ঢাকা, সোমবার   ১৪ অক্টোবর ২০২৪

পূর্ণাঙ্গ রায়ের আগে ফাঁসি কার্যকর নয় : আপিল বিভাগ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:২১, ৭ নভেম্বর ২০২১

পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার আগে যাতে ফাঁসি কার্যকর না করা হয় এই বিষয়ে আইজি প্রিজনসের সঙ্গে এটর্নি জেনারেলকে কথা বলতে বলেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ রবিবার এ আদেশ দেন।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লালনগরে এক শিশুকে (১৩) ধর্ষণ-হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড বহাল থাকা আসামি শুকুর আলীর ফাঁসি কার্যকর স্থগিত রাখতে বলেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে আসামি শুকুর আলীর আইনজীবীকে প্রক্রিয়া মেনে রিভিউ আবেদন করতে বলেছেন আদালত।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, “পুরো রায় পাওয়ার আগেতো দন্ড কার্যকর হবে না।”

এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, “আপনি আইজি প্রিজনসকে বলবেন পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার আগে যাতে দনড কার্যকর করা না হয়।”

আদালতে শুকুর আলীর পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট হেলাল উদ্দিন মোল্লা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, “গত ১৮ আগস্ট আপিল বিভাগ শুকুর আলীর ফাঁসি বহাল রেখে আদেশ দেন। এ মামলায় অপর তিন আসামিকে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। এরপর আপিল বিভাগের রায়ের অ্যাডভান্স অর্ডার পেয়ে কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ শুকুর আলীর ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপতি ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন রিজেক্ট করেন।”

এডভোকেট হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, “ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগের কথা জানতে পেরে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে রিভিউ আবেদন দায়ের করার বিষয়ে জানানো হয়। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে তো ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে না। এরপর রিভিউ আবেদনের সুযোগও আসামিকে দিতে হবে। বিষয়টি আপিল বিভাগের নজরে এনেছি। আপিল বিভাগ শুকুর আলীর ফাঁসি কার্যকর স্থগিত রাখতে বলেছেন।”

আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা আদালতে বলেন, আসামিকে ফাঁসি দেয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। অ্যাডভান্স অর্ডারের কারণে তাঁকে ফাঁসি দিতে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়নি। রিভিউ আবেদন করা হবে, সে পর্যন্ত ফাঁসি যাতে না দেয়া হয়, এ জন্য আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। রায়ে তিন আসামিকে যাবজ্জীবন ও একজনের ফাঁসি বহাল রাখা হয়েছিল। আদালত বলেন, আবেদন করেছেন ? তখন এই আইনজীবী বলেন, ওকালতনামা পাইনি। ডিসির মাধ্যমে এখন ওকালতনামা পেতে ১০ দিন লাগে। অ্যাডভান্স অর্ডারের জন্য আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়েছে। এখনো রায়ে সই হয়নি। তখন আদালত বলেন, অ্যাডভান্স অর্ডার দেয়া হয়েছে যাঁদের মৃত্যুদন্ড থেকে যাবজ্জীবন হয়েছে, তাঁদের নরমাল সেলে দেয়ার জন্য। ওই রায় এখনো সই হয়নি।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ বলেন, “ফাঁসির জন্য আদালত অ্যাডভান্স অর্ডার পাঠাননি।”

এডভোকেট হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, “অথচ পুরো অর্ডার চলে গেছে। কুষ্টিয়ার বিচারিক আদালতে গেছে। সেখান থেকে দন্ড কার্যকরের জন্য কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।”

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লালনগরে ওই শিশুকে ধর্ষণ-হত্যার অভিযোগে আসামি শুকুর আলীর মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে ৩ জনকে যাবজ্জীবন দন্ড দিয়ে গত ১৮ আগস্ট আদেশ দেন আপিল বিভাগ। তিন আসামি নুরুদ্দিন সেন্টু, আজানুর রহমান ও মামুন হোসেনের দন্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন দন্ড দেয়া হয়। এছাড়া তাদের কনডেম সেল থেকে স্বাভাবিক সেলে স্থানান্তরেরও নির্দেশ দেয় আদালত।

২০০৪ সালের ২৫ মার্চ রাতে দৌলতপুর উপজেলার লালনগর গ্রামের ওই শিশু প্রতিবেশির বাড়িতে টেলিভিশন দেখে ফেরার পথে আসামিরা তাকে অপহরণ করে। এরপর লালনগর ধরমগাড়ী মাঠের একটি তামাক ক্ষেতে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ শেষে শিশুটিকে তারা হত্যা করে। পরদিন তার বাবা আব্দুল মালেক ঝনু বাদী হয়ে পাঁচ জনকে আসামি করে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন। এ মামলার বিচার শেষে ২০০৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পাঁচ জনের মৃত্যুদন্ড দেন কুষ্টিয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।  

দন্ডিত ৫ জন হলেন- কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লালনগর গ্রামের খয়ের আলীর ছেলে শুকুর আলী, আব্দুল গনির ছেলে কামু ওরফে কামরুল, পিজাব উদ্দিনের ছেলে নুরুদ্দিন সেন্টু, আবু তালেবের ছেলে আজানুর রহমান ও সিরাজুল প্রামাণিকের ছেলে মামুন হোসেন।

পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদন্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য নথি (ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন। এর মধ্যে কামু ওরফে কামরুল মারা যান। পরে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন। এরপর আসামিরা আপিল করেন।
সূত্র : বাসস
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি