ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

নান্দনিক নৈসর্গিক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৪০, ২৪ মে ২০১৮ | আপডেট: ১৯:০৭, ২৪ মে ২০১৮

অফিস শেষে তড়িঘড়ি বইমেলা চত্বরে ঢুকেই নিয়াজের চোখদুটো খুঁজছিল অনন্যাকে। বাচ্চাদেরকে মায়ের কাছে রেখে দুপুরের দিকেই চলে এসেছে অনন্যা। কথা ছিল অফিস শেষে বইমেলায় ঠিক উপস্থিত হয়ে যাবে নিয়াজ। অবশেষে দেখা মিললো অনন্যার। এক মুহুর্তে চোখ মন সবকিছুর মধ্য দিয়ে শীতল একটা ভাব বয়ে গেলো। আকাশের মতো নীল একটা শাড়ি পরেছে অনন্যা। কি সুন্দর একটা মেয়ে। অনন্যাকে চোখে দেখেও শান্তি। তবে নিয়াজের জন্য আরও কিছু চমক অপেক্ষা করছিল । হুট করেই চোখ আটকে গেল অনন্যার শাড়িতে। আঁচল জুড়ে গোটা গোটা অক্ষরে কবিতা লেখা। ইদানিং এটা অনেক ট্রেন্ডি।

নিজের প্রিয় কবি জীবনানন্দ, রবি ঠাকুর কিংবা রুদ্রের কবিতা ছাপা শাড়ি পরেন অনেকেই। কিন্তু অনন্যার শাড়ির কবিতাটা তো অন্যকারো নয় স্বয়ং নিয়াজের লেখা কবিতা। কোথায় পেলো এই শাড়ি অনন্যা? মুগ্ধ নিয়াজের যেন তর সইছেনা, কোথা থেকে পেল এই শাড়ি অনন্যা? নিয়াজের মনের ভাব বুঝতে পেরে নিজে থেকেই অনন্যা জানালো ‘নৈসর্গিক’ এর কথা। অনলাইন মার্কেট প্লেস ‘নৈসর্গিক’। যারা প্রিয়জনের কবিতাটা দিয়ে দিলে বানিয়ে দিবে আপনার পছন্দমত শাড়ি, কাপড় কিংবা যেকোন কিছু।

পুরো বইমেলা জুড়ে সুন্দর একটা আবহ বিরাজ করছিল সেদিন। এমন অনেক কবি আছেন যাদের কবিতার বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের সময় সেই কবিতা পরা শাড়ি পরেই বন্দি হয়েছেন ক্যামেরায়। এভাবেই নতুনত্ব ও শিল্পের যাদুকরী ছোঁয়ায় দিকে দিকে নাম ছড়িয়ে পড়ে নৈসর্গিকের। মাত্র অল্পদিনেই ব্যতিক্রমধর্মী এই শাড়ি কাব্য প্রজেক্টের জন্য চারিদিকে বেশ নামডাক হয়ে যায় ‘নৈসর্গিকের’।

অনলাইনে এই যাত্রা শুরু করার সময়টা কিন্তু এত সহজ ছিল না। এই সুন্দর ধারণা ও শিল্পের পেছনে যার অবদান সব থেকে বেশি তিনি হলেন কাজী শবনম। নৈসর্গিক এর প্রতিষ্ঠাতা ও একজন শিল্পী। নারায়ণগঞ্জের মেয়ে, যার মাথায় সর্বপ্রথম এরকম অনন্য একটি আইডিয়া আসে। বরাবর এমন সুন্দর সুন্দর ফ্যাশন আইডিয়া নিয়ে নিজের পোশাক তৈরি করতেন। আর এভাবেই বন্ধু মহলে পরিচিতি পেতে থাকেন শবনম। এভাবেই একদিন মনে হয়, সবাই যখন সুন্দর বলছে, তাহলে শুরু করা যাক না নিজের একটা বুটিক। তাই প্রাথমিকভাবে শুরু করা হলো অনলাইনে।

শাড়িকাব্য প্রজেক্টের পর আর থেমে থাকতে হয়নি শবনমকে। সবার অনুরোধে নৈসর্গিক এর পেইজে যোগ হয়েছে নিত্যনতুন ডিজাইনের কামিজ, শাড়ি, চুড়ি, গয়না, এমনকি বিদেশি নামকরা ব্রান্ডের কসমেটিক্স ও। দেশের গন্ডি পেরিয়ে নৈসর্গিক এর পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে অন্যান্য দেশে। আর নৈসর্গিকের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো নিজের মন মতো ডিজাইন, রং দিয়েও আপনি তৈরি করে নিতে পারেন আপনার পছন্দের পোশাক। এছাড়া বাহারী সব ডিজাইনের ইউনিক গয়নাও পাচ্ছেন সুলভ মূল্যে।

নৈসর্গিক নিয়ে শবনম বলেন, “কখনো পুরোদস্তুর ব্যবসা করব তাও ক্রিয়েটিভ কিছু নিয়ে তা কখনো ভাবিনি, শাড়ি কাব্য’র ধারনা হুট করেই মাথায় এসেছিল কিন্তু কখনো কল্পনাও করিনি এতো সাড়া পাবো। বইমেলার পর আস্তে আস্তে অন্যান্য আরও অনেক শাড়ি ডিজাইন করা শুরু করলাম। বইমেলায় কবি বন্ধুদের কবিতা নিয়ে অনেক অনেক শাড়ী করলাম। মিডিয়ায়ও পরিচিতি পেলো নৈসর্গিক। এখন নৈসর্গিক একটা ব্র্যান্ডের নাম।“

নৈসর্গিককে ঘিরে আরো জানা অজানা সব কথা জানালেন শবনম। তিনি বিশ্বাস করেন একজন মানুষ স্বাবলম্বি হওয়ার পথে সৎ পথে উপার্জন করার বিকল্প নেই। আর আমাদের সমাজে একজন মেয়ে হিসেবে উদ্যোক্তা হওয়া বোধ হয় সবচেয়ে কঠিন। তাই এর আগে কখনো ভাবেননি নিজের মন মতো একটি ব্যবসা হবে কোনদিন। যেখানে নিজের মনের খোরাক মিটে। তাই এর আগে শবনম সাংবাদিকতা করেছেন, বিভিন্ন কর্পোরেট হাউজ আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এডমিন হিসেবেও দ্বায়িত্ব পালন করেছেন অনেকদিন। বেশ কিছুদিন ছিলেন দেশের বাইরেও। কিন্তু তার মন মত যেন হচ্ছিল না কোন কিছুই। দেশে ফিরে এসেই শুরু করলেন তার স্বপ্নের এই যাত্রা। মাঝে মাঝে যখন হতাশা আর দুঃখ ভর করে জীবনে তখন নৈসর্গিক বেঁচে থাকাকে প্রানবন্ত করে। নতুন শাড়ি কাপড়গুলোর গন্ধ, রং, কারখানায় বোনার সময়টা, মেশিনের শব্দ সবকিছু মিলিয়ে একটি নতুন দিনের স্বপ্ন দেখেন নৈসর্গিকের প্রতিষ্ঠাতা।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কথা বললে শবনম জানান তার মনের ইচ্ছে। “ঈদের পর আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী রিকশা পেইন্ট দিয়ে বড় পরিসরে কাজ করার ইচ্ছেও আছে। আর চোখ বন্ধ করলে ভাবি, অদূর ভবিষ্যতে সবার ভালবাসা পেলে একটি নান্দনিক শোরুম হবে নৈসর্গিকের…। এছাড়া সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য কিছু করার প্রয়াসেই নৈসর্গিকের পথচলা। এই পথচলা যেন সহজ ও সুন্দর হয় সেজন্য সবার শুভকামনা চেয়েছেন শবনম।

এভাবে একদিন ঘরে ঘরে স্বাবলম্বি মেয়েরা হাল ধরবে দেশের অর্থনীতির। এগিয়ে যাবে সবাই দৃঢ় পদক্ষেপে এই স্বপ্ন নিয়ে ছোট ছোট পায়ে পথ চলা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম নৈসর্গিকের।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি