মিনুর মৃত্যুর ঘটনা ‘সিরিয়াসলি’ তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
প্রকাশিত : ১৭:১৭, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১
চট্টগ্রামের একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামির পরিবর্তে সাজা ভোগ করে কারামুক্ত নিরপরাধ মিনুর মৃত্যুর ঘটনা ‘সিরিয়াসলি’ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এই আদেশ দেন।
চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানার পুলিশের এস আই খোরশেদ আলম ও কোতোয়ালি থানার পুলিশের এস আই জুবায়ের মৃধাকে এ নির্দেশ দেন আদালত।
আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কেন মিনু রাত ৩টায় বাসা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গেল? তাকে ‘প্রক্সি’ দিয়ে জেল খাটানোর ঘটনায় আটকদের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না অথবা শুধুই আটকরা প্রক্সির ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে জড়িত কি-না, নাকি অন্য কেউ আছে, এসব বিষয় ‘সিরিয়াসলি’ তদন্ত করবেন। প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইনস্ট্রাকশন নিতে হবে।
আদালত আইও দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে আজ ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে এ বিষয়ে জারি করা রুলের শুনানির জন্য আগামী ২২ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করে আদেশ দেন। আজ মিনুর মৃত্যুর ঘটনায় অপমৃত্যু মামলার ময়না তদন্তের প্রতিবেদন ও সুরতহাল প্রতিবেদনসহ মামলার নথি নিয়ে দুই তদন্ত কর্মকর্তা হাইকোর্টে হাজির হন।
বিষয়টি নিয়ে আদালতে শুনানি করেন এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সরোয়ার হোসেন বাপ্পী।
গত ২৮ জুন রাতে বায়েজিদ সংযোগ সড়ক থেকে দুর্ঘটনায় নিহত এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে তার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় অজ্ঞাত হিসেবে মরদেহ দাফন করে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম। পরবর্তীতে বায়েজিদ থানার একটি টিম সীতাকুন্ড এলাকার লোকজনকে ছবি দেখিয়ে মিনুর পরিচয় শনাক্ত করে।
এর আগে অন্যের হয়ে জেল খাটা নিরপরাধ মিনু হাইকোর্টের আদেশে মুক্তির পর ‘সড়ক দুর্ঘটনায়’ মারা যাওয়ার ঘটনাটি উচ্চ আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। নিরপরাধ মিনু হাইকোর্টের আদেশে গত ১৬ জুন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। গত ২৮ জুন ভোর পৌনে ৪টার দিকে বায়েজিদ-ভাটিয়ারী লিংক রোডের মহানগর সানমার গ্রিনপার্কের বিপরীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যান মিনু। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ২৯ জুন একটি মামলা হয়। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খোরশেদ আলম। আর খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত কুলসুমকে ২৯ জুলাই গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর প্রতারণার অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় কুলসুমের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। তিনি জবানবন্দিও দেন। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জুবায়ের মৃধা।
চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জে একটি বাসায় ২০০৬ সালের জুলাইয়ে মোবাইলে কথা বলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টস কর্মী কোহিনূর আক্তারকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এরপর রহমতগঞ্জে একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেন গার্মেন্টস কর্মী কুলসুম আক্তার কুলসুমী। এরপর থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়। ঘটনাটি দুই বছর ধরে তদন্ত করে পুলিশ। তদন্ত শেষে হত্যা করা হয়েছে প্রতিবেদন দিলে সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়।
এর মধ্যে এক বছর তিন মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পান কুলসুম।
মামলার বিচার শেষে ২০১৭ সালের নভেম্বরে তৎকালীন অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম ওই হত্যা মামলায় আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ডাদেশ দেন। সাজার পরোয়ানামূলে কুলসুম আক্তার কুলসুমীর বদলি মিনু গত ২০১৮ সালের ১২ জুন কারাগারে যান।
এদিকে, গত ১৮ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান নারী ওয়ার্ড পরিদর্শনকালে মিনু কোনো মামলার আসামি নয় বলে জানতে পারেন। পরে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়।
এসি
আরও পড়ুন