ঢাকা, শুক্রবার   ১১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

কাউন্সিলর রাজীব গ্রেফতার, মামলার প্রস্তুতি চূড়ান্ত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৫৫, ২০ অক্টোবর ২০১৯ | আপডেট: ০৮:৫৮, ২০ অক্টোবর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরু হওয়ায় পর গা ঢাকা দেন নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব। অবশেষে গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর অভিজাত এলাকার (বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা) একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

জানা যায়, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীত পাশের ৮নং সড়কের ৪০৪ নং বাসায় অভিযান চালিয়ে কাউন্সিলর রাজীবকে গ্রেফতার করা হয়। রাতভর অভিযান শেষে র‍্যাব-১ এর প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় রাজীবকে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বন্ধুর বাসা থেকে গ্রেফতারকৃত রাজীবকে প্রথমে তার নিজ বাসভবন এবং পরবর্তীতে দাপ্তরিক কার্যালয়ে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব। গত ১৩ অক্টোবর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও ভূমি দখলের অভিযোগে রাজীবকে বেশ কিছুদিন ধরে খুঁজছিল র‌্যাব।

শনিবার রাত থেকে শুরু করে রোববার ভোররাত পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়। এসময় রাজীবের ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয়ে সাদেকুর রহমান সাদেক নামের এক ব্যক্তিকে ৩ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। এছাড়া রাজীবের বিরুদ্ধে অস্ত্র এবং মাদক আইনে দুটি পৃথক মামলা হবে বলে জানান তিনি।

অভিযানে তার কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল এবং ৩ রাউন্ড গুলি ও বিদেশি কিছু মদ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বেশ কিছু আলামত সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব নিজের এলাকায় রাজত্ব গড়ে তুলেছেন। চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজি, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ আর মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত করেছেন তার সাম্রাজ্য। ২০১৫ সালের কাউন্সিলর নির্বাচনে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। দলীয় প্রার্থী ও মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ বজলুর রহমানকে হারিয়ে নির্বাচিত হন তিনি।

মোহাম্মদপুর এলাকায় যুবলীগের রাজনীতি দিয়েই রাজীবের রাজনৈতিক জীবন শুরু। অল্পদিনেই নেতাদের সান্নিধ্যে মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদ বাগিয়ে নেন তিনি। থানা আওয়ামী লীগের বীর মুক্তিযোদ্ধা এক নেতাকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করায় বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় যুবলীগের এক নেতাকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে উল্টো তিনিই হয়ে যান ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, রোববার ভাটারা থানায় রাজীবের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে এবং মাদক আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হবে। পরবর্তী সময়ে অন্যান্য যেসব অভিযোগগুলো রয়েছে, সেসব মামলায় সমন দেখানো হবে। এই যে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন এবং এই অর্থ তিনি কোথায় খরচ করেছেন এবং যদি এখানে মানি লন্ডারিং ও মুদ্রা পাচারের কোনও বিষয় থাকে, তখন মানি লন্ডারিং মামলা দায়ের করা হবে। 

কাউন্সিলর রাজীবের বিরুদ্ধে অভিযোগ- ভুমি দখল, কাউন্সিলর হওয়ার পরপরই ২০১৬ সালে তিনটি কোম্পানি খুলেছেন সিলিকন, এক্কা, নাইমা এন্টারপ্রাইজ। এ সব প্রতিষ্ঠানের আড়ালে তিনি জমি দখল করেছেন। গুলশান ও মোহাম্মদপুরে আটটি ফ্ল্যাট রয়েছে রাজীবের। কমিশনার হওয়ার পরপরই তিনি বাহিনী দিয়ে প্রচারণায় বনে যান স্বঘোষিত ‘জনতার কমিশনার’। তবে কথিত এই ‘জনতার কমিশনার’ এর বিরুদ্ধে জনতার কাছ থেকেই মাসে কোটি টাকা চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে। বাসস্ট্যান্ড, সিএনজি স্ট্যান্ড, ফুটপাতই তার চাঁদা তোলার মূল উৎস।

র‌্যাব জানায়, রাজীবের একটি রাজকীয় বাড়ি রয়েছে। এই বাড়িটির বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকার মতো। বাড়ির প্রত্যেকটা আসবাবপত্র থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা জিনিস তিনি বাহির থেকে আমদানি করে নিয়ে এসেছেন। এটা তার জ্ঞাত আয়ের বর্হির্ভূত বলে আমাদের মনে হয়েছে। তার কিন্তু আসলে কাউন্সিলর হওয়ার আগ পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ধরনের ব্যবসা বা পেশা ছিল না। সিটি করপোরেশন থেকে যে সম্মানী পায়, সেটা তার প্রধান আয় । এছাড়া বাকিসব অবৈধ লেনদেন।

যুবলীগের সাইনবোর্ড আর কাউন্সিলরের পদ ব্যবহার করে এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, ডিশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন রাজিব। বিগত ৪ বছরে ৮-১০টির বেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়ি কিনেছেন। যার মধ্যে মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, ক্রাউন প্রাডো, ল্যান্ডক্রুজার ভি-৮, বিএমডব্লিউ স্পোর্টস কার রয়েছে।
এমএস/

 

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি