গায়ের গন্ধ দূর করার ঘরোয়া ৪ উপায়
প্রকাশিত : ১২:৫০, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮
বেশ কিছু মানুষের শরীর থেকে এমন বদ গন্ধ বের হয় যে তাদের কাছাকাছি ঘেঁষলে লিটার লিটার বমি করতে মন চায়, আচ্ছা আপনার শরীর থেকেও কি এমন বিতকুটে গন্ধ বের হয় নাকি? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে এই প্রবন্ধে চোখ রাখতে ভুলবেন না যেন! কারণ এই লেখায় এমন কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, যেগুলোকে কাজে লাগালে অল্প দিনেই বদ গন্ধ গায়েব হতে শুরু করে। ফলে পাবলিক প্লেসে সম্মানহানীর আশঙ্কা যায় কমে। প্রসঙ্গত, যে যে ঘরোয়া টোটকাগুলো এ ক্ষেত্রে দারুন কাজে আসে, সেগুলো হল-
নারকেল তেল
শুনতে আজব লাগলেও এ কথা একেবারে ঠিক যে গায়ের বদ গন্ধ দূর করতে নারকেল তেলের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এ ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণ নারকেল তেল নিয়ে শরীররে যে যে অংশে বেশি মাত্রায় ঘাম হয়, সেখানে লাগালেই দেখবেন অল্প সময়েই ঘামের গন্ধ দূর হয়ে যাবে।
অ্যাপেল সিডার ভিনিগার
এতে উপস্থিত অ্যাসিডিক এলিমেন্ট নিমেষে গায়ের গন্ধ সৃষ্টি করা ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে, যে কারণে গায়ের গন্ধের মাত্রা কমতে সময় লাগে না। এ ক্ষেত্রে এক কাপ পানির সঙ্গে হাফ কাপ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে সারা শরীরে লাগালেই দেখবেন উপকার মিলতে শুরু করেছে।
মৌরি
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে, এই প্রাকৃতিক উপাদানটির ভেতরে উপস্থিত বেশ কিছু কার্যকরী উপাদান শরীরে প্রবেশ করে এমন খেল দেখায় যে বিশেষ কিছু গ্যাস্ট্রিক জুসের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যার প্রভাবে গায়ের গন্ধের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। এখন প্রশ্ন হল এ ক্ষেত্রে কীভাবে কাজে লাগাতে হবে মৌরিকে? পরিমাণ মতো মৌরি নিয়ে তা গুঁড়ো করে নিতে হবে প্রথমে, তারপর তা এক কাপ পানি ফেলে পানিটা ফুটিয়ে নিতে হবে। কিছু সময় পরে পানিটা ছেঁকে নিয়ে তাতে অল্প পরিমাণে মধু মিশিয়ে পান করতে হবে।
গ্রিন টি
এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ট্য়ানিক অ্যাসিড গায়ের গন্ধ দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে উপাদান দুটি শরীরের সংস্পর্শে আসা মাত্র ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে, যে কারণে বদ গন্ধের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। এ ক্ষেত্রে পরিমাণ মতো পানি গ্রিন টির পাতা ভিজিয়ে পানিটা ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর পানিটা ঠাণ্ডা করে একটি তুলের সাহায্যে তা লাগিয়ে ফেলতে হবে শরীরের সেই সব অংশে, সেখানে ঘাম বেশি হয়, তাহলেই দেখবেন কেল্লা ফতে! প্রসঙ্গত, কী কী ঘরোয়া টোটকাটিকে কাজে লাগালে গায়ের গন্ধ কমবে, তা নয় তো জানলেন। কিন্তু এ কথা জানেন কি বিশেষ কিছু খাবারের সঙ্গে গায়ের গন্ধের সরাসরি যোগ রয়েছে, তাই তো শরীর থেকে বদ গন্ধ বেরোয়, এমনটা যদি না চান, তাহলে এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলাই ভাল। যেমন ধরুন-
কার্বোহাইড্রেট বেশি রযেছে এমন খাবার
শরীরে যাতে কোনও সময় এনার্জির ঘাটতি দেখা না দেয়, সে দিকে খেয়াল রাখে কার্বোহাইড্রেট। তাই তো এই উপাদানটির ঘাটতি হলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। প্রথমেই যে ঘটনাটি ঘটে সেটি হল শরীর নিজেকে সচল রাখতে কিটোন বডি নামে এক ধরনের জ্বালানির উৎপাদন করতে শুরু করে। এই কিটোন বডি আবার একটোন নামে এক ধরনের উপাদানের জন্ম দেয়, যা বদ গন্ধের মাত্রা বৃদ্ধি করে। তাই তো গায়ের গন্ধের হাত থাকে বাঁচতে কার্বোহাইডের্ট সমৃদ্ধ খাবার খেতে কখনও ভুলবেন না।
শতমূলী
এই শাকটি খেলে শুধু গা থেকে নয়, প্রস্রাব থেকেও মারাত্মক গন্ধ বের হয়। আসলে এতে উপস্থিত মার্কেপটন নামে একটি গ্যাস, এই কুকর্মটি করে থাকে। তাই বাসে-ট্রামে অপ্রস্তুত পরিস্থিতিতে পরতে না চাইলে এই প্রকৃতিক উপাদানটিকে এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
পাঁঠার মাংস
সুস্বাদু মটন কারি খেতে তো ভাল লাগেই। কিন্তু তার পরে সেই মটন কারি শরীরে ঢুকে কত কিছু যে করে থাকে সে বিষয়ে কি কোনও জ্ঞান আছে? একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, রেড মিট খাওয়ার পর তার বেশিরভাগ অংশই একেবারে হজম হতে পারে না। ফলে যে অংশটা হজম না হয়ে পরে থাকে, সেটি ঘামের মাধ্যমে শরীরের বাইরে বেরিয়ে আসে। আর এমনটা যখন হতে থাকে তখন শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলো আরও অ্যাকটিভ হয়ে যায়। ফলে গায়ের দুর্গন্ধ আরও আমারত্মক আকার নেয়।
ঝাল মশলা দেওয়া খাবার
সুস্বাদু পদের জন্ম আদা, রসুন এবং পেঁয়াজ ছাড়া সম্ভবই নয়। কিন্তু সমস্যাটা হল খাবারে উপস্থিত এই সব মশলা এবং প্রকৃতিকগুলোতে প্রচুর মাত্রায় সালফার থাকে। আর এ কথা তো কারও আজানা নেই যে গায়ে বদ গন্ধ সৃষ্টিতে সালফারের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই তো গরমকালে একটু কম মশলা দেওয়া খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। দেখবেন তাতে ফল পাবেন একেবারে হাতে-নাতে।
অ্যালকোহল
দুলতে থাকা বরফের সঙ্গে ঠাণ্ডা অ্যালকোহল যখন আমাদের গলা দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে, তখনই তা অ্যাসিটিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়ে ত্বকের ছিদ্রগুলো দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে, যা দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারি ব্যাকটেরিয়াদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে। তাই আপনি যদি ঘামের গন্ধের কারণে লজ্জায় ভোগেন, তাহলে এই ধরনের পানীয়ের থেকে দুরত্ব বজায় রাখাটাই ভাল।
মাছ
শরীর সুস্থ রাখতে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের কোনও বিরল্প হয় না বললেই চলে। আর এই উপাদানটি প্রচুর মাত্রায় থাকে মাছে। তাই তো সুস্থ জীবন পেতে মাছ খাওয়াটা জরুরি। কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়। মাছে কোলিন নামে একটি উপাদানও থাকে, যা গায়ের গন্ধকে বাড়িয়ে দেয়। আসলে অনেকেই মাছ খাওয়ার পর তা ভাল করে হজম করতে পারেন না। ফলে কোলিন নামক উপাদানটি এতটাই সক্রিয় হয়ে যায় যে ঘামের সঙ্গে ট্রিমেথিলেমিন নামে একটি উপাদান বেরতে শুরু করে, যা গন্ধের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
বাঁধাকোপি
আপনার গায়ে কি খুব গন্ধ হয়? তাহলে ব্রকলি, বাঁধাকোপি, ব্রাসেল স্প্রাউট এবং কর্নফ্লাওয়ার খাওয়া একেবারেই চলবে না। প্রসঙ্গত, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ এই সবজিগুলো শরীরকে চাঙ্গা রাখতে দারুন উপকারে লাগে ঠিকই, কিন্তু এতে উপস্থিত সালফার গায়ে মারাত্মক গন্ধ সৃষ্টি করে। তাই তো যাদের গায়ে খুব বদ গন্ধ হয়, তাদের এই সবজিগুলো খেতে মানা করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: বোল্ডস্কাই
একে//