সুপার ফুডঃ কাঁঠাল
প্রকাশিত : ১৮:৫৮, ১৬ জুলাই ২০২৩
অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল হচ্ছে আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল! এই কাঁঠাল কাঁচা হোক বা পাকা, সবজি বা ফল হিসেবে এর কোনো তুলনা নাই। এর বিচিও পুষ্টিকর তরকারি হিসেবে অতুলনীয়। ভিটামিন, মিনারেলস, ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এগুলোর আকর হচ্ছে এই কাঁঠাল।
কারণ কাঁচা কাঁঠাল রান্না করতে পারলে মাংসের মতোই স্বাদ এবং মাংসের চেয়ে উপকারি। অতিরিক্ত মাংস খেলে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে, অন্যদিকে কাঁচা কাঁঠালে উপকার ছাড়া কোনো ক্ষতি নাই।
এক কাপ পাকা কাঁঠালে পেয়ারার চেয়ে বেশি প্রোটিন রয়েছে। এছাড়াও কলার চেয়ে দ্বিগুণ এবং আপেল ও আমের চেয়ে চারগুণ বেশি প্রোটিন রয়েছে।
কাঁচা কাঁঠালে প্রোটিন পাকা কাঁঠালের চেয়ে দ্বিগুণ। কাঁচা কাঁঠালের এঁচোড়ে প্রোটিন পাকা কাঁঠালের চেয়ে দ্বিগুণ। আর কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে পাকা কাঁঠালের চেয়ে তিনগুণ বেশী প্রোটিন।
পাকা কাঁঠালের চেয়ে তিন গুণ বেশি প্রোটিন রয়েছে কাঁঠালের বিচিতে! আপেলের চেয়েও ১২ গুণ বেশি প্রোটিন রয়েছে কাঁঠালের বিচিতে!
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি অধিদফতরের তথ্যানুসারে, ১০০ গ্রাম কাঁঠালে ৯৫ কিলোক্যালরি এনার্জি, ১.৭২ গ্রাম প্রোটিন, ০.৬৪ গ্রাম ফ্যাট, ২৩.২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১.৫ গ্রাম ফাইবার (ডায়েটারি ফাইবার) এবং ১০.১ গ্রাম সুগার রয়েছে এবং ২৮৭ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ২৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ১৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে।
আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল শুধু স্বাধেই নয়, এটা পুষ্টি, শক্তি এবং রোগ প্রতিরোধে অনন্য। কাঁঠালের এঁচোড়, কাঁঠাল এবং কাঁঠালের বিচি মানে কাঁচা কাঠাল, পাকা কাঁঠাল এবং কাঁঠালের বিচিতে দেহের জন্যে প্রয়োজনীয় প্রায় সব ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে এবং রয়েছে বিভিন্ন অ্যান্টি আক্সিডেন্টস যা মানুষকে ভেতর থেকে প্রাণবন্ত রাখে ।
আয়ুর্বেদের সূত্র হচ্ছে, কোনো অঞ্চলের মৌসুমী রোগ-বালাইয়ের প্রতিষেধক ওই অঞ্চলের মৌসুমী ফলগুলোর মধ্যে নিহিত থাকে। আমরা যদি একটু চিন্তা করি, গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালের রোগগুলোর প্রতিষেধক কাঁঠালের মধ্যে রয়েছে।
এই সময়ে ফ্লু হয়, ভাইরাস জ্বরসহ বিভিন্ন প্রকার জ্বর হয়। তারপরে, আর কি হয়? পানিবাহিত রোগ-পেটের পীড়া হয়। এই সমস্ত পীড়ার এই সমস্ত রোগের প্রতিষেধক কাঁচা কাঠাল, পাকা কাঁঠাল, কাঁঠালের বিচি। তাই পুষ্টিবিদদের মতে, গ্রীষ্ম আসার সঙ্গে সঙ্গেই কাঁচা কাঁঠালের তরকারি খাওয়া শুরু করা দরকার।
আয়ুর্বেদ অনুযায়ী আরও জানা যায়, কাঁঠাল হচ্ছে বলকারক, রোগ প্রতিষেধক এবং ত্বক ফর্সাকারক। কাঁচা কাঁঠালে যে ফাইটো-নিউট্রেন্টস রয়েছে এটা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং কাঁচা কাঠালে যে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে এটা বার্ধ্যকের গতিকে ধীর করে মানে বুড়ো হতে দেয় না। এটা তরুণ রাখে! ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় কাঁচা কাঠাল!
রঙ একটু ফর্সা করতে চাইলে কি করতে হবে? কাঁঠাল খেতে হবে, কাঁচা কাঁঠালের সবজি। কাঁচা কাঠালে চর্বি নাই। যার ফলে, কাঁঠাল যতই খাওয়া হোক ওজন বাড়ার সুযোগ নাই।
কাঁচা কাঁঠালে পর্যাপ্ত ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে, যেটা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে; মানে অনেক্ষণ পর্যন্ত পেটে থাকে, ক্ষুধা কম লাগে।
এই কাঁঠালের বিচি পুষ্টিকর সবজি হিসেবে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যেমন যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে তেমনি কাঁচা-পাকা কাঁঠাল এবং কাঁঠালের বিচি রফতানি করে আমাদের জাতীয় কোষাগারে জমা হতে পারে শত কোটি ডলার।
ইউরোপ-আমেরিকাতে কাঁচা কাঁঠাল, পাকা কাঁঠাল, কাঁঠালের বিচির চাহিদা এখন দিন দিন বাড়ছে। আর কাঁঠাল উৎপাদনে আমরা এখন দেশ হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে। আমরা যদি বেশি করে কাঁঠাল গাছ লাগাই তবে নিঃসন্দেহে আমরা অদূর ভবিষ্যতে কাঁঠাল উৎপাদনে পৃথিবীর এক নম্বর দেশে পরিণত হবো।