‘২০ বছর পর জামিন মিলল নারী দিবসে’
প্রকাশিত : ২৩:১৬, ৮ মার্চ ২০১৮
আজ থেকে ২০ বছর আগে শিশুকে অপহরণের অভিযোগে আটক হন কক্সবাজারের মনোয়ারা বেগম। অর্থাৎ ঘটনাটি ছিল ১৯৯৮ সালের। ওই মামলায় মনোয়ারাকে ২০০১ সালে কক্সবাজার বিচারিক আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।
আর্থিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেননি মনোয়ারার। তাই ১৯৯৮ সাল থেকেই কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছেন তিনি।
এক আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মনোয়ারা বেগমকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনকারীর আইনজীবী ছিলেন ফজলুর রহমান। আর আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. শফিউল্লাহ।
ফজলুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পড়ে মনোয়ারা সম্পর্কে জানতে পারি যে, তিনি দরিদ্র হওয়ার কারণে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেননি। গত রোববার তিনি ওই আবেদন করেন। তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালে মনোয়ারার বয়স ছিল ২৫ বছর। এখন তার বয়স ৪৫ বছর। এখন তিনি কক্সবাজার জেলা কারাগারে আছেন।
আইনজীবী শফিউল্লাহ বলেন, আদালত জানতে চেয়েছিল তার বয়স কতো? আমরা আদলতকে বলেছি তখন ২৫ বছর বয়স ছিল এখন ৪৫। আদালত জানতে চান, তার বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন আছেন? জামিন দিলে সে কোথায় যাবেন, বিবাহিত কিনা?
আদালতকে জানিয়েছি, তার ঘরবাড়ি আছে। গরিব ও দরিদ্র হওয়ায় যোগাযোগ নেই। নারী দিবসে আদালত তার জামিন দেন। একইসাথে আদালত বলেন, সে জামিনে মুক্তির পর যদি মনে করে তার সামাজিক পুনর্বাসন দরকার তাহলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও সমাজসেবা অফিসার তাকে পুনর্বাসন করবেন।
জামিনে বের হয়ে যদি মনোয়ারার আত্মীয়স্বজনকে না পান, তাহলে তাকে সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের জন্য কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক এবং সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
মামলার বিবরণে জানা যায়, তার নাম মনোয়ারা বেগম ওরফে মোতাহেরা বেগম ওরফে খুরশীদা বেগম। তিনি কক্সবাজারের রামু উপজেলার পূর্ব ধেচুয়া এলাকার বাসিন্দা। তার স্বামীর নাম ইসমাইল। বিবরণে উল্লেখ আছে, ১৯৯৮ সালের ১৩ জুন কক্সবাজারের সদর উপজেলার ঝিলাংজা এলাকায় যান তিনি। মনোয়ারা সেখানে এক বাড়িতে গিয়ে বলেন, ‘আমি আত্মীয়র বাড়ি খুঁজতে আসছি। কিন্তু পাইনি। যদি রাতে থাকতে দেন তাহলে ভালো হয়।’ এরপর তিনি ওই বাসায় থাকেন।
পরের দিন সকালে ওই আশ্রয়দাতা তার আট বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে স্কুলের দিকে রওনা দেন। সকালে মনোয়ারাও বিদায় নিয়ে বের হন। কিন্তু দুপুরের পর থেকে ওই শিশুকে আর পাওয়া যায়নি। পরে ওই আশ্রয়দাতা জানতে পারেন শিশুটিকে পাচারের উদ্দেশে অপহরণ করেছেন মনোয়ারা।
পরে ১৭ জুন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সেতুর পাশে শিশুসহ মনোয়ারাকে আটক করে পুলিশ। পরে ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০০১ সালের ২৭ নভেম্বর কক্সবাজারের বিচারিক আদালত ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইনের ১২ ধারায় মনোয়ারাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।
আর
আরও পড়ুন