‘কালেমা পড়ে নে, তোকে এনকাউন্টার দেয়া হবে’
প্রকাশিত : ১৮:৪০, ১৫ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১৯:৩৩, ১৫ মার্চ ২০২০
নির্যাতনে অসুস্থ সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যান
মধ্যরাতে ঘরের দরজা ভেঙে ধরে এনে জেলে ঢোকানোর আগে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে করা হয় অকথ্য নির্যাতন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে তাকে বলে হয়, ‘কালেমা পড়ে নে, কারণ একটু পরেই তোকে এনকাউন্টার (বন্দুকযুদ্ধ) দেয়া হবে।’
আজ রোববার দুপুরে (১৫ মার্চ) জামিনের মুক্তি পাওয়ার পর তখন তার ওপর চলা রোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনায় এসব কথা জানান অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন ও দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি আরিফুল।
আসলে কী ঘটেছিল শুক্রবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে? জামিনে মুক্তির পর হাসপাতালের বিছানায় কাতরাতে কাতরাতে আরিফুল জানান, ‘রাত ১টার সময় হঠাৎ দরজায় ধাক্কার শব্দ শুনতে পাই। পরিচয় জানতে চাইলেও কিছু বলা হচ্ছে না দেখে আমি ওসিকে ফোন দিই। কিন্তু ততক্ষণে দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ে আরডিসি (সহকারি কমিশনার, রাজস্ব) নাজিমুদ্দিনসহ তার দলবল। টেনে-হেঁচড়ে আমাকে মাইক্রোবাসে তোলার পর শুরু হয় অকথ্য গালিগালাজ আর কিল-ঘুষি। আমার হাত-পা আর চোখ বেঁধে ফেলা হয় তখনই।’
ভয়াবহ সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সাংবাদিক আরিফুল আরও বলেন, ‘মারতে মারতে আমাকে একটি ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। চোখ খুলে দেয়ার পর বুঝতে পারি, এটা ডিসি অফিস। সেখানে বিবস্ত্র করে আরেক দফা পেটানো হয়। এর মধ্যেই তারা বলতে থাকে, তুই আমাদেরকে অনেক জ্বালিয়েছিস, তোকে সাংবাদিকতা শেখাচ্ছি দাঁড়া। কালেমা পড়ে নে, একটু পরেই তোকে এনকাউন্টারে দেয়া হবে।’
এদিকে, এ ঘটনার জেরে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
উল্লেখ্য, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের একাধিক অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম। এসব নিয়ে তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন এই ডিসি। যার প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে আরিফুল ইসলামকে মাদকবিরোধী অভিযানের কথা বলে আটক এবং পরে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযানের সময় মাদকসহ আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে আটক করা হয় বলে দাবি করেন অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা।
তবে আরিফুল ইসলামের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার বলেন, ‘মধ্যরাতে বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে আরিফকে পিটিয়ে এবং জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনও মাদক পাওয়া যায়নি।’
এনএস/
আরও পড়ুন