ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষণা
ক্যান্সার থেকে বাঁচতে রোজ খান একমুঠো বাদাম
প্রকাশিত : ১১:১২, ৩ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১০:২৭, ২২ মার্চ ২০১৮
নিয়মিত একমুঠো করে বাদাম খাওয়া শুরু করলে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। শুধু তাই নয়, যারা ইতোমধ্যেই এই রোগে ভুগছেন, তাদের শরীরে নতুন করে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনাও কমে। ইয়েল ইউনির্ভাসিটি ক্যান্সার সেন্টারের গবেষকদের করা এক গবেষণা এমনটাই বলছে।
এই গবেষণাটি করা হয় প্রায় ৮২৬ জন কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর উপর। এতে বিশেষজ্ঞরা জানতে পেরেছেন, নিয়মিত বাদাম খাওয়া শুরু করলে দেহের ভেতরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে ক্যান্সার সেল ধ্বংস হতে থাকে। শুধু তাই নয়, শরীরে বাসা বেঁধে থাকা ছোট-বড় সব ধরনের রোগের নিকেশ ঘটার সম্ভবনাও প্রায় ৪৬ শতাংশ বেড়ে যায়। তাই তো এতদিন যে মুকুট আপেলের মাথায় ছিল, তা এখন এক প্রকার ছিনিয়ে নিয়েছে বাদাম। একাধিক খনিজ এবং ভিটামিনে পরিপূর্ণ এই খাবারটি শরীরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে এমন খেল দেখাতে শুরু করে যে একাধিক মারণ রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়। সেই সঙ্গে শরীর এমন চাঙ্গা হয়ে ওঠে যে আয়ুও বৃদ্ধি পায়।
এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক বাদাম নামক "সুপার ফুড" টি ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখার পাশাপাশি আর কী কী ভাবে আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য় করে থাকে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি দূর করে: এটি হল এমন একটি উপাদান যা ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে নানাবিধ সংক্রমণকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আরও নানা উপকারে লেগে থাকে। যেমন, অ্যাক্সিডেটিভ ট্রেস কমিয়ে কোষেদের ক্ষত রোধ করে। সেই সঙ্গে ত্বকের এবং শরীরের বয়স কমাতেও সাহায্য করে।
কোষেদের দেখভাল করে: বাদামে উপস্থিত প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন ই শরীরের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে থাকা কোষেদের কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের শরীরে যাতে কোনও ভাবে ক্ষতের সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে বয়স বাড়লেও শরীরের উপর তার কোনও প্রভাব পরে না।
ওজন কমায়: বাদাম খাওয়ার পর ক্ষিদে একেবারে কমে যায়। ফলে মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে শরীরে প্রয়োজন অতিরিক্ত ক্যালরি জমে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও কমে।
হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পানিতে ভেজানো কাজুবাদাম খেলে দেহের ভেতরে বিশেষ কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যার প্রভাবে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে গ্যাস-অম্বলের প্রকোপও কমে যায়।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে: শুধু ডায়াবেটিস নয়, বাদামে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
খারাপ কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখে: অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরলের কারণে হার্টের রোগে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পায়। তাই শরীরে যাতে কোনও ভাবেই বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এই কাজটি করতে প্রতিদিনের ডায়েটে বাদামের অন্তর্ভুক্তি ঘটান, তাহলেই দেখবেন হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ে আর চিন্তায় থাকতে হবে না।
ডায়াবেটিস রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখে: বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম রক্তে উপস্থিত শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সেই কারণেই তো ডায়াবেটিকদের নিয়মিত বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ২৫-৩৮ শতাংশ কমে যায়। তাই যাদের পরিবারে এই মারণ রোগের ইতিহাস রয়েছে, তারা সময় থাকতে বাদামকে কাজে লাগাতে শুরু করে দিন। দেখবেন উপকার মিলবে।
পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়: মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসে এদেশে ঝাঁকিয়ে বাসা এই প্রকৃতিক উপাদনটির শরীরে রয়েছে প্রায় ৩.৫ গ্রাম ফাইবার, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১৪ গ্রাম ফ্যাট সহ ভিটামিন ই, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি২, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম। এই সবকটি উপাদানই শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষ প্রয়োজনে লাগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো একাধিক ক্রনিক রোগকে দূরে রাখতেও এই উপাদানগুলি সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, এক মুঠো বাদাম খেলে শরীরে মাত্র ১৬১ ক্যালরি প্রবেশ করে। ফলে এই খাবারটি খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার কোনও ভয় থাকে না।
এবার বুঝেছেন তো কেনো আমাদের প্রতিদিন একমুঠো করে বাদাম খাওয়া উচিত?
সূত্র: বোল্ডস্কাই
একে// এআর