আর নয় ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা
প্রকাশিত : ২১:০৬, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ২১:১১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
এসে গেছে ম্যাজিক ক্যাপসুল যা একপাতা খেলে ১ সপ্তাহের মধ্যে দূর হয়ে যাবে আপনার ক্যারিয়ারের সব সমস্যা ও দুশ্চিন্তা। ভাই,এবার একটু ঘুম থেকে উঠুন। চোখ মেলে তাকান আমরা স্বপ্নে নয় বাস্তবতায় আছি। জি, উপরে যা যা বলেছিলাম এইসব কাল্পনিক কথাবার্তা, বাস্তবে নয় স্বপ্নেই সম্ভব।
এমনটি হলে কতই না ভাল হত, তাই না ! কষ্ট ছাড়াই সবকিছু হয়ে যেত। কিন্তু বাস্তব জীবন ভিন্ন। এখানে কষ্ট করেই সব অর্জন করতে হয় আর কষ্ট আছে বলেই সব মিষ্ট লাগে।এবার কাজের কথায় আসি, একটা সময় ছিল যখন মানুষ ক্যারিয়ার নিয়ে ততবেশি চিন্তা করত না। দেখা যেত, মাস্টার্স কমপ্লিট করেও ঘরে বসে আছে কোথাও ভাল জব না পেলে করবে না। ভাল জব বলতে এন্ট্রি লেভেল না, মীড লেভেল এর জব বোঝাতো।
এভাবে করে দেখা যেত যে,ঘরে বসে বসে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এখনকার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। মানুষ এখন নিজ ক্যারিয়ার নিয়ে বেশ সচেতন। এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকেই দেখা যায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার পাশাপাশি জব করছে, বিভিন্ন সংগঠন বা স্টুডেন্ট ক্লাব এর সাথে জড়িত আছে পাশাপাশি নানান কর্মকাণ্ডেও তারা সক্রিয়।
ক্যারিয়ার প্ল্যান টা শুরু করা উচিৎ ইন্টারমিডিএট এর পর থেকে। ক্যারিয়ার শুরু করার আগে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করা উচিৎ।
১) আমি কি করতে চাচ্ছি
২) কেন করতে চাচ্ছি
৩) যা করতে চাচ্ছি তা করতে গেলে আমাকে কি কি করতে হবে
৪) কিভাবে করতে হবে
আমরা সবসময় অন্যকে প্রশ্ন করি , নিজেকে করি না। কিন্তু নিজের সাথে কথা বলা উচিৎ এবং নিজেকে প্রশ্ন করা উচিৎ। কোথাও পরীক্ষা দেওয়ার আগে নিজের কাছে নিজের কিছু পরীক্ষা দেয়া উচিৎ। যাচাই করা উচিৎ আমি যে পদে আবেদন করতে যাচ্ছি , সেটার জন্য আমি যোগ্য কিনা, পদের যোগ্যতার সাথে আমার যোগ্যতা এর মিল আছে কিনা। অনেকে এক লাফে বড় পদে আবেদন করে ফেলে, ভাগ্যক্রমে দেখা গেল চাকুরীটা হয়েও গেল কিন্তু প্রবেশনারি পিরিয়ড পার হতে না হতেই চাকুরী চলে গেছে। তাই নিজের সেলফ-এস্যাসমেন্ট করাটা খুব জরুরি।
সিভি প্রিপেয়ার করার সময়, অনেকে নিজের জ্ঞান জাহির করার জন্য কঠিন কঠিন শব্দের প্রয়োগ করে থাকে আবার অনেকে ২ পাতার সিভি কে অনেক অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তু দিয়ে টেনেটুনে পাঁচপাতা করে থাকে। মনে রাখবেন, সিভি হচ্ছে কোন প্রতিষ্ঠানে জব এর জন্য সবার প্রথম পদক্ষেপ, তাই সিভি থাকতে হবে সরল ও প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু সম্পন্ন। এন্ট্রি লেভেল এর জব গুলোর সিভি রিকয়ারমেনটস দেখে কোম্পানি জুনিয়র অফিসারগণই সিভি নির্বাচন করে থাকেন। কোম্পানি এর ডিরেক্টর বা ম্যানজার লেভেল এর কর্মকর্তাদের এত সময় থাকে না সিভি নির্বাচনের। তাই, যে আপনার সিভি পড়ছে তার কাছে আপনার সিভি যেন বোধগম্য হয় এবং কম সময়ে সিভি সিলেক্ট করা যায় সে বিষয়গুলো সিভি তৈরি করার সময় মনে রাখতে হবে।
এরপর আসি ইন্টারভিউ এর কথায়। যারা কয়েকবার ইন্টারভিউ দিয়েছে, তারা একটা সময়ের পর বুঝে যায় ইন্টারভিউ বোর্ড এ কি ধরনের আচরণ করতে হবে। কিন্তু ফ্রেশার, যারা এখনো ইন্টারভিউ দেয়নি তারা প্রথম ইন্টারভিউ তে ঠিক মত বুঝে উঠতে পারে না যে কেমন আচরণ করা উচিৎ। আমি ইন্টারভিউ নেয়ার সময় অনেক সময় জিজ্ঞেস করেছি, “এটা কি আপনার প্রথম ইন্টারভিউ?” জানার পর সেকেন্ড ইন্টারভিউ তে তার কি ধরনের আচরণ করা উচিৎ সে বিষয়ে টিপস দিয়ে দেই।
অনেকে দেখা যায়, দাঁড়িয়ে আছে চেয়ার এ বসছে না। আবার অনেকে শব্দ করে চেয়ার টেনে বসছে, অনেকে আবার দেখা যায় চেয়ার এ বসে ঝুলছে। কেউ আবার মুখে চুইংগাম নিয়ে কথা বলছে। ইন্টারভিউ বোর্ড এ আপনাকে থাকতে হবে মার্জিত এবং ভদ্র। রুম এর দরজা টেনে সুন্দর ভাবে বলতে হবে, “May I come in?” এবং রুম এর ভিতরে ঢুকে স্মাইলি ফেইস এ গ্রিটিং দিয়ে বলতে হবে “আমি কি বসতে পারি ?”এবং চেয়ারটি আলতো করে টেনে বসতে হবে।
হাত দুটো টেবিল এর উপর রাখবেন।ইন্টারভিউ বোর্ড এ যদি একজন থাকে তবে তার দিকে face করে কথা বলবেন। আর যদি এক এর অধিক থাকেন তবে যিনি প্রশ্ন করেছেন তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নের উত্তরটি দিবেন। ইন্টারভিউ তে কোন প্রশ্ন আপনার কমন নাও পরতে পারে। মনে পড়ছে না, ভুলে গেছি এসব না বলে সত্যটিই বলুন, "সরি বলতে পারছি না।" আপনাকে যে সবজান্তা শমশের হতে হবে এমন তো কোন কথা নাই। আপনি অনেক কিছু নাই জানতে পারেন এটা দোষের কিছু না।
ইন্টারভিউ তে সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। যদি আপনার কাজটি হয় অফিসিয়াল তবে জিন্স, টিশার্ট এভয়েড করার চেষ্টা করবেন এবং ফরমাল শার্ট,প্যান্ট ,শু এবং হাল্কা রং এর পোশাক পরার চেষ্টা করবেন। ছেলে হলে ক্লিন শেইভ,ছোট চুল এবং জুতা পরিষ্কার পরিছন্ন করে যাবেন। মেয়ে হলে হাল্কা মেইক আপ এবং চুল পরিপাটি করে গুছিয়ে যাবেন।
কথা বলার সময় খুব দ্রুত বা খুব ধীরে নয়, মাঝামাঝি স্পীড এ কথা বলবেন এবং অবশ্যই মনে রাখবেন আঞ্চলিক ভাষা না, শুদ্ধ ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করবেন। যদি ইন্টারভিউয়ার আপনাকে বাংলায় প্রশ্ন করেন তবে আপনি উত্তরটিও বাংলায় দিবেন। যদি ইন্টারভিউয়ার আপনাকে ইংরেজিতে প্রশ্ন করেন তবে আপনি উত্তরটিও ইংরেজিতে দিবেন। আরেকটি কথা মনে রাখবেন ইন্টারভিউ বোর্ড এ কখন বলবেন না, "চাকুরিটা আমার খুব দরকার, আমি অনেক ক্রাইসিস এ আছি।" এতে করে হওয়া চাকুরি ও আপনার না হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। আত্মবিশ্বাস রাখুন, যোগ্যতাসম্পন্ন হলে জব আপনার এমনিতেই হবে।
অনেকে আবার ইন্টারভিউ বোর্ড এ ইন্টারভিউয়ার কে অনেক প্রশ্ন করেন। দেখে বুঝা যাবে না কে কার ইন্টারভিউ নিচ্ছে, কখনও এটা করবেন না। আপনার মনে চাকুরী সংক্রান্ত অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে এবং আপনি অবশ্যই জানবেন কিন্তু জানার ধরনটা একটু অন্য রকম হবে যেমন আপনি বলতে পারেন, “স্যার / ম্যাডাম যদি অনুমতি দেন আমার কিছু প্রশ্ন ছিল, করবো ?” এবং বেনেফিট রিলেটেড ২ থেকে ৩ টি জরুরী প্রশ্ন আপনি করুন। কোম্পানি সম্পর্কে জানতে আপনি কোম্পানি এর ওয়েবসাইট থেকেও প্রতিষ্ঠানটির প্রোডাক্ট, কার্যক্রম, জব ন্যাচার এইসব জানতে পারেন। অথবা পরিচিত কেউ থাকলে প্রতিষ্ঠানটির সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন যেমন কোম্পানি ভ্যালুস, বেনেফিটস, স্যালারি কত তারিখে হয় ইত্যাদি। সবাই ভাল থাকুন
লায়লা নাজনীন
হেড অফ এইচ আর/অ্যাডমিন
স্টার সিনেপ্লেক্স বসুন্ধরা সিটি
আরও পড়ুন