শোরুম বন্ধের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট নারী উদ্যোক্তা তনির
প্রকাশিত : ১৯:৩৬, ২৩ মে ২০২৪
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের করা জরিমানার টাকা পরিশোধের পরেও দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেছেন আলোচিত ভাইরাল নারী উদ্যোক্তা রোবাইয়াত ফাতিমা তনি। আগামী রোববার রিটের শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
নারী উদ্যোক্তা তনি জানান, রাজধানীর পুলিশ প্লাজাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে জামা-কাপড় বিক্রির শো রুম রয়েছে। কিন্তু তার ভাষায়, দুজন ক্রেতার অবৈধ ও ভুয়া অভিযোগে তার কাপড়ের ব্যবসার দোকানে জরিমানা করা হয়েছে। একইসঙ্গে পুলিশ প্লাজায় অবস্থিত সানবিসের প্রধান শোরুম বেআইনিভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক তার অফিস ও অন্যান্য শোরুমে প্রতিদিন পুলিশ নিয়ে হানা দিচ্ছেন।
এজন্য নিজের ও ব্যবসার সুরক্ষায় ভোক্তা অধিদপ্তরের এমন তৎপরতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেছেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির মালিক তনি। এর আগে অধিদপ্তরকে আইনি নোটিশ দেন তিনি।
তনির পাঠানো উকিল নোটিশ ও রিট পিটিশন থেকে জানা গেছে, গত ১৪ মে সানবিসকে দুটি অপরাধের দায়ে ৫০ হাজার ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। লুবনা ইয়াসমিন নামের এক নারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক ইন্দ্রানী রায়। লুবনা ইয়াসমিন নামের ওই ক্রেতা সানবিস থেকে একটি পোশাক কিনেছিলেন ৯ ফেব্রুয়ারি। এর ৫৩ দিন পর ৩ এপ্রিল ওই নারী ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। পরে ১২ মে সানবিসের প্রধান শোরুমে অভিযান চালিয়ে সেটি সিলগালা করে দেন সহকারি পরিচালক জব্বার মন্ডল।
পিটিশনে আরও বলা হয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৬০ ধারা অনুযায়ী অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করতে হয় ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে। কিন্তু লুবনা ইয়াসমিন অভিযোগ করেছেন ৫৩ দিন পর। ফলে তার অভিযোগ আমলে নেয়ার বৈধতা হারিয়েছেন। এই ৫৩ দিন তিনি ওই কাপড় ব্যবহার করে নষ্ট করেছেন কিনা সেটিও নিশ্চিত নয় কেউ। কিন্তু এমন অভিযোগ আমলে নিয়ে ৪৫ ধরা মতে সর্বোচ্চ শাস্তি ৫০ হাজার টাকা সানবিসকে জরিমানা করা হয়। এমন অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান আইনের প্রয়োগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মনে করছেন তনির আইনজীবী সৈয়দ খালেকুজ্জামান অরুন।
ওই নারী উদ্যোক্তা আরও জানান, মিথ্যা বিজ্ঞাপনের অভিযোগে ৪৪ ধারায় সানবিসকে দ্বিতীয় জরিমানা (দুই লাখ টাকা) করেন ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল। দ্বিতীয় জরিমানার টাকা আদায়ের রশিদে অভিযোগকারী হিসেবে রাজু নামের এক ব্যক্তিকে দেখানো হয়েছে। কিন্তু রাজু নামে কোনো ব্যক্তি সানবিসের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। এমনকি এই অভিযোগের বিষয়ে সানবিসকে কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি বা শুনানিও হয়নি।
ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, লুবনা ইয়াসমিনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সানবিসের মালিক তনিকে তলব করেন ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তা ইন্দ্রানী রানি। কিন্তু সেই তলবের শুনানিতে হাজির হন ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল। তিনি নোটিশ বা শুনানি ছাড়াই বেআইনিভাবে দুই লাখ জরিমানা করেন।
তার আইনজীবী অভিযোগ করে বলেন, দুটি জরিমানার ক্ষেত্রেই তনিকে কোনো আদেশের কপি দেয়া হয়নি। যা রীতিমতো বেআইনি। শুধু জরিমানার টাকা গ্রহণের রশিদ দেয়া হয়।
রোবাইয়াত ফাতিমা তনি জানান, জরিমানা দিলে বিষয়টি এখানে মিটমাট হয়ে যাবে, না দিলে তনির অন্য যে ১০টি শোরুম রয়েছে সেগুলো অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও তাকে হুমকি দেয় আব্দুল জব্বার মন্ডল। তিনি আরও বলেন, জরিমানা প্রদান করা হলে আপনার শোরুম আজ খুলে দেয়া হবে।
তনি বলেন, তখন আমার ব্যবসা বাঁচাতে ওনারা যা বলেছেন তাই করেছি। কয়েকটি কাগজেও স্বাক্ষর নিয়েছে। কিন্তু ওনারা আমার শোরুম খুলে না দিয়ে টালবাহানা শুরু করে।
এদিকে তনিকে দুই দফা জরিমানা করার পর তার শোরুম খুলে না দিতে কৌশলের আশ্রয় নেন জব্বার মন্ডল। তিনি তনির ব্যবসা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করেন। পরের দিন শোরুম খুলে দিতে প্রতিশ্রুতি দিলেও তনিকে জানানো হয়, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত শোরুম বন্ধ থাকবে।
তনির আইনজীবী সৈয়দ খালেকুজ্জামান অরুন বলেন, আপনি যদি কোনো ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিটি করেন তাহলে তদন্তের আগে কিভাবে দুই দফা শাস্তি দিয়ে ফেললেন? আর শাস্তি যখন দিলেন তাহলে শোরুম বন্ধ রাখলেন কিসের ভিত্তিতে? তাছাড়া তাকে যে শাস্তি দেয়া হয়েছে তার আদেশের কোনো কপি বা শোরুম বন্ধের আদেশের কোনো কপি তাকে দেয়া হয়নি। পুরো বিষয়টি তারা বেআইনিভাবে করেছে। এজন্য তারা আদেশের কপি দেননি। যাতে তনি চ্যালেঞ্জ করতে না পারে। এখন আমরা উচ্চ আদালতের কাছে বিচার প্রার্থনা করেছি। একজন নারী উদ্যোক্তাকে এমন হয়রানি করার প্রতিকার আমরা উচ্চ আদালতে পাবো আশা করি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুবই পরিচিত মুখ ব্যবসায়ী রুবাইয়াত ফাতিমা তনি। সম্প্রতি তার কাপড়ের শোরুমে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এক অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে পাকিস্তানি বলে দেশীয় পোশাক বেশি দামে বিক্রি এবং মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগে তাকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
/আআ/
আরও পড়ুন