ঢাকা, সোমবার   ০৩ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

‘সম্মান নষ্ট করতেই খালেদাকে জড়ানো হয় নাইকো মামলায়’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:৫১, ২ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

নাইকো মামলার বায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, শুধু রাজনৈতিক কারণে ও সম্মান নষ্ট করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নাইকো দুর্নীতি মামলায় জড়িত করা হয়েছে।

রোববার (২ মার্চ) মামলাটির ১৩৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ আটজনকে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি খালাস প্রদান করে রায় ঘোষণা করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক রবিউল আলম।

পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক রবিউল আলম উল্লেখ করেন, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নাইকোর দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলাটি ২০১০ সালে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ থেকে বাতিল হয়। অপরদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলাটি দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর যাবৎ চলমান ছিল, যা কোনোভাবেই হওয়া উচিত হয়নি। শুধু রাজনৈতিক কারণে ও সম্মান নষ্ট করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিগণকে নাইকো দুর্নীতি মামলায় জড়িত করা হয়েছে।

পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক উল্লেখ করেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ১৯৯৯ সালের ২৩ আগস্ট ছাতক, ফেনী এবং কামতার অ-উৎপাদনকারী প্রান্তিক গ্যাসক্ষেত্র থেকে হাইড্রোকার্বন উন্নয়ন ও উৎপাদনের সমীক্ষার জন্য বাপেক্স এবং নাইকো রিসোর্সেস বাংলাদেশ লিঃ এর মধ্যে ফ্রেম ওয়ার্ক অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং (এফওইউ) চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ওই এফওইউ এ উল্লেখিত অনুচ্ছেদের বাধ্যবাধকতা ও ধারাবাহিকতায় এবং রুলস অব বিজনেস-১৯৯৬ অনুসরণ করেই বাপেক্স ও নাইকো রিসোর্সেস্ বাংলাদেশ লি. এর মধ্যে ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর প্রান্তিক/পরিত্যক্ত ছাটক ও ফেনী গ্যাস থেকে পেট্রোলিয়ামের উন্নয়ন ও উৎপাদনের জন্য যৌথ উদ্যোগ চুক্তি (জেভিএ) স্বাক্ষর হয়েছে। যৌথ উদ্যোগ চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিগণের কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না এবং আসামিগণ কোনো দুর্নীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহার বা ফৌজদারী অসদাচারণ বা ফৌজদারী অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ বা একে অপরকে প্ররোচণা প্রদানের মাধ্যমে কোনো অপরাধে সহায়তা করেননি।

পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক আরও উল্লেখ করেন, এটি তেজগাঁও থানার মামলা হলেও আসামি সেলিম ভূইয়াকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে গুলশান ও ক্যান্টনমেন্ট থানায় রেখে নির্যাতন করা হয়। রিমান্ডে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের এক পর্যায়ে আসামি সেলিম ভূইয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। চার দিনের রিমান্ড শেষে আসামি সেলিম ভূইয়ার নিকট থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়, যা সত্য এবং স্বেচ্ছা প্রদত্ত নয় মর্মে ইতিমধ্যে বিবেচিত হয়েছে। সর্বোপরি আদালত মনে করেন যে, শুধু রাজনৈতিক কারণে ও সম্মান নষ্ট করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিগণকে এই মামলায় জড়িত করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের উচিত হবে কোনো মামলার অনুসন্ধান ও তদন্ত আরও সতর্কভাবে করা, যেন কোনো নিরীহ ও নিরপরাধ ব্যক্তি অহেতুক রাষ্ট্র কর্তৃক হয়রানির স্বীকার বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

এ মামলায় খালাস পাওয়া অন্যরা হলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল করপোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের নামে মামলা করেন। কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগে এ মামলা হয়।

এরপর ২০১৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এতে তাদের রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনা হয়। ২০২৩ সালে ১৯ মার্চ কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৯ নম্বর (অস্থায়ী) বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ গঠন করেন।

অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ মামলার বিচার চলাকালীন ৬৮ সাক্ষীর মধ্যে ৩৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। 

সূত্র: বাসস

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি