বিবাহ-বিচ্ছেদ, আইন কী বলে
প্রকাশিত : ১৭:০৯, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৭:১৭, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭
মানুষ বিয়ে করে একটি সুন্দর সংসার ও পরিবারের জন্য। কিন্ত স্বপ্নের সে পরিবার অনেক সময়ই পূরণ হওয়ার আগেই ভেঙ্গে যায়। বর্তমান সময়ে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা যেন দিন দিন বাড়ছে। তবে বিষয়গুলোর সঙ্গে আইনি মারপ্যাচ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আইনের এসব বিধান ইটিভি অনলাইনের কাছে তুলে ধরেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক নুরুন্নাহার মজুমদার।
নুরুন্নাহার মজুমদার বলেন, একজন মুসলিম স্বামী তার স্ত্রীকে যেকোনো সময় তালাক দিতে পারেন। অন্যদিকে কাবিননামার ৯(১) অনুচ্ছেদে যদি স্ত্রীকে অনুমতি দেওয়া থাকে তাহলে অনুরূপভাবে স্ত্রীও তালাক দিতে পারেন। তবে অনুমতি দেওয়া না থাকলেও কিছু কারণে স্ত্রী তালাক চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করতে পারেন। তবে বাংলাদেশে হিন্দু আইনের দয়াভাগা আইনগুলো বলবত থাকায় হিন্দুদের ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদ স্বীকৃত নয়। তবে মিতাক্ষারা আইনে কিছু বিচ্ছেদ হয়।
মুসলিম আইনে বিবাহ বিচ্ছেদ
মুসলিমদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা প্রায়ই দেখা যায় যে, স্বামী মুখ দিয়ে তিন তালাক উচ্চারণ করলেই বুঝি তালাক হয়ে যায়। তবে এটি অজ্ঞতা ছাড়া কিছুই না। মুসলিম আইনের কোথাও এমন বিধান নেই। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় আইনেও একে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশে বিদ্যমান মুসলিম ফ্যামিলি ল’স অর্ডিন্যান্স ১৯৬১ অনুসারে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিলে লিখিত নোটিশ দিতে হবে। সেইসঙ্গে স্ত্রী যে এলাকায় বসবাস করেন সেই এলাকার জনপ্রতিনিধিকে (যেমন-ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর) বিষয়টি অবহিত করে নোটিশ দিতে হবে। উক্ত আইনের ৭(১) ধারার আওতায়, স্বামীর প্রতি এ বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।
আইনে বলা হয়েছে, জনপ্রতিনিধির কাছে নোটিস প্রদানের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে মধ্যস্ততা করার উদ্যোগ নিবেন। এরজন্য স্বামী ও স্ত্রী উভয় পক্ষের মনোনীত একজন করে সদস্য এবং সিটি কর্পোরেশন কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের একজন করে সদস্যদের নিয়ে একটি সালিশি পরিষদ করা হবে। সালিশি পরিষদ যদি তাদের মধ্যে আপোষ করতে ব্যর্থ হয় এবং বিচ্ছেদ বাতিল না হয় তাহলে নোটিশ প্রদানের পরবর্তী ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর হবে।
তবে স্বামী যদি স্ত্রীকে নোটিশ না দেন তাহলে তার এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় প্রকার দণ্ড হতে পারে।
অন্যদিকে এই আইনেরই ৯ ধারায় আছে, কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে পর্যাপ্ত ভরণ-পোষণ বা খোরপোষ দানে ব্যর্থ হলে বা একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে তাদের সমান খোরপোষ না দিলে, স্ত্রীরা চেয়ারম্যানের কাছে দরখাস্ত করতে পারে। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যান বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সালিশি পরিষদ গঠন করবেন এবং ওই পরিষদ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ভরণ-পোষণ প্রদানের জন্য টাকার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে সার্টিফিকেট জারি করবেন। স্বামী যদি ভরণ পোষণের কোনো টাকা যথা সময়ে বা সময়মতো পরিশোধ না করেন তাহলে তা পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি এক্টের আওতায় তার সম্পত্তি থেকে আদায় করা হবে। যদি শালিসে কোনো সমঝোতা না হয় তবে তালাক হয়ে যাবে। স্ত্রী আদালতে তার ভরণপোষন ও অন্যান্য চাহিদা চাইবেন।
হিন্দু আইনে বিবাহ বিচ্ছেদ
বাংলাদেশে হিন্দু আইনের দায়াভাগা বিধান বলবত থাকায় বিবাহ বিচ্ছেদ স্বীকৃত নয়। কারণ হিন্দু ধর্মে মনে করা হয়, বিবাহ একটি আমৃত্যু বন্ধন। তবে মিতাক্ষারা আইনে কিছু বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এছাড়া ডিভোর্স এক্ট-১৮৬৯ এর ধারা-১০ অনুযায়ী একজন হিন্দু স্ত্রী কিছু যুক্তিসংগত কারণে স্বামীকে তালাক দিতে পারেন। এরজন্য তাকে জেলা জাজ আদালতে পিটিশন দাখিল করতে হবে।
এর বাইরে ১৯৫৫ সালের হিন্দু বিবাহ আইনের আওতায়ও একজন হিন্দু ব্যক্তি, স্বামী বা স্ত্রী, বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করতে পারেন। ১৩(১) ধারা অনুযায়ী স্বামী ও স্ত্রীর যে কেউ আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের আজ্ঞপ্তি (ডিক্রি অন ডিভোর্স) পাওয়ার জন্য আবেদন (পিটিশন) দাখিল করতে পারেন। শুধু তাই নয়, ওই আইনের ধারা ১৩(২)(৪) অনুযায়ী একজন হিন্দু নারী বিবাহবিচ্ছেদের জন্য পিটিশন দায়ের করতে পারেন, যেখানে তার ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে এবং সে ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর বিবাহ বাতিল করেছে।
তবে ১৮ বছর পূর্ণ হবার পূর্বেই এ ধরনের আবেদন করতে হবে।
তবে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়াকে সামাজিক বন্ধনের জন্য ‘হুমকি’ হিসেবে দেখছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। সমাজে ব্যাভিচার, নৈতিক শিক্ষার অভাব, পারস্পরিক মেল বন্ধরের অভাব এবং প্রযুক্তি কারণে ঘর বিমুখীতাকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
//এস এইচ এস// এআর
আরও পড়ুন