শিশু সামিউল হত্যা: রায় দেখে যেতে পারলেন না বাবা
প্রকাশিত : ১৭:৩৪, ২০ ডিসেম্বর ২০২০
এক দশক আগে রাজধানীর আদাবরের নবোদয় হাউজিংয়ে মায়ের পরকীয়ার বলি হয় শিশু খন্দকার সামিউল আজিম ওয়াফি (৫)। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হওয়া মামলার আজ রায় ঘোষণা হয়েছে। যেখানে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মা এশা ও এশার প্রেমিক শামসুজ্জামান আরিফ ওরফে বাক্কুর মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত।
কিন্তু নিষ্পাপ ছেলে হত্যার বিচার দেখার সুযোগ হলো না বাবা কে আর আজমের। যিনি ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করে বারবার হত্যার হুমকি পেয়েছেন। কিন্তু তার সত্ত্বেও মামলা তুলে দেননি। চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দীর্ঘ এক দশক পর আজ রোববার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে সামিউলের মা এশা ও তার পরোকিয়া প্রেমিক বাক্কুর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন আদালত। একই সাথে অপর একটি ধারায় প্রত্যেকের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে এদিন আদালতে ছিলেন না দুই আসামি। পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সামিউলের বাবা আজমের বন্ধু ও ব্যক্তিগত আইনজীবী ইসলাম উদ্দিন বিশ্বাস এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর ফারুক উজ্জামান ভূঁইয়া।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১০ সালের ২৩ জুন পরকীয়া প্রেমিক বাক্কুর সঙ্গে মায়ের অনৈতিক কোনো ঘটনা দেখে ফেলায় সামিউলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তারা। পরে মরদেহ গুম করতে ফ্রিজে লুকিয়ে রাখা হয়। পরদিন ২৪ জুন মরদেহটি বস্তায় ঢুকিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়া হয়। একইদিন আদাবরের নবোদয় হাউজিং এলাকা থেকে সামিউলের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সামিউলের বাবা আজম বাদী হয়ে আদাবর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
গ্রেফতারের পর দুই আসামি আদালতে দায় স্বীকার করে জবাবন্দি দিয়েছিলেন বলে জানায় পুলিশ।
২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহান হক এশা ও বাক্কুর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরের বছরের ১ ফেব্রুয়ারি আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
মামলায় মোট ২২ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। এতে এশা ও বাক্কু উভয় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এদিকে, ২০১৪ সালে মামলার বাদী কে আর আজম থানায় একটি জিডি করেন। সেখানে বলা হয়, হাইকোর্ট থেকে জামিনে বেরিয়ে বাক্কু তাকে হুমকি দিচ্ছেন, মামলা চালানো বন্ধ না করলে ‘ছেলের মতো তাকেও মেরে ফেলা হবে’।
পরে ওই বছরই আদালতে আবেদন করে স্ত্রীকে জামিনে বের করে আনেন আজম। পরে কিছুদিন স্ত্রীর সঙ্গে ঘরও করেন তিনি। কিন্তু কিডনি জটিলতায় মামলার বিচার চলাকালীন মারা যান আজম। মৃত্যুর আগে ২০১৫ সালের নভেম্বরে মামলার গতিপ্রকৃতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
অবশেষে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ছেলে হত্যার বিচার হলেও মৃত্যুর কাছে হেরে সেই রায় দেখে যেতে পারলেন না আজম।
এদিকে সামিউলের মা এশা গত ৮ ডিসেম্বর আদালতে হাজির না হওয়ায় তার জামিন বাতিল করা হয়। অপরদিকে বাক্কুও হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি পলাতক থাকায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে আজ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
এআই//এসি
আরও পড়ুন