সব ধর্মের লোকদের টানতে কৌশলী ছিল পাপিয়া
প্রকাশিত : ১৫:৩৪, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০
নরসিংদীর সদ্য বহিষ্কৃত জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকে নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। রাজনীতির আড়ালে অস্ত্র, মাদক ও দেহব্যবসা করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছে তিনি। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা, রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোতে সুন্দরী তরুণী সরবরাহ, মাদক চোরাচালান, চাকরির তদবির, জবর-দখল, দেশ বিদেশে ক্যাসিনো ব্যবসা- এমন কোনো অভিযোগ নেই যা তার বিরুদ্ধে নেই।
এবার জানা গেছে তার ধর্ম নিয়ে প্রতারণা ও কৌশল সম্পর্কে। এই পাপিয়া নিয়মিত শিবলিঙ্গ ও কালী পূজা করতেন। আবার খ্রিস্টান ধর্মের প্রতীক ক্রুসও ব্যবহার করতেন। কাবা শরিফের লোগোও নিজের কাছে রাখতেন। খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীর (রহ) নামের অদ্যাক্ষর দিয়ে নিজের দেহে ট্যাটুও করিয়েছেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, অবৈধভাবে অর্থ আয়ের জন্য প্রতিটি ধর্মের লোকদের বিশ্বাস স্থাপন করতে এটা তার কৌশল। এমনটায় জানিয়েছেন র্যাব কর্মকর্তারা।
তার উত্থান প্রসঙ্গে নানা তথ্য দিয়েছেন তাদের বাল্যবন্ধু, স্বজনসহ অনেকে। জানা গেছে, নরসিংদীতেই সুমন ও পাপিয়া সংসার পাতেন। তবে একটা ঘটনার পর ঢাকায় আসেন তাঁরা। তারপর অনেককিছুই ঘটতে থাকে।
সুমন বিয়ে করেন ২০০৯ সালে। নরসিংদী শহরের ভাগদী এলাকার সাইফুল বারীর মেয়ে পাপিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ থাকার পর তাকে বিয়ে করেন সুমন। এ দম্পতি ২০১২ সালে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। সেই হামলায় পাপিয়া গুলিবিদ্ধ হন। পরে তারা ঢাকায় চলে এলে নরসিংদী থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এ সময় ঢাকাকেন্দ্রিক নেতাদের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। ২০১৪ সালে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে আলোচনায় আসেন পাপিয়া। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দুই ধারায় বিভক্ত নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম বলয়ে যোগ দেন সুমন ও পাপিয়া। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য (এমপি) নজরুল ইসলামের পক্ষে চলতে থাকে তাদের ব্যাপক সমর্থনের প্রদর্শনী। কিছুদিনের মধ্যে তারা নরসিংদীতে গড়ে তোলেন ক্যাডার বাহিনী কিউঅ্যান্ডসি। বাহিনীর প্রত্যেকের হাতে রয়েছে কিউঅ্যান্ডসির ট্যাটু। বাহিনীর সদস্যদের মোটরসাইকেল রক্ষণাবেক্ষণ ও তাদের নিয়মিত আড্ডার জন্য ‘কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন’ শীর্ষক প্রতিষ্ঠান খোলেন পাপিয়া।
তবে আগে থেকেই নরসিংদী সরকারি কলেজে পড়ার সময় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়ান সুমন। রাজনীতির পাশাপাশি শুরু হয় চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। তা ছাড়া অস্ত্র চালনার নেশা থেকে শ্যুটিং কোর্স করেন তিনি। ২০০১ সালে নরসিংদী পৌরসভার কমিশনার মানিক মিয়াকে যাত্রা প্যান্ডেলে গিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। এর মধ্যে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে একসময় তিনি নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন।
উল্লেখ্য, দেশ ছেড়ে পালানোর সময় গত শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়া-সুমন এবং তাদের দুই সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তৈয়বাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচার, জাল নোট সরবরাহ, মাদক, অস্ত্র, নারীদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করানো ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের পদ থেকে তাঁকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সংসদ। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকসংক্রান্ত আইনে তেজগাঁও থানায় এবং জাল মুদ্রা রাখার অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় পাপিয়া ও সুমনের ১৫ দিনের রিমান্ড এবং বাকি দুজনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এসএ/
আরও পড়ুন