ্তরে শূন্য পদের সংখ্যা ১ হাজার ৯১৫। এব্যাপারে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের সচিব আবদুর রউফ তালুকদার একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, এবিষয় আলোচনা শুনেছি কিন্তু বিস্তারিত আপনাকে বলতে পারবো না। আর নিয়োগ দেওয়া হলে তো আপনারা জানতেই পারবেন।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানান, ইআরডিতে পদ শূন্য রয়েছে ৫৫টি। কম্পিউটার অপারেটরের সাতটি শূন্য পদে নিয়োগ বিধি (১৯৮৫) বাতিল হওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত। এদিকে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (আইআরডি) পদ খালি রয়েছে ৪৪টি।
সংশ্নিষ্টরা জানান, আইআরডির অধীন সংস্থায় ৮ হাজার ৮২৮টি পদ শূন্য আছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের জন্য পিএসসিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগে পদ শূন্য রয়েছে ১৬৭টি। সূত্র জানায়, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে খালি পদের সংখ্যা ২৪। এছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে (বিবিএস) পদ শূন্য আছে ২ হাজার ২৩৪টি। তৃতীয় শ্রেণির ২৪৫টি ও ৫৯৩টি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্টে রিট রয়েছে।
৯৫টি পদ শূন্য আছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে (আইএমইডি)। প্রথম শ্রেণির ২৮টি পদ পূরণে জনপ্রশাসন ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের চিঠি দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণির ৩৫টি পদে মামলার কারণে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মোট ৬৫টি পদ খালি। ৪২টি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ১৮৭টি পদের মধ্যে ৬১টি শূন্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৩০টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (রাজউক) ৭৭৮টি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (সিডিএ) ১৬৩টি ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (আরডিএ) ৩৪টি পদ শূন্য রয়েছে। তবে এসব পদে নিয়োগ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।
টিআর/ এআর
আরও পড়ুন