আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটির পথে হাঁটে না: আইনমন্ত্রী
প্রকাশিত : ১৮:৩৫, ২৭ জানুয়ারি ২০২২
সংসদে পাস হওয়া ইসি গঠন আইনে কাউকে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটির পথে হাঁটে না। ইনডেমনিটি কথা শুনলেই আওয়ামী লীগের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। বিএনপি ইনডেমনিটি দিয়ে আমাদের রক্তক্ষরণ করিয়েছে।”
এই আইনে লিগ্যাল কাভারেজ দেওয়া হয়েছে। এই আইনের মধ্যে কেউ অন্যায় করে থাকলে তাকে প্রটেকশন দেওয়া হয়নি। জাতির পিতাকে হত্যার কথা স্বীকার ও খুনিদের পুনর্বাসিত করার বিষয়টি মেনে নিয়ে জনগণের কাছে মাফ চাইলে আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে ঐকমত্যে আসবে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সংসদে 'ইসি গঠন আইন' বিল পাস নিয়ে বিরোধী দলের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এর আগে বিলের ওপর আনীত জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধীদল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা বিলে ইনডেমনিটির বিধান রাখার অভিযোগ করেন। এ ছাড়া খসড়া আইনটি ‘তড়িঘড়ি করে’ আনা হয়েছে বলেও দাবি করেন।
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, “আমি বলেছি এটা তড়িঘড়ি করে করার আইন নয়, এটা সত্য। বর্তমান কমিশনের মেয়াদের মধ্যে আইন করা সম্ভব নয়, এটাও বলেছি। কারণ আমি বলেছিলাম করোনাকালে সীমিত সময়ের জন্য সংসদ বসে, এর মধ্যে এই আইন পাস করা কঠিন হবে। সংসদকে শ্রদ্ধা জানিয়েই এটা বলেছিলাম।”
তিনি বলেন, “সুজনের একটি প্রতিনিধিদল আমার কাছে গিয়ে আইনের একটি খসড়া দিয়ে পাসের প্রস্তাব করে। আমি আইনটি পাস করার জন্য সময় লাগবে বলে তাদের জানাই। তারা অর্ডিন্যান্স করে এটা করার প্রস্তাব দেন। আমি বললাম, সংসদকে পাশ কাটিয়ে এই আইন করব না। সংসদে নেওয়া ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই আইন আমরা করব না।”
আইনমন্ত্রী বলেন, “রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যেসব দল সংলাপ করতে গিয়েছে এবং যারা যায়নি তারা সবাই নতুন আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। গত ১৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করে। রাষ্ট্রপতি আইনের বিষয়ে তাঁর অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। এরপর বিলটি আনা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “এ আইনের কথা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ হয়, তখনই এই আইনের বিষয়ে কথা হয়েছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী এই আইনটি করার জন্য বলেছিলেন। তিনি আরো বলেন, এই আইন করার প্রক্রিয়া শুরুর পর যারা বাইরে কথা বলেন, তাদের আন্দোলন সৃষ্টির চেষ্টার যে টুলস বা মসলা সেটা আর থাকেনি। সে জন্যই তারা উঠেপড়ে লেগেছেন, এটা তড়িঘড়ি করে কেন করছেন। তারা বলছেন, এটা ইসি করার আইন হয়নি। সার্চ কমিটি গঠন করার আইন হয়েছে।”
আইনে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, “ইসি গঠনে সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়ে ২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলো সম্মত হয়েছিল। তখন থেকেই এই সার্চ কমিটির ধারণা এসেছে। এটা কল্পনা থেকেও আসেনি, আকাশ থেকেও পড়েনি। এটা তো নতুন আবিষ্কার নয়। সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত দুই কমিশন হয়েছে। যার কারণে এটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ফলে জনমত যাচাই তো দশ বছর ধরে হয়ে গেছে। বিষয়টি হলো তালগাছটি না পেলে অনেক কমপ্লেইন থাকে।”
তিনি বলেন, “দুজন বিশিষ্ট নাগরিক কারা হবে, সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে। আমরা তো আইনে কোথাও বলিনি, সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে তাদের নিয়োগ দেওয়া যাবে না। বিশিষ্ট নাগরিকের ক্রাইটেরিয়া তো বলে দেওয়া হয়নি। আমরা শুধু রাষ্ট্রপতিকে এই সুযোগটি দিয়েছি।”
বিএনপির এমপিদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির জবাবে মন্ত্রী বলেন, “ওনারা তো তালগাছ চান। ওনারা কিছুই মানেন না, যতক্ষণ তালগাছটা ওনাদের না হয়। এই সংসদই বলেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে তিন টার্মের জন্য। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে মামলা হলে কোর্ট দুটি বিধানকেই অবৈধ ঘোষণা করে। তার পরও ওনারা এটার কথা বলবেন। ওনারা আদালতের রায়ও মানেন না। ওনাদের কথা হলো যেটা কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী করেছেন সেটা ভালো। কিন্তু যুদ্ধ করে জাতির পিতা যেটা করে দিয়েছেন সেটা ভালো না।”
বিএনপির এমপিদের ঐকমত্যের দাবির প্রসঙ্গে আনিসুল হক বলেন, “ঐকমত্য করতে হলে ওনাদের সত্যকে স্বীকার করতে হবে। আর সত্যটি হচ্ছে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সত্য হচ্ছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ওনারা মানে বিএনপি বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। সত্য হলো- ওনারা ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে দেননি। খুনিদের পুনর্বাসিত করেছেন। এসব সত্য মেনে জনগণের কাছে মাফ চাইলে আমরা ঐকমত্যে আসব। এই প্রস্তাব গ্রহণ করলে আমরা ঐকমত্যে আসব।”
সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত আগের দুই কমিশনকে হেফাজত প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “ইনডেমনিটি আর লিগ্যাল কাভারেজ এক কথা নয়। ইনডেমনিটি হচ্ছে অন্যায় করার পরে তাকে প্রকেটশন দেওয়ার জন্য আইন করা। লিগ্যাল কাভারেজ হচ্ছে যেকোনো বৈধ কাজ, যেটার লিগ্যাল কাভারেজ ছিল না সেটা তার আওতায় আনা। ইনডেমনিটির কথা শুনলেই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়।”
ইনডেমনিটি আওয়ামী লীগ দেয় না, এটা বিএনপি দেয়। তারা ইনডেমনিটি দিয়ে আমাদের রক্তক্ষরণ করিয়েছে। দীর্ঘ ২১ বছর আমাদের অপেক্ষা করিয়েছে জাতির পিতার হত্যার বিচার করতে। ইনডেমনিটির কথা আর আমাদের কাছে শুনাতে আইসেন না। এই আইনে লিগ্যাল কাভারেজ দেওয়া হয়েছে। ২০১২ সালে যে কাজটা করা হয়েছে সেটা থেকে শুরু করে সেটার লিগ্যাল কাভারেজ। এই আইনের মধ্যে কেউ অন্যায় করে থাকলে তাকে প্রকেটশন দেওয়া হয়নি। সেই কারণে তাদের যেসব প্রস্তাব গ্রহণ করা যায় না। তাদের বলব, এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করব।
আরকে//
আরও পড়ুন